বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিশ্বমঞ্চে বঙ্গবন্ধুর বাংলায় ঐতিহাসিক ভাষণ

  •    
  • ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৩:২৩

বঙ্গবন্ধু একইসঙ্গে জাতিগত বৈষম্য, শোষণ, বঞ্চনা এবং বর্ণবাদের শিকার মানুষের প্রতি তার এবং বাংলাদেশের সমর্থনের কথা ব্যক্ত করেন। পৃথিবীর মুক্তি সংগ্রামের কথা উল্লেখ বলতে গিয়ে তিনি প্যালেস্টাইনের জনগণের জাতীয় অধিকারের প্রতি তার সমর্থনের কথা উল্লেখ করেন। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গেই বলেন উপনিবেশিকবাদের অবসান ব্যতীত বিশ্বে মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রাধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে না।

১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের সরকারপ্রধান হিসেবে জাতিসংঘে ভাষণ প্রদান করেন। ভাষণটি ছিল বাংলা ভাষায়। ওই মঞ্চে এই প্রথম বাংলায় কোনো ভাষণ পাঠ করা হয়। এর ফলে বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিক সর্বোচ্চ মঞ্চে মর্যাদার সঙ্গে উপস্থাপিত হয়। ভাষণটি অন্যান্য রাষ্ট্রের সরকারপ্রধানদের মতো একটি গতানুগতিক ভাষণ ছিল না। এটি ছিল একটি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী স্বাধীনতার মহান নেতার কণ্ঠে উচ্চারিত ভাষণ। একই সঙ্গে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশেরও অবস্থান নির্ণয় করার ভাষণ।

ভাষণটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু বাংলাদেশের কথা বলেননি। বলেছেন আমাদের স্বাধীনতার কথা, আমাদের মুক্তিযুদ্ধে জাতিসংঘভুক্ত রাষ্ট্র, সরকার ও জনগণের সমর্থনেরও কথা। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতাও এই ভাষণে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে সারা বিশ্বের নিপীড়িত নির্যাতিত মানুষের জন্য বিশ্বের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও রাষ্ট্রসমূহের করণীয় সম্পর্কেও এমন কিছু বক্তব্য প্রদান করেছেন যা একজন বিশ্ব রাজনীতি, অর্থনীতি, শান্তি ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার অপরিহার্যতা সম্পর্কে গভীরভাবে যিনি উপলব্ধি করতে পারেন, তেমন একজন নেতার কণ্ঠে ইতিহাসের কিছু মূল্যবান বক্তব্য উচ্চারিত হয়েছে যা আজও সারা বিশ্বের জন্য গুরত্ব বহন করছে।

এখনও যখন বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণটি কেউ পড়েন তখন তার কাছে মনে হবেই যে ভাষণের প্রতিটি প্যারাই আজকের বিশ্বের জন্য সমানভাবে তাৎপর্য বহন করে। সেকারণেই এটি একটি ঐতিহাসিক ভাষণ। যে ভাষণটি কোনো বৃহৎ রাষ্ট্রের নেতা নয় বরং সদ্য স্বাধীন, যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীনতাপ্রাপ্ত রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা ও সরকার প্রধানের জাতিসংঘের মঞ্চে প্রথম প্রদত্ত ভাষণ। ভাষণটি এখন শুধু বাংলাদেশের জন্যই নয়, সারা বিশ্বের জন্য একটি গুরত্বপূর্ণ দলিল হয়ে আছে। একারণেই প্রতি বছর ২৫ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধুর দেয়া ভাষণটির কথা আমাদের বার বার স্মরণ করতে হচ্ছে, পড়তে হচ্ছে এবং বুঝতে হচ্ছে। আমরা বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণটির মাধ্যমে তখন কোন উচ্চতায় নিজেদেরকে নিয়ে যেতে পেরেছিলাম। সেই উচ্চতাটি আর কি কখনও আমরা স্পর্শ করতে পেরেছি? বঙ্গবন্ধু তো দ্বিতীয়বার জাতিসংঘে ভাষণ দিতে যাওয়ার সুযোগ পাননি। কিন্তু একটি ভাষণই প্রমাণ করে তিনি কোন মাপের রাষ্ট্রনায়ক এবং আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিষয়ে চিন্তাভাবনা করার মনীষী ছিলেন।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে অনেক রাষ্ট্র, সরকার ও জনগণ আমাদের স্বাধীনতাকে সমর্থন করে। আবার কেউ কেউ বিরোধিতাও করেছিল। জাতিসংঘে আমাদের পক্ষে যেমন ভেটো পড়ে, আবার আমাদের বিপক্ষে কেউ কেউ অবস্থানও নিয়েছিল। বাংলাদেশবিরোধী কুখ্যাত শাহ আজিজুর রহমান এবং মাহমুদ আলী পাকিস্তানের পক্ষে জাতিসংঘে গিয়ে কথা বলেছিলেন। কিন্তু লাভ হয়নি। আমরা শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতা লাভ করেছি। মুক্তিযুদ্ধের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে অনেক দেশ আর্থিক, মানবিক এবং কারিগরি নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছিল।

জাতিসংঘে বিভিন্ন সংস্থা বাংলাদেশকে মানবিক সাহায্য ও সহযোগিতা প্রদান করে। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কিছু বড় শক্তি আমাদের স্বীকৃতি দানে গড়িমসি করেছিল। সেকারণেই জাতিসংঘের সদস্যলাভে আমাদের কিছুটা বিলম্ব হয়। অবশেষে ১৯৭৪-এর ১৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ বাংলাদেশকে ১৩৬তম সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে নির্বাচিত করে। এটি ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধ এবং নতুন রাষ্ট্রের নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধুর সরকারের প্রতি জাতিসংঘের আনুগত্য। সদস্যপদ লাভের সংবাদটি জানাজানির পরেই বঙ্গবন্ধু ২৯তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যাওয়ার আমন্ত্রণ লাভ করেন। স্বল্প সময়ের প্রস্তুতি নিয়েই বঙ্গবন্ধু নিউওয়র্কে পৌঁছান। সেসময় বঙ্গবন্ধু সারা বিশ্বের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কাছে ছিলেন একটি বহুল উচ্চারিত রাজনৈতিক নেতার নাম, সরকারপ্রধান।

একইসঙ্গে তিনি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী প্রধান নেতা যার ডাকে সাড়া দিয়ে সাড়ে সাত কোটি মানুষ পাকিস্তানের একটি নিয়মিত বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নামক একটি রাষ্ট্রের স্বাধীনতা অর্জন করে। তিনি পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন। পাকিস্তানিরা তাকে রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে বিচার করে হত্যা করতে চেয়েছিল। সারা বিশ্বের মানুষ এবং গণতন্ত্রের মূল্যবোধে বিশ্বাসী রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানগণ এর প্রতিবাদ করে, মুক্তিও দাবি করেছিল। পাকিস্তানের সরকার ভয় পেয়ে গিয়েছিল বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের বিচারের নামে প্রহসন করার। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ যেমন স্বাধীনতা লাভ করে, একইসঙ্গে নতুন এই রাষ্ট্রের জনক হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমান বন্দিশালা থেকে বের হয়ে আসেন বিজয়ী এক নেতা হিসেবে।

সারা বিশ্বের মানুষ তখন এক নামে চিনত শেখ মুজিবুর রহমানকে। মুজিব তখন বিশ্বের নিপীড়িত স্বাধীনতাকামী জনগণেরও একজন নেতা। তার মর্যাদা কতখানি উচ্চতায় ছিল সেটি বোঝা যায় পাকিস্তান থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন যাওয়ার পর। তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ প্রটোকল ভেঙে বঙ্গবন্ধুকে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর ডাউনস্ট্রিট ভবনে সাক্ষাৎ করার ঘটনা থেকে। কারণ তখনও ব্রিটেন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করেনি। অথচ ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। বঙ্গবন্ধুর নাম তখন সেই সময়ের বড় রাষ্ট্র নেতাদের সঙ্গে উচ্চারিত হতো। এক বছর আগে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের শীর্ষ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু যখন বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব প্রদান করেন তখন আলজিয়ার্স সম্মেলন হয়ে উঠেছিল জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের ব্যতিক্রমধর্মী এক সম্মেলন।

সব রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানগণ তার বক্তব্য এবং দৃঢ়তায় উচ্ছ্বসিত ছিলেন। ফিদেল কাস্ত্রো তার সঙ্গে সাক্ষাতে বলেছিলেন, “আমি হিমালয় দেখিনি, শেখ মুজিবকে দেখেছি।” অন্যান্য নেতৃবৃন্দও নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর অবস্থানকে অত্যন্ত গুরত্ব দিয়েছিলেন। সেই নেতাই জাতিসংঘের অধিবেশনে যখন বক্তৃতা দিতে দাঁড়ালেন তখন উপস্থিত বিশ্ব নেতৃবৃন্দ দীর্ঘক্ষণ হাততালি দিয়ে তাকে সম্মান জানিয়েছিলেন। একই সঙ্গে ভাষণের মাঝে এবং শেষে সম্মানসূচক হাততালি দেয়া হয়েছিল। বিশাল অধিবেশন কক্ষে পিনপতন নীরবতায় বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ভাষণের অনুবাদ শ্রুতিযন্ত্রের সাহায্যে শুনছিলেন। সকলের চাহনিতে ফুটে ওঠে তাদের জানা শেখ মুজিবের দৃঢ়তার সত্যতা। ভাষণের শুরুতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দৃঢ়চিত্তে উচ্চারণ করেছিলেন-

“আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের পূর্ণতা চিহ্নিত করিয়া বাঙালি জাতির জন্য ইহা একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার অর্জনের জন্য এবং একটি স্বাধীন দেশে মুক্ত নাগরিকের মর্যাদা নিয়া বাঁচার জন্য বাঙালি জনগণ শতাব্দীর পর শতাব্দীব্যাপী সংগ্রাম করিয়াছেন, তাঁহারা বিশ্বের সকল জাতির সাথে শান্তি ও সৌহার্দ্য নিয়া বাস করিবার জন্য আকাঙ্ক্ষিত ছিলেন। যে মহান আদর্শ জাতিসংঘ সনদে রক্ষিত আছে, আমাদের লক্ষ লক্ষ মানুষ সেই আদর্শের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করিয়াছেন। আমি জানি, শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে সকল মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের উপযোগী একটি বিশ্ব গড়িয়া তোলার জন্য বাঙালি জাতি পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, আমাদের এই অঙ্গীকারের সাথে শহীদানের বিদেহী আত্মাও মিলিত হইবে। ইহা বিশেষ আনন্দের ব্যাপার যে, স্বাধীনতাযুদ্ধের একজন সক্রিয় যোদ্ধা সভাপতি থাকাকালেই বাংলাদেশকে এই পরিষদের অন্তর্ভুক্ত করিয়া নেওয়া হইয়াছে।”

এই ভাষণে তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যারা বাংলাদেশের জনগণের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। একইসঙ্গে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে যারা সহযোগিতা প্রদান করে তাদেরকেও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। ওই মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি উল্লেখ করেন-

“বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম হইতেছে সার্বিক অর্থে শান্তি এবং ন্যায়ের সংগ্রাম আর সেই জন্যই জন্মলগ্ন হইতেই বাংলাদেশ বিশ্বের নিপীড়িত জনতার পার্শ্বে দাঁড়াইয়া আসিতেছে।”

বঙ্গবন্ধু একইসঙ্গে জাতিগত বৈষম্য, শোষণ, বঞ্চনা এবং বর্ণবাদের শিকার মানুষের প্রতি তার এবং বাংলাদেশের সমর্থনের কথা ব্যক্ত করেন। পৃথিবীর মুক্তি সংগ্রামের কথা উল্লেখ বলতে গিয়ে তিনি প্যালেস্টাইনের জনগণের জাতীয় অধিকারের প্রতি তার সমর্থনের কথা উল্লেখ করেন। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গেই বলেন উপনিবেশিকবাদের অবসান ব্যতীত বিশ্বে মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রাধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে না। তিনি যুদ্ধ ও পারমাণবিক অস্ত্রের হুমকির বিরুদ্ধে বিশ্বের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের সংগ্রামের কথাটা উল্লেখ করে বলেন-

“যে বিশ্বে মানুষের সৃজনশীলতা এবং আমাদের সময়ের বিজ্ঞান ও কারিগরি অগ্রগতি আণবিক যুদ্ধের হুমকিমুক্ত উজ্জ্বলতর ভবিষ্যতের রূপায়ণ সম্ভব করিয়া তুলিবে।”

ভাষণে তিনি উল্লেখ করেন-

“যে বিশ্ব কারিগরিবিদ্যা ও সম্পদের পারস্পরিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে সর্বক্ষেত্রে সুন্দর জীবন গড়িয়া তোলার অবস্থা সৃষ্টি করিবে। যে অর্থনৈতিক উত্তেজনা সম্প্রতি সমগ্র বিশ্বকে নাড়া দিয়াছে, তাহা একটি ন্যায়সঙ্গত আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়িয়া তুলিয়া জরুরিভাবে মোকাবিলা করিতে হইবে।”

একইসঙ্গে বঙ্গবন্ধু সে বছর বাংলাদেশের ব্যাপক বন্যায় যে ক্ষতি সাধিত হয়েছে তা পুষিয়ে নিতে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ যে মানবিক সাহায্য প্রদান করেছিল তার কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে উল্লেখ করেছেন। বিশ্বের ক্ষুধার্ত মানুষের পাশে জাতিসংঘসহ সব সংস্থা এবং রাষ্ট্র পাশে দাঁড়াবে, মানবিক বিশ্ব গড়ে তোলার জন্য সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবে সেটি তিনি প্রত্যাশা করেন। তিনি বিশ্বের ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে অন্ন তুলে দেয়ার লড়াইতে যুক্ত হতে সবাইকে আহ্বান জানান। বিশ্বে খাদ্য সমস্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করে আছে বলে তিনি তার ভাষণে উল্লেখ করেন। ধনী দেশগুলোর খাদ্যশস্য রপ্তানির মূল্য বেশি হওয়ায় দরিদ্র দেশগুলো দুর্ভিক্ষের কবলে পড়তে যাচ্ছে। বিশ্বের বাণিজ্যে বৈষ্যমের চিত্র তুলে ধরেন।

তার ভাষণের শেষ আশাবাদে তিনি উল্লেখ করেন-

“বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় আমাদের অঙ্গীকার প্রমাণের জন্য উপমহাদেশে আপোস মীমাংসার পদ্ধতিকে আমরা জোরদার করিয়াছি। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, বাংলাদেশের অভ্যুদয় বস্তুতপক্ষে এই উপমহাদেশে শান্তি কাঠামো এবং স্থায়িত্ব প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে অবদান সৃষ্টি করিবে।” যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ তার ক্ষত পূরণ করতে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছে। বঙ্গবন্ধু উল্লেখ করেন-

“আমাদের লক্ষ্য স্বনির্ভরতা। আমাদের পথ হইতেছে জনগণের ঐক্যবদ্ধ ও যৌথ প্রচেষ্টা। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং সম্পদ ও প্রযুক্তিবিদ্যার শরিকানা মানুষের দুঃখ-দুর্দশা হ্রাস করিবে এবং আমাদের কর্মকাণ্ডকেও সহজতর করিবে, ইহাতে কোনো সন্দেহ নাই।

নতুন বিশ্বের অভ্যুদয় ঘটিতেছে। আমাদের নিজেদের শক্তির উপর আমাদের বিশ্বাস রাখিতে হইবে। আর লক্ষ্য পূরণ এবং সুন্দর ভাবীকালের জন্য আমাদের নিজেদেরকে গড়িয়া তুলিবার জন্য জনগণের ঐক্যবদ্ধ ও সমন্বিত প্রয়াসের মাধ্যমেই আমরা আগাইয়া যাইব।”

বঙ্গবন্ধুর এই স্বপ্ন থেকে বাংলাদেশ বিচ্যুত হয়নি, কেবল সেটির বাস্তবায়ন দেখতে চায়।

লেখক: অধ্যাপক-গবেষক

এ বিভাগের আরো খবর