নতুন সরকার প্রতিষ্ঠার আগে আফগানিস্তানে মৌলবাদী শাসন ছিল এবং ওই সরকারের প্রকাশ্য সমর্থন ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। পাকিস্তান সরকারের সমর্থনও ছিল তাদের প্রতি। জোট নিরপেক্ষ তৃতীয় বিশ্বের কোনো সমর্থন আফগান সরকারের প্রতি ছিল না। বস্তুত, আজতক আফগানিস্তানে সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এমন রেকর্ড নেই। তবে সে দেশের গোপন বামপন্থী দল, সামরিক বাহিনীর এক অংশের সমর্থনে অকস্মাৎ একটি প্রগতিশীল সরকার গঠন করলে, সোভিয়েত ইউনিয়নসহ সমগ্র সমাজতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক বিশ্ব তার প্রতি সংহতি জানায়, সেটা সেই গত শতাব্দীর ৮০ ও ৯০ দশকের কথা।
২০০১ সালে ৯/১১-এর ঘটনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বে এক আলোড়ন সৃষ্টি করে। তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুউচ্চ বাণিজ্যিক টুইন টাওয়ার, বাজার-বিপণী, আবাসিক এলাকা আকস্মিক বিমান হামলায় ধ্বংস হয়, মৃত্যু ঘটে অসংখ্য মানুষের। এই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের পর মার্কিন সরকার এর জন্য জঙ্গিবাদকে দায়ী করে। তখন থেকে মার্কিন সরকার ওই মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান শুরু করে।
সিআইএ, আইএসআই প্রভৃতি সংস্থাগুলো ওই সরকার উৎখাতের জন্য অস্বাভাবিকভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করে। সেকারণে তারা মৌলবাদীদের দৃঢ় সমর্থন এবং তাদেরকে মিলিয়ন ডলার অর্থ, আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র দেয়ার পাশাপাশি তালেবানদের প্রশিক্ষণ দেয়।
আফগানিস্তানের জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগই মুসলিম। তাদেরকে এতদিন শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছিল। আধুনিকতার কোনোকিছুই সে দেশের মানুষকে স্পর্শ করেনি। তাই শিক্ষিত বা স্বল্প-শিক্ষিত আফগান মুসলিমদেরকে ধর্মের নামে উসকে দেয়া সিআইএ, আইএসআই ও তালেবানদের জন্য অত্যন্ত সহজ হয়।
অস্ত্রের জোরে আগের তালেবান সরকার ২০ বছর ধরে ওই দেশে। মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই এই পুতুল সরকার দিয়ে দেশটি পরিচালনা করে। এই সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া উগ্রপন্থি তালেবানরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তাঁবেদার আশরাফ ঘানি সরকারকে উৎখাত করতে মরিয়া হয়ে ওঠে।
এরা আফিম পাচার, কালোটাকা ও নানা অসৎ পথে এবং দেশ-বিদেশের নানাসূত্রে বিপুল পরিমাণ অর্থ সম্পদের মালিকানা অর্জন করে। বিস্ময়কর হলেও সত্য, আমেরিকাও তাদেরকে অস্ত্র কিনতে সহায়তা করে। এই দ্বৈতনীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নতুন নয়। ২০ বছর পর তালেবানরা ক্ষমতায় এলো।
অপরদিকে অভ্যন্তরীণ বেশ কিছু বিরোধী শক্তি তালেবানদের সশস্ত্র বিরোধিতায় নেমেছে, তেমনই পাঞ্চশির প্রদেশ তালেবানদের বশ্যতা স্বীকার করছিল না।
লাখ লাখ নারী-পুরুষ, শিশু তাদের মাতৃভূমি ছেড়ে পালাচ্ছে। অপরদিকে রাশিয়া, চীন, ভারত ও আমেরিকা তাদেরকে স্বীকৃতি দেবে বলে মনে হয় না। তালেবানশাসিত আফগানিস্তান এখন কোনদিকে যায় তা দেখার জন্য সবাইকে অপেক্ষা করতে হবে।
লেখক: একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক।