বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিশ্ব অহিংস দিবস আজ: বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় মহাত্মা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধু

  •    
  • ২ অক্টোবর, ২০২১ ১৪:৪৪

বাংলাদেশ স্বাধীন করার জন্য বঙ্গবন্ধু প্রকাশ্যে পাকিস্তানের রাষ্ট্র কাঠামোর ভেতর নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি করেছেন। গান্ধী, মার্টিন লুথার ও ম্যান্ডেলার মতো অহিংসবাদী নেতারা যেভাবে বার বার কারাবরণ করেছেন বঙ্গবন্ধুর ক্ষেত্রেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। তিনি পাকিস্তানের কাঠামোর ভেতর ছয় দফার মাধ্যমে স্বাধিকার ও স্বায়ত্বশাসনের ধারণা জনপ্রিয় করেছেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন।

অবিভক্ত ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা, অহিংস-অসহযোগ আন্দোলনের জনক, ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিন ২ অক্টোবরকে ২০০৭ সালে জাতিসংঘ ঘোষণা করেছে ‘আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস’ হিসেবে। মহাত্মা গান্ধীর শান্তিপূর্ণ অসহযোগ আন্দোলন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং শান্তি ও মানবতার আন্দোলনের নেতৃবৃন্দকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছে।

বাংলাদেশে বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদানের প্রাক্কালে মহাত্মা গান্ধীর অহিংস-অসহযোগ আন্দোলনকে নতুন মাত্রা ও ব্যাপ্তি প্রদান করেছিলেন, যা বাংলাদেশে পাকিস্তানের ২৪ বছরের ঔপনিবেশিক শাসনযন্ত্র সম্পূর্ণ অচল করে দিয়েছিল। দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই মহান নেতা বিশ্বে শান্তি ও মানবতার বার্তা প্রচারে অসামান্য অবদান রেখেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে মানুষের সমান অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের অবিস্মরণীয় নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মুক্তিসংগ্রামের প্রধান নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা তাদের আন্দোলন ও সংগ্রামে গান্ধীর আদর্শিক প্রেরণার কথা অকুণ্ঠচিত্তে স্বীকার করেছেন। নিজের জীবন ও দর্শন সম্পর্কে গান্ধী কম লেখেননি। তার সম্পর্কে এর শতগুণ লিখেছেন ভারত এবং পশ্চিমের লেখকরা। সোয়া শ’ কোটি ভারতীয়র মহান নেতা হিসেবে বিশ্বব্যাপী গান্ধী সম্পর্কে যা লেখা হয়েছে বাংলাদেশের ১৭ কোটি বাঙালির নেতা এবং এশিয়ার প্রথম জাতিরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে দেশের বাইরে ততটা লেখা হয়নি বটে, তবে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাকামী বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে তিনি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের শিরোনামে ছিলেন।

গান্ধী তার প্রথম জীবনের ২০ বছর কাটিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকায়, যেখানে তিনি আইন পেশার পাশাপাশি ব্রিটিশ শোষণ-শাসনের বিরুদ্ধে ভারতীয় ও কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার ও মর্যাদার জন্য আন্দোলন করেছেন। তার অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের ধারণা ও প্রয়োগের সূচনা হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। ১৯১৩ সালে স্বদেশে ফিরে গান্ধী যখন ভারতের জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দেন তখন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম দুই ধারায় বিভক্ত ছিল।

বাল গঙ্গাধর তিলকের নেতৃত্বে কংগ্রেসে এবং কংগ্রেসের বাইরেও সশস্ত্র সংগ্রামে বিশ্বাসী চরমপন্থি ধারা ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী। গান্ধী চরমপন্থায় বিশ্বাস করতেন না। হিন্দুত্ববাদী জাতীয়তাবাদেও বিশ্বাস করতেন না। তিনি সব ধর্মের সমন্বয়ে ভারতীয় জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করতেন। ভারতবর্ষের সব ধর্মের অনুসারী, বিশেষভাবে দুই প্রধান ধর্মের অনুসারী হিন্দু ও মুসলমানদের ঐক্যের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন গান্ধী। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করবার জন্য তিনি বার বার অনশন করে মানুষের শ্রেয়োচেতনা জাগ্রত করতে চেয়েছেন। আন্তধর্মীয় সম্প্রীতির জন্য তিনি সর্বধর্মীয় প্রার্থনার প্রচলন করেছিলেন ভারতবর্ষে।

গান্ধী তার জীবনকে সত্য অনুসন্ধানের বৃহৎ উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি নিজের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এবং নিজের উপর নিরীক্ষা চালিয়ে তা অর্জন করেছিলেন। তিনি তার আত্মজীবনীর নাম দিয়েছিলেন ‘দি স্টোরি অফ মাই এক্সপেরিমেন্টস উইথ ট্রুথ’, যার বাংলা অর্থ ‘সত্যকে নিয়ে আমার নিরীক্ষার গল্প’।

গান্ধী বলেন, তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ ছিল নিজের ভেতরকার অন্ধকার, ভয় ও নিরাপত্তাহীনতাকে কাটিয়ে ওঠা। রাষ্ট্র পরিচালনায় গান্ধী ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী হলেও ব্যক্তিজীবনে তিনি ধর্ম পালন করতেন এবং ধর্মের মানবিক ধারার প্রচারক ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন সব ধর্মই ঈশ্বরের সৃষ্টি এবং ধর্মের সারকথা- মানবপ্রেম।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের সূচনা মুসলিম লীগ থেকে হলেও ব্যক্তিজীবনে তিনি অসাম্প্রদায়িক ছিলেন। গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকে ছাত্রজীবনে তিনি পাকিস্তান আন্দোলনের পক্ষে থাকলেও জিন্নাহর ধর্মীয় দ্বিজাতি-তত্ত্বের অসারতা ও প্রতারণা তিনি এই সাম্প্রদায়িক কৃত্রিম রাষ্ট্র সৃষ্টির এক বছরের ভেতরই উপলব্ধি করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এবং তার সম্পর্কে পাকিস্তানি গোয়েন্দা প্রতিবেদন থেকেও আমরা জেনেছি তার অসাম্প্রদায়িক মানবতাবাদী চরিত্র সম্পর্কে।

বাংলাদেশ স্বাধীন করার জন্য বঙ্গবন্ধু প্রকাশ্যে পাকিস্তানের রাষ্ট্র কাঠামোর ভেতর নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি করেছেন। গান্ধী, মার্টিন লুথার ও ম্যান্ডেলার মতো অহিংসবাদী নেতারা যেভাবে বার বার কারাবরণ করেছেন বঙ্গবন্ধুর ক্ষেত্রেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। তিনি পাকিস্তানের কাঠামোর ভেতর ছয় দফার মাধ্যমে স্বাধিকার ও স্বায়ত্বশাসনের ধারণা জনপ্রিয় করেছেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন।

অপরদিকে গোপনে তিনি সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন। সশস্ত্র সংগ্রামের প্রেরণা তিনি পেয়েছেন সূর্য সেন, ক্ষুদিরাম, প্রীতিলতা, বাঘা যতীন এবং সর্বোপরি নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর কাছ থেকে। নেতাজীর প্রতি বঙ্গবন্ধুর অনুরাগের কথা তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে রয়েছে। বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য বঙ্গবন্ধু যে নীতি ও কৌশল অবলম্বন করেছিলেন সেখানে তার পূর্বসূরি দুই নেতা গান্ধী ও সুভাষ বসুর মিলিত প্রভাব ছিল বটে, তবে তিনি এই দুই নেতার শান্তি ও সংগ্রামের রণনীতি নিজের মতো গ্রহণ করেছিলেন।

বিশ্বশান্তির প্রতি বঙ্গবন্ধুর দায়বদ্ধতার পরিচয় তার আত্মজীবনীতেই পাওয়া যাবে। ১৯৫৪ সালে চীনের রাজধানী বেইজিং (তৎকালীন নাম পিকিং)-এ আয়োজিত বিশ্বশান্তি সম্মেলনে পাকিস্তানের প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে যুবক মুজিব চীনে গিয়েছিলেন। এ বিষয়ে তিনি অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন-

“শান্তি সম্মেলন শুরু হল। তিনশত আটাত্তর জন সদস্য সাঁইত্রিশটা দেশ থেকে যোগদান করেছে। সাঁইত্রিশটা দেশের পতাকা উড়ছে। শান্তির কপোত এঁকে সমস্ত হলটা সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছে। প্রত্যেক টেবিলে হেডফোন আছে। আমরা পাকিস্তানের প্রতিনিধিরা একপাশে বসেছি।... প্রত্যেক দেশের প্রতিনিধি দলের নেতারা বক্তৃতা করলেন এবং সকলের এক কথা, ‘শান্তি চাই, যুদ্ধ চাই না’। বিভিন্ন ধর্মের লোকেরাও যোগদান করেছিল আলাদা আলাদাভাবে শোভাযাত্রা করে। চীনে কনফুসিয়ান ধর্মের লোকেরা সংখ্যায় বেশি। তারপর বৌদ্ধ, মুসলমানের সংখ্যাও কম না, কিছু খ্রিস্টানও আছে। একটা মসজিদে গিয়েছিলাম, তারা বললেন, ধর্মকর্মে বাধা দেয় না এবং সাহায্যও করে না।...

‘চীন সরকার নিজেকে ‘কমিউনিস্ট সরকার’ বলে ঘোষণা করে নাই, তারা তাদের সরকারকে ‘নতুন গণতন্ত্রের কোয়ালিশন সরকার’ বলে থাকে। কমিউনিস্ট ছাড়াও অন্য মতাবলম্বী লোকও সরকারের মধ্যে আছে। যদিও আমার মনে হল কমিউনিস্টরা নিয়ন্ত্রণ করছে সকল কিছুই। আমি নিজে কমিউনিস্ট নই। তবে সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করি এবং পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে বিশ্বাস করি না। একে আমি শোষণের যন্ত্র হিসাবে মনে করি।

এই পুঁজিপতি সৃষ্টির অর্থনীতি যতদিন দুনিয়ায় থাকবে ততদিন দুনিয়ার মানুষের উপর থেকে শোষণ বন্ধ হতে পারে না। পুঁজিপতিরা নিজেদের স্বার্থে বিশ্বযুদ্ধ লাগাতে বদ্ধপরিকর। নতুন স্বাধীনতাপ্রাপ্ত জনগণের কর্তব্য বিশ্বশান্তির জন্য সংঘবদ্ধভাবে চেষ্টা করা। যুগ যুগ ধরে পরাধীনতার শৃঙ্খলে যারা আবদ্ধ ছিল, সাম্রাজ্যবাদী শক্তি যাদের সর্বস্ব লুট করেছে- তাদের প্রয়োজন নিজের দেশকে গড়া ও জনগণের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক মুক্তির দিকে সর্বশক্তি নিয়োগ করা। বিশ্বশান্তির জন্য জনমত সৃষ্টি করা তাই প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।”

১৯৫৪ সালে বিশ্বশান্তি সম্মেলন উপলক্ষে চীন সফরে গিয়ে বঙ্গবন্ধু মাও সেতুঙের নেতৃত্বে নয়াচীনের সাফল্য ও অগ্রযাত্রায় মুগ্ধ হয়েছেন। আবার ’৬৬ সালে পাকিস্তানের সামরিক সরকারকে চীনের সমর্থনের কঠোর সমালোচনা করেছেন তিনি। তার ‘কারাগারের রোজনামচা’য় এ বিষয়ে নিজের পর্যবেক্ষণ প্রণিধানযোগ্য-

“চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই রাওয়ালপিন্ডি গিয়েছেন আইয়ুব সাহেবের সাথে নতুন পরিস্থিতি সম্বন্ধে আলোচনা করার জন্য। আপনাকে আমরাও স্বাগতম জানাই। চীনের সাথে বন্ধুত্ব আমরাও কামনা করি। তবে দয়া করে সার্টিফিকেট দিবেন না। আগে আপনি ও আপনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বড় বড় সার্টিফিকেট দিয়ে গিয়াছেন। লাভ হবে না। আপনারা জনগণের মুক্তিতে বিশ্বাস করেন, আর যে সরকার জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়েছে তাদের সার্টিফিকেট দেওয়া আপনাদের উচিত না।...

আপনারা সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করেন আর আমার দেশে চলেছে ধনতন্ত্রবাদ, আর ধনতন্ত্রবাদের মুখপাত্রকে আপনারা দিতেছেন সার্টিফিকেট। আপনারা আমেরিকান সরকারের মতো নীতি বহির্ভূত কাজকে প্রশ্রয় দিতেছেন। দুনিয়ার শোষিত জনসাধারণ আপনাদের কাছ থেকে অনেক কিছু আশা করেছিলেন। যেমন আমেরিকানরা নিজের দেশে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন, আর অন্যের দেশে নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য গণতন্ত্রকে হত্যা করে ডিক্টেটর বসাইয়া দেয়।”

চীনের সমাজতন্ত্র সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর মোহভঙ্গ হয়েছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ আরম্ভ হওয়ার পাঁচ বছর আগে। ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে চীন সমাজতন্ত্র ও বিশ্বশান্তির প্রতি দায়বদ্ধ থাকার অঙ্গীকার জলাঞ্জলি দিয়ে পাকিস্তানি সামরিক জান্তাকে মদদ দিয়েছে বাংলাদেশে নৃশংসতম গণহত্যা সংঘটনে।

মহাত্মা গান্ধী বিশ্বের অশান্তি দূর করার জন্য আত্মশুদ্ধির ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। সাম্রাজ্যবাদ বা ‘পুঁজিবাদের শোষণ-পীড়ন সম্পর্কে তিনি কখনও সোচ্চার ছিলেন না, যতটা ছিলেন ঔপনিবেশিক শৃঙ্খল থেকে শান্তিপূর্ণভাবে মুক্তির বিষয়ে। ১৯৫৪ সালে বঙ্গবন্ধু লিখছেন পুঁজিপতিরা নিজেদের স্বার্থে বিশ্বযুদ্ধ লাগাতে বদ্ধপরিকর। নতুন স্বাধীনতাপ্রাপ্ত জনগণের কর্তব্য বিশ্বশান্তির জন্য সংঘবদ্ধভাবে চেষ্টা করা।”

নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণভাবে স্বাধীনতার সংগ্রাম সফল না হলে সশস্ত্র সংগ্রামের পথ অবলম্বন করতে হবে- এই বোধ নেতাজী সুভাষ বসুর ছিল, বঙ্গবন্ধুর ছিল। তবে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার বোধ শুধু ঔপনিবেশিকতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তি নয়, তা ছিল জনগণের সার্বিক মুক্তির অন্তর্গত। এ কারণে বঙ্গবন্ধু তার ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে সার্বিক মুক্তির সংগ্রাম যোগ করেছিলেন, যে মুক্তির নিদান স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে রেখেছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর কাছে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা শুধু রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্য নয়- তা ছিল বিশ্বশান্তির পূর্বশর্ত।

মহাত্মা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধু দুজনই ধর্ম-বর্ণ, জাতি-ভাষা, অঞ্চল নির্বিশেষে সব মানুষের কল্যাণের জন্য বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখনও ধর্মের নামে কিংবা কোনো মতবাদের নামে ভিন্নমত, ভিন্নধর্ম ও ভিন্ন জীবনধারায় বিশ্বাসী মানুষদের নির্যাতন করা হচ্ছে, হত্যা করা হচ্ছে, যার সাম্প্রতিক উদাহরণ হচ্ছে আফগানিস্তান। সভ্যতার উষালগ্ন থেকে আমরা লক্ষ করছি পৃথিবীতে যত বিরোধ, সংঘাত ও যুদ্ধ হয়েছে তার প্রধান কারণ ধর্ম, জাতিগত বা গোত্রগত আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা। সভ্যতার ধারাবাহিকতায় বহু মহাপুরুষ মানবপ্রজাতিকে হিংসা, সংঘাত ও বৈষম্য থেকে মুক্ত করার জন্য বিভিন্নভাবে অবদান রেখেছেন।

মহাত্মা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধুর সভ্যতার সেই ধারাবাহিকতার অন্তর্গত। ধর্মান্ধ, সাম্প্রদায়িক মানবতার শত্রুরা যারা ধর্মের নামে রাজনীতি করে এবং যাবতীয় অপরাধকে বৈধতা দেয় তারা দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই মহান নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। তারা ভেবেছিল ব্যক্তি গান্ধী বা মুজিবকে হত্যা করলে তাদের মানবপ্রেমের দর্শনের আলো নিভে যাবে, সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ ও ধর্মান্ধতা জয়ী হবে। কিছু সময়ের জন্য অন্ধকারের অপশক্তি কিছু অঞ্চলে তাদের আধিপত্য বিস্তার করতে পারে বটে, তবে অন্তিমে সত্য ও মানবতারই জয় হয়। ইতিহাসের এই সত্যই মানব সভ্যতার চালিকাশক্তি।

বঙ্গবন্ধুর শোষণ-পীড়নমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্রকে বিবেচনা করেছেন বিশ্বশান্তির পূর্বশর্ত হিসেবে। মহাত্মা গান্ধী ধর্মবিশ্বাস, আত্মশুদ্ধি এবং পরমতসহিষ্ণুতার ভেতর বিশ্বশান্তির নিদান খুঁজেছেন। পথ ভিন্ন হলেও তারা দুজনেই বিশ্বশান্তির আন্দোলনে সব সময় আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবেন।

লেখক: সভাপতি, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক, প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা।

এ বিভাগের আরো খবর