বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন: দুই দলের প্রস্তুতির হাওয়া

  •    
  • ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৮:২৯

বিএনপির সামনে বেশ কিছু জটিল সমস্যা রয়েছে। প্রথমত, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারারুদ্ধ এবং অসুস্থ। সরকারের নির্বাহী আদেশে তিনি জামিনে বাসায় আছেন। দ্বিতীয়ত, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানও বিচারিক আইনে দণ্ডিত। তিনিও দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। বিএনপি মূলত এই দুজনের নির্দেশনা ও ভাবমূর্তিতে পরিচালিত হয়। তারেক রহমান সাজাপ্রাপ্ত আসামি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিতেও একজন ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে অভিযুক্ত।

বৈশ্বিক করোনা সংক্রমণের ঢেউ দেশে এখনও পুরোপুরি কমেনি। সবেমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হচ্ছে। কিছুদিন আগে ব্যবসা- বাণিজ্য, অফিস-আদালত, শিল্প-কলকারখানা, যানবাহন, পর্যটনসহ সব কিছু খুলে দেয়া হয়েছে। দীর্ঘ দেড় বছরে করোনার দুটি ঢেউ দেশের অর্থনীতি, শিক্ষা, প্রশাসনসহ সবক্ষেত্রে বড় ধরনের আঘাত সৃষ্টি করেছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বেশ সময়ের প্রয়োজন। শিক্ষায় যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নিরবচ্ছিন্ন শিক্ষা কার্যক্রম বজায় রাখা দরকার। সবকিছুই নির্ভর করবে করোনার নতুন কোনো ঢেউ আবার যেন হানা না দেয় তার ওপর। সেটি কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না। দুনিয়ার অভিজ্ঞতা এখনও সুখকর নয়। অনেক দেশেই করোনার চতুর্থ ঢেউ এবং নতুন ভ্যারিয়েন্টের আবির্ভাব ঘটতে দেখা যাচ্ছে। সেকারণেই আমাদের দেশে কতদিন বর্তমান সহনীয় অবস্থাটি দেখতে পাব তা নিশ্চিত করে বলে যায় না।

এমনই এক অনিশ্চিত অবস্থায় দেশের রাজনীতিতে নির্বাচনের হাওয়া দুই বড় দলের দিক থেকে বয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই এই হাওয়া বইয়ে দেয়া হয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হবে ২০২৩ সালের শেষ সপ্তাহে অথবা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। সেই হিসাবে বাকি রয়েছে দুই বছর তিন মাসের মতো সময়। করোনার সংক্রমণ যদি বর্তমান ধারায় কমে আসতে থাকে তাহলে রাজনৈতিক সভা সমাবেশ বা কর্মকাণ্ড হয়ত স্বাভাবিক গতিতে দলগুলো পরিচালিত করতে মাঠে নামবে। কিন্তু সেই নামাটি যদি আবার নতুন কোনো কোভিড ভ্যারিয়েন্টের রূপান্তর ঘটায় তাহলে পরিস্থিতি কী হবে বলা মুশকিল।

এই বছরের শুরুতে ভারতে বেশ কিছু রাজ্যসভা নির্বাচনের পর ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের প্রকোপ ভারতকে কতটা নাজুক অবস্থায় ফেলে দিয়েছিল সেটি সবারই স্মরণে থাকার কথা। আমরাও সেই ঢেউয়ে অনেকটাই ভেসে বেড়াচ্ছি। সুতরাং নির্বাচনি হাওয়া বইয়ে দেয়ার রাজনৈতিক প্রচেষ্টা ২০২২-২৩ সালে কতটা সুখের হবে, জনগণ তাতে কতটা স্বাছন্দ্যে অংশ নেবে সেটি তখনকার পরিস্থিতির ওপরই নির্ভর করবে। বেশিরভাগ মানুষই করোনার ভয়াবহতা সম্পর্কে কমবেশি অবগত। একইসঙ্গে দেড় বছরে অনেক মানুষ করোনার কারণে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, স্বজনদের হারিয়েছে, এখনও অনেকে কোভিড-উত্তর শারীরিক সমস্যায় জর্জরিত।

ফলে সামনের দিনগুলো আগের মতো মানুষকে রাজনৈতিক মাঠে স্বতঃস্ফূর্তভাবে নামতে খুব বেশি উদ্বুদ্ধ করবে এমনটা আশা করা মনে হয় প্রশ্নের মধ্যেই থাকবে। তাছাড়া জীবন-জীবিকার সংগ্রাম বিপুলসংখ্যক মানুষের সামনে এখন গুরত্বপূর্ণ বিষয়। অর্থনৈতিক ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার যে সুযোগটি যার যার সামনে রয়েছে তারা সেটাকেই প্রাধান্য দেবেন- এটাই স্বাভাবিক। দেশে গত একযুগে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে।

সামাজিকভাবেও মানুষের একটি নতুন অবস্থান তৈরি হয়েছে। করোনার অভিঘাতে পড়েও মানুষ দেড় বছর নিজেদেরকে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে ধরে রাখার বেশ কিছু অবলম্বন খুঁজে নিতে পেরেছে। সুতরাং সামনের দিনগুলোতে দেশের রাজনীতিতে বড় ধরনের কোনো সংঘাতময় পরিস্থিতি বেশিরভাগ মানুষই সৃষ্টি হওয়ার পক্ষে যেতে চাইবে না। তাছাড়া আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা মানুষকে নতুন কিছু উপলব্ধির মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। মানুষ যখন দেখছে ক্ষমতার পরিবর্তন সেখানে অর্থনৈতিক সংকট ভয়াবহ আকারে খারাপের দিকে মোড় নিতে যাচ্ছে, মধ্যবিত্ত উচ্চবিত্তের মানুষজন আসবাবপত্র পানির দামে বিক্রি করতে চাইলেও গ্রাহক খুঁজে পাচ্ছে না, খাদ্যসংকট চরম আকার ধারণ করতে যাচ্ছে।

নারীরা রাস্তায় তাদের অধিকারের জন্য মিছিল করছে, ক্ষমতাসীনরা নারীদেরকে শিক্ষা, চাকরি ইত্যাদি থেকে বঞ্চিত করার সব বেআইনি কর্মকাণ্ড চালিয়ে দিচ্ছে, তখন বাংলাদেশের সর্বত্র এক ধরনের পর্যবেক্ষণ দেশের রাজনীতির উত্থান পতনে নতুন অভিজ্ঞতা হিসেবে যুক্ত হতে পারে বলে মনে হচ্ছে। কোনো অবস্থাতেই কেউ বিরাজমান স্থিতাবস্থা ভেঙে পড়ুক, রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্য বাংলাদেশে তৈরি হোক সেটি খুব বেশি সমর্থন পাবে বলে মনে হয় না। তাছাড়া ২০১৩-১৫ সালের নৈরাজ্যকর অভিজ্ঞতা এখনও দেশে অনেকের স্মরণে আছে। সেকারণে বাংলাদেশে আগামী ২ বছর রাজনীতিতে সংঘাত সংঘর্ষের পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের জীবনে কাবুলের মতো নাজুক পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার ন্যূনতম সুযোগ সৃষ্টিতে বেশিরভাগ মানুষই অংশ নেবে বলে মনে হয় না।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জাতীয় নির্বাহী কমিটির এক সভা গণভবনে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় গত ৯ সেপ্টেম্বর। এতে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের ৫৩ সদস্য অংশগ্রহণ করেন। তারা দলের নিজ নিজ এলাকার পরিস্থিতি উপস্থাপন করেন। এতে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক পরিস্থিতি, নেতৃবৃন্দের কার্যক্রম, কোথাও কোথাও দ্বন্দ্ব-সংঘাত ইত্যাদি সম্পর্কে খোলামেলা আলোচনা হয়।

আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে তৃণমূল পর্যায়ে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে অনেক স্থানেই নেতাকর্মীদের জনসংযোগ ও সম্পৃক্ততার অভাব সম্পর্কে নেতৃবৃন্দ দলের সভাপতিকে অবহিত করেন। দীর্ঘদিন দল ক্ষমতায় থাকার কারণে অনেক জায়গায় নেতাকর্মীদের মধ্যে চাওয়া পাওয়া ও দ্বন্দ্ব বেড়ে যাওয়ায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা বিরাজ করছে। তারপরও করোনার এই সংকটময়কালে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী সাধারণ মানুষকে নানাভাবে সাহায্য ও সহযোগিতা প্রদান করেছেন। অনেকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণও করছেন। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা শেষে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা তার দিকনির্দেশনামূলক বক্তৃতায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে তিনি দলের অভ্যন্তরে যারা কোন্দল ও সংঘাতে লিপ্ত আছেন তাদেরকে হুঁশিয়ার করে দেন এবং দলের জন্য যারা অবদান রাখছেন তাদেরকে দলের কর্মকাণ্ডে আরও সক্রিয় হওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন।

আগামী নির্বাচন উপলক্ষে তিনি দলের প্রস্তুতি গ্রহণের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা দিয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন উপকমিটিকে পরবর্তী নির্বাচনি ইশতেহারে যে যে বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত হবে সেসব বিষয়ে আপডেট করার নির্দেশ দেন। ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ শিক্ষা, অর্থনীতি, বিদ্যুৎ, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কীভাবে বাংলাদেশকে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে নিতে কাজ করবে সে সম্পর্কেও দিকনির্দেশনা ইশতেহারে থাকার কথা তিনি জানান।

আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির এই সভার পর জাতীয়তাবাদী দল ( বিএনপি) নড়েচড়ে ওঠে। প্রথমে দলটি জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত মহিলা দলের এক সভায় বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার কথা উল্লেখ করেন। ওই সভায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় আগামী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া অনুষ্ঠিত হতে না দেয়ার কথাও উল্লেখ করেন। এরপরেই গত মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি এবং দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের নিয়ে বিএনপি এক জরুরি সভা আহ্বান করে।

২০১৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারির পর এই সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৮ সালের সভায় সভাপতিত্ব করেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বর্তমানে তিনি কারাদণ্ডে থাকায় দলের কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে পারছেন না। এই অবস্থায় লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনিও কারাদণ্ডে দণ্ডিত। সেকারণে লন্ডন থেকে তিনি অনলাইনে বিএনপির গুলশানস্থ চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন, যা গণমাধ্যমে আইনগতভাবে প্রকাশিত হওয়ার বিধান না থাকায় প্রদর্শিত হয়নি। মঙ্গলবারের সভায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যগণ অংশ্রগ্রহণ করেন, বুধবার জ্যেষ্ঠ যুগ্ম ও যুগ্ম সম্পাদক এবং বৃহস্পতিবার দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বসেছেন। সভায় অংশগ্রহণকারী নেতৃবৃন্দের মধ্য থেকে অনেকেই আগামীদিনের আন্দোলন সংগ্রাম ও নির্বাচনের ব্যাপারে বক্তব্য প্রদান করেন। নেতৃবৃন্দ নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না মর্মে অভিমত প্রকাশ করেন। একারণেই তারা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনরায় চালু করার দাবিতে আন্দোলন করার ওপর জোর দেন। সেক্ষেত্রে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ কিংবা যুগপৎভাবে আন্দোলন সংগঠিত করার জন্য দলকে প্রস্তুত করার কথা জানান।

এছাড়া আগামী সপ্তাহে বিএনপির সমমনা পেশাজীবীদের সঙ্গেও মতবিনিময়ের একটি সম্ভাবনার কথা গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। সভার কার্যক্রম যেহেতু রুদ্ধদ্বার ছিল তাই ভেতরের সব কথা বাইরে জানা যায়নি। বোঝা গেছে বিএনপি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে গুরত্বের সঙ্গে নিয়েছে। সেজন্য দলটি বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে নয় বরং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার দাবিতে ব্যাপক আন্দোলন সংগঠিত করার ব্যাপারে একমত পোষণ করেছে। সেক্ষেত্রে সরকারের বিরুদ্ধে যেকোনো মূল্যে ত্যাগ স্বীকার করার আন্দোলন দাঁড় করাতে সবাইকে সংগঠিত করার কাজে নামতে ব্যাপক সাংগঠনিক সফর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হয়ত শিগগিরই বিএনপি নেতৃবৃন্দ সেভাবে মাঠে নামবে।

বিএনপির সামনে বেশ কিছু জটিল সমস্যা রয়েছে। প্রথমত, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারারুদ্ধ এবং অসুস্থ। সরকারের নির্বাহী আদেশে তিনি জামিনে বাসায় আছেন। দ্বিতীয়ত, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানও বিচারিক আইনে দণ্ডিত। তিনিও দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। বিএনপি মূলত এই দুজনের নির্দেশনা ও ভাবমূর্তিতে পরিচালিত হয়।

তারেক রহমান সাজাপ্রাপ্ত আসামি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিতেও একজন ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে অভিযুক্ত। দলের অভ্যন্তরে কোন্দল এবং নিষ্ক্রিয়তা দীর্ঘদিন থেকে বিরাজ করছে। এছাড়া ২০০১-০৬ সালের জোট সরকারের কর্মকাণ্ডে দেশ এবং আন্তর্জাতিক মহলে বিএনপির ভাবমূর্তির চরম সংকট এখনও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। এছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সবচাইতে অপব্যবহারটি ২০০৬ সালে জোট সরকারের হাতেই ঘটেছিল। সেকারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির প্রতি সমর্থন জোরালো করার ভিত্তি বিএনপির খুব বেশি জোরালো হবে না। এছাড়া জামায়াত ও স্বাধীনতাবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে দলটির আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা সম্পর্ক বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক শক্তি, জঙ্গিবাদী এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির উত্থানকেই উৎসাহিত করবে এটি নিশ্চিত হওয়ায় রাজনীতি সচেতন মহল, মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত, তরুণ সমাজের একটি বড় অংশ বিএনপির প্রতি আগের মতো আস্থা রাখার পর্যায়ে নেই।

আওয়ামী লীগের তৃণমূল থেকে মাঝারি পর্যায় পর্যন্ত অনেকের কর্মকাণ্ডে সমাজে ক্ষোভ এবং সমালোচনা রয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনা বর্তমান দেশীয় এবং বৈশ্বিক বাস্তবতায় বাংলাদেশকে যেভাবে অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দৃঢ়তার সঙ্গে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তার সঙ্গে পাল্লা দেয়ার নেতৃত্ব বিএনপি বা অন্য কোনো দলে দেখা যাচ্ছে না। সেকারণে সুশাসন, নির্বাচন ও গণতন্ত্র নিয়ে যে অসন্তুষ্টি রয়েছে তা এককভাবেই যেমন আওয়ামী লীগের ওপর দায় চাপিয়ে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়, তেমনি বিরোধী দল যতক্ষণ পর্যন্ত অসাম্প্রদায়িক এবং গণতান্ত্রিক আদর্শের ধারায় ফিরে না আসবে ততক্ষণ পর্যন্ত সমস্যাগুলো একক কোনো দল বা জোটের পক্ষে সমাধান করাও সম্ভব হবে না। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিকে পুনর্গঠিত করা না গেলে সুশাসন, নির্বাচন ও গণতন্ত্রের বিকাশ নিশ্চিত হওয়া নয়।

লেখক: অধ্যাপক-গবেষক

এ বিভাগের আরো খবর