বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শেখ হাসিনা: জননেত্রী থেকে বিশ্বনেত্রী

  • মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ   
  • ১ অক্টোবর, ২০২১ ১৩:৫২

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল রাষ্ট্রনায়ক। তার হাত ধরে এ দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি এবং উন্নয়ন পৌঁছে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের অনেক প্রভাবশালী রাজনীতিবিদও এগুলো স্পর্শ করতে পারেননি। এ অর্জন অনন্য ও অতুলনীয়।

বাঙালির আশা আকাঙ্ক্ষার একান্ত বিশ্বস্ত ঠিকানা, বাঙালির বিশ্বজয়ের স্বপ্ন সারথি, রাজনীতির উজ্জ্বলতম প্রভা, বিশ্ব পরিমণ্ডলে অনগ্রসর দেশ, জাতি, জনগোষ্ঠীর মুখপাত্র হয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে পিতার মতো বলিষ্ঠ কণ্ঠে বাংলায় ভাষণ দিয়ে বিশ্বনন্দিত নেতা হিসেবে আজ দেশে ফিরছেন জননেত্রী থেকে বিশ্বনেত্রী শেখ হাসিনা। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য জ্যেষ্ঠ কন্যা স্বাধীন বাংলাদেশে পিতার মতোই সবচেয়ে সফল রাষ্ট্রনায়ক।

দেশরত্ন শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন গত ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ পালিত হয়েছে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়। গোপালগঞ্জের মধুমতিবিধৌত ছায়া সুনিবিড় টুঙ্গিপাড়ায় ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন আজকের সবচেয়ে সফল ও ভিশনারি নেতা শেখ হাসিনা। জন্মের পর তিনি দেখেছেন হিমালয়সম পিতার সংগ্রামী জীবন। তখন কে জানত এই সংগ্রামই তার সঙ্গী হবে জীবনজুড়ে।

পিতা-মাতা স্বজনহারানোর সীমাহীন বেদনার মাঝেও তিনি অসীম সাহস ও প্রত্যয় নিয়ে লড়াই করেছেন। তিনি বাংলার জনগণের মাঝেই খুঁজে নিয়েছেন স্বজনদের, দেশের মানুষের জন্য সঁপে দিয়েছেন জীবনের সবটুকু সময়, তিনি অবিরাম ছুটে চলেছেন জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে। তার সুদৃঢ় নেতৃত্বে দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে অদম্য অগ্রযাত্রায় সততা, নিষ্ঠা, দেশপ্রেম, ভিশনারি নেতৃত্বে। মানবিক গুণসম্পন্ন এই মানুষটি জনতার নেত্রী, আমাদের নেত্রী, বঙ্গবন্ধুকন্যা, বিশ্বনেত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল রাষ্ট্রনায়ক। তার হাত ধরে এ দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি এবং উন্নয়ন পৌঁছে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের অনেক প্রভাবশালী রাজনীতিবিদও এগুলো স্পর্শ করতে পারেননি। এ অর্জন অনন্য ও অতুলনীয়।

তিনি টানা ৪০ বছর দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের সভাপতি।

১৭ বছরের বেশি সময় চতুর্থবারের মতো সরকার পরিচালনা করছেন।

৭৫ পরবর্তী সময়ে বিপন্ন গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করে দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ইতিহাসের সঠিক ধারায় এনে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন।

৩১টি বেশি আন্তর্জাতিক পদক ও স্বীকৃতি লাভ করেছেন এবং চল্লিশটির অধিক বই লিখেছেন।

বিস্ময়কর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুসহ অবকাঠামো উন্নয়নে এক নবজাগরণ ঘটিয়েছেন।

১২ বছর আগের মাথাপিছু আয়কে চার গুণ বাড়িয়ে ২২২৭ ডলারে উন্নীত করেছেন। দেশের রিজার্ভকে সর্বকালের রেকর্ডে উন্নত করে ৪৮.৫ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে গেছেন।

HDI-সহ সব INDEX এ বাংলাদেশকে বিশ্বের উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে গেছেন।

৫৭তম দেশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের সফল উৎক্ষেপণসহ বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি চলছে।

সমুদ্রবিজয় (BLUE ECONOMY), দীর্ঘদিনের ছিটমহল সমস্যার সমাধান, পার্বত্য শান্তিচুক্তি, পারমাণবিক বিদ্যুৎযুগে প্রবেশ, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ, ICT ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নয়নসহ সফলভাবে করোনা মোকাবিলা করে বিশ্বের বিস্ময় হিসেবে পরিগণিত হয়েছেন।

খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতাসহ বৃহত্তর কৃষির সব সেক্টরে এসেছে এক অভাবনীয় সাফল্য।

তিনি লাখ লাখ গৃহহীন মানুষকে গৃহ দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফলতার পিছনে রয়েছে বেদনাবিধুর ইতিহাস, দুঃখ কষ্টের দীর্ঘ সংগ্রামের সাহসী জীবন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ হত্যার পর ১৯৭১ সালের ১৭ মে স্বৈরাচারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে, জীবনকে তুচ্ছ করে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় দেশে ফিরেছেন। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামে জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দেশের গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ছুটে গিয়েছেন।

অবশেষে ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলসহ দেশে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠাসহ যুগান্তকারী পরিবর্তন আনেন। এরপর ২০০১ সালের প্রহসনের নির্বাচন ছাড়া চতুর্থবারের মতো উন্নয়নের অদম্য অগ্রযাত্রায় দেশ পরিচালনা করছেন।

বৈশ্বিক করোনা মহামারির মধ্যেও তিনি জীবন ও জীবিকার মধ্যে একটি সংমিশ্রণ করে জিডিপি গ্রোথ, রপ্তানিসহ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে যে ভূমিকা রেখেছেন সমগ্র বিশ্ব আজ বিস্ময়ে দেখছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণ, স্যানিটেশনসহ সব ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন আজ দৃশ্যমান। যার স্বীকৃতি দিয়ে চলছে বিশ্ব সম্প্রদায়ও। SDG বাস্তবায়ন অ্যাওয়ার্ডসহ তার অর্জনে যুক্ত হচ্ছে নতুন রেকর্ড। বাংলাদেশ পৌঁছে যাচ্ছে এক সমৃদ্ধ মানবিক বাংলাদেশ হিসেবে অনন্য উচ্চতায়। তাইতো তিনি আজ জননেত্রী থেকে বিশ্বনেত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনন-মেধা, সততা-নিষ্ঠা, প্রখর দক্ষতা এবং সৃজনশীল উদারমুক্ত গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। তার সফল ও ভিশনারি নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ স্বপ্ন দেখছে ২০৪১ সালের আগেই একটি উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হওয়ার।

তিনি নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন এদেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে, জঙ্গিমুক্ত সন্ত্রাসমুক্ত, মানবিক ও প্রযুক্তিনির্ভর প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক উন্নত বাংলাদেশ গড়ার কাজে। তিনি জাতির পিতার অসমাপ্ত সেই কাজ সোনার বাংলা বিনির্মাণে আত্মনিয়োগ করেছেন। তার এই মহান উদ্যোগে প্রতিটি কৃতজ্ঞ বাঙালির উচিত যার যার অবস্থান থেকে সততা, নিষ্ঠা ও একান্তভাবে সহযোগিতার মাধ্যমে তার হাতকে শক্তিশালী করা।

শুধু করোনা মোকাবিলা নয়, রোহিঙ্গা সংকটের মতো মানবিক সংকট মোকাবিলায় তিনি মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। সব কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে একদিকে যেমন প্রতিবেশী রাষ্ট্রসহ সব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছেন তেমনি দেশের স্বার্থ রক্ষায় বিশ্বসভায় জোরালো বক্তব্য তুলে ধরেছেন। নিয়েছেন কৌশলী পদক্ষেপ।

ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক যেমন উন্নীত হয়েছে অনন্য উচ্চতায়, তেমনি চীন, জাপান, রাশিয়াসহ উন্নত দেশগুলোও আজ আমাদের উন্নয়ন সহযোগী। প্রধানমন্ত্রী একদিকে যেমন এক অনন্য উচ্চতায় রাজনৈতিক নেতা, তেমনি একজন সৎ ও দক্ষ প্রশাসক। তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন দেশকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে হলে দেশকে জানতে হবে এবং সব বিষয়ই তথ্যসমৃদ্ধ হতে হবে।

আমার নিজের প্রশাসনিক কর্মক্ষেত্রে দেখেছি একনেক সভা, প্রকল্প পর্যালোচনা সভা এবং আইন প্রণয়নের সংশোধনের নীতিগত অনুমোদনসহ সব ক্ষেত্রে তিনি সবার চেয়ে বেশি তথ্যসমৃদ্ধ থাকেন। জনস্বার্থকে অগ্রাধিকার বিবেচনায় নিয়ে তিনি তার অভিজ্ঞতা ও তথ্যের আলোকে সিদ্ধান্ত প্রদান করেন। সচিব বা কারো কথা শুনে তিনি অন্য সরকারপ্রধানদের মতো সিদ্ধান্ত প্রদান করেন না। এক্ষেত্রে তিনি অনন্য।

জাতি আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ মাহেন্দ্রক্ষণ পালন করছে। একটি হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং অপরটি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। আমরা সৌভাগ্যবান এ তিনটি উৎসব পালিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। তবে স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও আমরা উৎকণ্ঠিত হই স্বাধীনতাবিরোধীদের আস্ফালন দেখেন, এ অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তনে তাদের উৎফুল্ল হতে দেখে এবং জামায়াত-বিএনপির অপপ্রচার দেখে। তাই আজ স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির নিজেদের পরিশুদ্ধ এবং ঐক্য অত্যন্ত জরুরি। ক্ষুদ্র স্বার্থ ও সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে এসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শেখ হাসিনার সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বের ছায়াতলে ইস্পাতকঠিন দৃঢ় মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে সবাইকে।

বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রকৃত অর্থে বাঙালির একমাত্র স্বাধীন রাষ্ট্রপতি। তিনি আমাদেরকে একটি রাষ্ট্র, লাল-সবুজের পতাকা এবং সংবিধান দিয়ে গেছেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরে তিনি উন্নয়নের সব পাটাতন (ফাউন্ডেশন) করে গড়ে দিয়ে গিয়েছেন। বিশ্বের মেহনতি মানুষের এই মহান নেতাকে আমরা হারিয়েছি স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি এবং দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের নির্মমতায়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর বার বার আঘাত এসেছে। সৃষ্টিকর্তার অসীম রহমতে, নেতাকর্মী ও জনগণের প্রচেষ্টায়, তিনি অবিরাম নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন দুরন্ত দুর্বার গতিতে। তিনি আজ ১৭ কোটি মানুষের ভরসার স্থল, আস্থার প্রতীক। তিনি জনগণের আস্থা ও ভালোবাসা নিয়ে পরম মমতায় সততা ও দক্ষতা নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন- এদেশের মানুষের কল্যাণের জন্য, উন্নয়নের জন্য।

১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘের ২৯তম সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশসহ বিশ্বের মেহনতি মানুষের পক্ষে বাংলায় ভাষণ দিয়ে বিশ্ববাসীর নেতা হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা পিতার মতোই জাতিসংঘের ৭৬তম সাধারণ পরিষদে বাংলায় ভাষণ দিয়ে বর্তমান বিশ্বের সমসাময়িক বিষয় ভ্যাকসিন সহজলভ্যতা, খাদ্যনিরাপত্তা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব নিরসনসহ অন্যান্য বিষয়ে তার প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন। তিনি SUSTAINABLE DEVELOPMENT SOLUTION NETWORK(SDNS) কর্তৃক এসডিজি বাস্তবায়নে জাতিসংঘ পুরস্কার লাভ করেছেন এবং অভিহিত হয়েছেন ক্রাউন জুয়েল (মুকুটমণি) হিসেবে। তিনি এবারে টেকনিক্যাল এডুকেশনের ক্ষেত্রে সফলতার জন্য ইউনেসকো পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন। তিনি এসব সম্মাননা এদেশের জনগণের জন্য উৎসর্গ করেছেন, আর অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন বাংলাদেশকে। তাইতো তিনি আজ জননেত্রী থেকে বিশ্বনেত্রী হয়ে দেশে ফিরছেন। এই মহান নেত্রীকে জানাই শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা।

লেখক: সাবেক তথ্য ও সংস্কৃতি সচিব

এ বিভাগের আরো খবর