বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

যানজটমুক্ত রাজধানীর স্বপ্নবাহন মেট্রোরেল

  • অনন্য প্রতীক রাউত   
  • ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৬:৪৬

রাজধানীতে যত সমস্যা রয়েছে তার মধ্যে যানজট সবচেয়ে ভোগান্তিকর৷ প্রতিনিয়ত এই যানজট হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগের পাশাপাশি কর্মঘণ্টারও ক্ষতি করে৷ স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমে যেমন ব্যাঘাত ঘটে তেমনি প্রভাব পড়ে অন্যান্য ক্ষেত্রে। ক্ষতিটা ধীরে হলেও, এক সময় দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাবটা চলে আসে অর্থনীতির ওপর। যানজটের মতো কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট দুরবস্থা বা অব্যবস্থাপনা নিরসনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা তাই জরুরি ছিল।

রাজধানী হিসেবে ঢাকাকেই পুরো দেশের বেশিরভাগ চাপটা বহন করতে হয়৷ আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যার পরিমাণ এখানে অত্যধিক। প্রতিনিয়ত জীবিকার অন্বেষণে, ভাগ্য বদলাতে শত শত লোক ঢাকায় পাড়ি জমায়। ফলে, সঠিক নগর ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনা ছিল সময়ের দাবি৷ বিগত কয়েক দশকে সমস্যাগুলো যেমন সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেড়েছে- তেমনি সমস্যা সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থাপনাও ছিল চোখে পড়ার মতো। মেট্রোরেল সে ধারাবাহিকতার এক বিশেষ সংযোজন। এমনকি মেট্রোরেলের পরিক্ষামূলক যাত্রা সেই স্বপ্ন পূরণের পথকে এগিয়ে দিয়েছে কয়েক ধাপ। এখন অপেক্ষা শুধু শেষ হওয়ার।

রাজধানীতে যত সমস্যা রয়েছে তার মধ্যে যানজট সবচেয়ে ভোগান্তিকর৷ প্রতিনিয়ত এই যানজট হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগের পাশাপাশি কর্মঘণ্টারও ক্ষতি করে৷ স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমে যেমন ব্যাঘাত ঘটে তেমনি প্রভাব পড়ে অন্যান্য ক্ষেত্রে। ক্ষতিটা ধীরে হলেও, এক সময় দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাবটা চলে আসে অর্থনীতির ওপর। যানজটের মতো কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট দুরবস্থা বা অব্যবস্থাপনা নিরসনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা তাই জরুরি ছিল। যেহেতু ঢাকা শহরে দিন দিন মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে, তাই যানজট স্বাভাবিকভাবে কমত না।

যানজটের মতো কৃত্রিম এই দুরবস্থা নিরসনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার যে দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পগুলো হাতে ‍ুনিয়েছিল তা অবশ্যই প্রশংসনীয়৷ এসব প্রকল্পে যেমন বদলে যাবে ঢাকা, তেমনি মানুষের দুর্ভোগও কমবে। ফিরে আসবে স্বস্তির হাওয়া। মেট্রোরেলের পাশাপাশি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও পাতাল রেলের কাজও হাতে নিয়েছে সরকার। নিঃসন্দেহে এটা বলা যায় যে, ঢাকাকে বদলে দিতে এবং মানুষকে বাসযোগ্য এক নগরী উপহার দিতে এ প্রচেষ্টা নিশ্চয়ই সময়োপযোগী। অবসবাসযোগ্য নগরী হিসেবে ঢাকার যে দুর্নাম ছড়াচ্ছিল চারদিকে সে দুরবস্থার মোক্ষম এক জবাব দীর্ঘমেয়াদি এই প্রকল্পগুলো।

সাধারণ মানুষ যখন এসব কার্যক্রমের সুফল ভোগ করতে শুরু করবে ঠিক তখনই বদলে যাবে ঢাকা। এসব অবিশ্বাস্য রকমের বদলে যাওয়াকে সাধারণ মানুষ এখন আর গল্প মনে করে না বরং বিশ্বাস করে মনেপ্রাণে ‘আমরা পারি, বাংলাদেশ পারে’। বাংলাদেশে কষ্টকর সময় হিসেবে পরিচিত ১৯৭৫-১৯৯৫ সাল পর‌্যন্ত মানুষের বিশ্বাস এতটাই নিম্নমুখী করা হয়েছে যে, ভালো কাজের প্রতি বিশ্বাস জন্মানোটাও বড় চ্যালেঞ্জ।

সবকিছুর এক সময়োপযোগী জবাব প্রকল্পের সঠিক বাস্তবায়ন৷ যার নেপথ্যে ছিল দূরদর্শী পরিকল্পনা এবং স্বচ্ছ বাস্তবায়ন৷ স্বভাবতই, ওসব নামধারী এজেন্টদের গালগপ্প এদেশের সাধারণ মানুষ গ্রহণ করেনি বরং ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। সাধারণ মানুষের মাঝে ‘আমরাও পারি’ নামক যে আত্মবিশ্বাসটা জন্মেছে- বাংলাদেশ বিনির্মাণে তা আরও প্রেরণা জোগাবে৷ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলার স্বপ্ন যে অস্তমিত হয়নি তার প্রমাণ উন্নয়নের মহড়া এবং গণমানুষের আস্থা।

মানুষের আস্থা লাভের প্রক্রিয়াটা সহজ ছিল না তা আগেই উল্লেখ করেছি। প্রথমত, এ দেশের মানুষ যা কল্পনা করেনি তা নির্মাণ এবং বিশ্বাসের জায়গা অর্জন৷ দ্বিতীয়ত, ঘরের শত্রু বিভীষণদের সামলানো ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। গুজব-অসত্য বুলি শক্তহাতে দমন করতে সক্ষম হয়েছে সরকার।

মেট্রোরেল ব্যবস্থা চালু হলে, যোগাযোগ ব্যবস্থায় সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে চলমান প্রকল্পটি। চোখের পলকে ছুটবে ট্রেন। উত্তরা থেকে মতিঝিল পৌঁছতে সময় লাগবে মাত্র ৩৭ মিনিট। পাঁচ মিনিট অন্তর ছাড়বে এসি ট্রেন। সম্পূর্ণ এলিভেটেড মেট্রোরেলে প্রতি ঘণ্টায় উভয়দিকে ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা থাকবে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত থাকবে ১৬টি স্টেশন। সাড়ে তিন মিনিট অন্তর ট্রেন থামবে। থাকবে আধুনিক রেলস্টেশন।

চলন্ত সিঁড়ি দিয়ে রাস্তা থেকে স্টেশনে প্রবেশ করা যাবে। ‘প্রিপেইড কার্ড’ দিয়ে ট্রেনের ভাড়া পরিশোধ করতে পারবেন যাত্রীরা। আবার টিকিট কেটে ভ্রমণেরও সুযোগ থাকবে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলবে প্ল্যাটফর্মের প্রবেশদ্বার। বিদ্যুতে চলবে দ্রুতগতিসম্পন্ন এই ট্রেন। জাতীয় পতাকার সঙ্গে মিল রেখে মেট্টোরেলে থাকবে লাল সবুজের সমাহার।

মেট্রোরেল আধুনিক নগর পরিকল্পনায় এক বিস্ময়কর সংযোজন। যা মানুষের দৈনন্দিন সমস্যা নিরসনে বা গতি আনতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। কাজের গতি ও মানুষের সচেতনতার জন্য ইতোমধ্যে এমআরটি তথ্যকেন্দ্রে নমুনা ট্রেন রাখা হয়েছে। টিকিট কাটা, ওঠা-নামা ও সব ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে যেখানে স্পষ্ট ধারণা দেয়া হয়েছে। অনেকে মনে করেন, ফ্লাইওভার নির্মাণ করেও নাকি যানজট কমানো সম্ভব হয়নি- সেখানে মেট্রোরেল কেমন ভূমিকা রাখবে? তাদেরকে গুজবের বশবর্তী হয়ে আগাম ভাবনা না ভেবে বাস্তবতা উপলব্ধি করার অনুরোধ জানাই।

মেট্রোরেল একদিকে যেমন যানজট কমাবে অন্যদিকে ঢাকাকে করে তুলবে দৃষ্টিনন্দন। নগরবাসীর এই স্বপ্ন পূরণ হবে আগামী ডিসেম্বরে। পাশাপাশি আগামী বছরের জুনে পদ্মাসেতু চালু করা হবে এবং তার পরই খুলে দেয়া হবে কর্ণফুলী সেতু। এই তিনটি প্রকল্প উন্নয়ন কার্যক্রমের এক মাইলফলক। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে যার ভূমিকা থাকবে সর্বাধিক। এমন বৃহৎ প্রকল্পগুলো দেখুক আলোর মুখ। বাংলাদেশ হোক বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা। স্বপ্নকে সত্যি করে এগিয়ে যাক বীরদর্পে৷

লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

এ বিভাগের আরো খবর