সৈয়দপুর পৌরসভা নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে জাতীয় পার্টি (জাপা) । একই সঙ্গে আগামী নির্বাচনগুলোতেও অংশ নেয়ার বিষয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছে দলটি।
মঙ্গলবার রাজধানীর বনানীতে জাপা চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু এ কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘সংবিধান অনুসারে নির্বাচনের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনার নূরুল হুদা সাহেবের সঙ্গে ফোনে দুই বার কথা বলেছি। উনি বলেছেন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। কিন্তু কিছুই হলো না।’
পৌরসভা নির্বাচনের পঞ্চম দফায় রোববার নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভায় নির্বাচন হয়। এতে অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন জাপার মেয়র প্রার্থী সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিক। নির্বাচনে জয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী রাফিকা জাহান আকতার বেবী। তিনি পৌরসভাটির প্রথম নারী মেয়র।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরামে বসব। আগামীতে যে নির্বাচনগুলো আসছে, সেগুলো যদি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ না হয় তাহলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেব, নির্বাচনে যাব কি না।’
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের উদ্দেশে বাবলু বলেন, ‘আমরা এখন আর মহাজোটে নেই। আমরা মহাজোট থেকে বেরিয়ে এসেছি। আমরা জনগণের পক্ষে আছি। আমরা ভোট ডাকাতির বিরুদ্ধে। তাই আগামীতে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে আমাদের বাধ্য করবেন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যদি কঠোর সিদ্ধান্ত নিই, আপনারা রাজনীতির ময়দানে কাউকে পাবেন না। কেউ ভোট কেন্দ্রে যাবে না, কেউ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে না। আপনাদের মতো করে আপনারা করবেন।’
সংবাদ সম্মেলনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়েও কথা বলেন জাপা মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু।
তিনি বলেন, ‘এখন তো কথাই বলতে পারছি না। যে আইন মানুষের বাক অধিকারকে লঙ্ঘণ করে আমরা অবশ্যই তার পরিবর্তন চাই।’
সংবাদ সম্মেলনে জাপা সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সফিকুল ইসলাম সেন্টু বলেন, ‘নির্বাচনে দলীয় প্রচারে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতারা আমাদের হুমকি দিয়েছে।’
সৈয়দপুরের স্থানীয় সংসদ সদস্য ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান আহসান আদেলুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচনের আগেই জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মহিলাদের ওপর ন্যাক্কারজনক হামলা হয়েছে।’
প্রেসিডিয়াম সদস্য রানা মোহাম্মদ সোহেল বলেন, ‘নির্বাচনে উৎসব আনন্দ ছিল। তবে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের তাণ্ডবে সব লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। প্রধান নির্বাচনি এজেন্টকে গুলি করে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। প্রহসনের নির্বাচন এদেশের মানুষ মেনে নেবে না।’
জাপার ভাইস চেয়ারম্যান ও জাতীয় যুব সংহতির আহবায়ক এইচএম আসিফ শাহরিয়ার বলেন, ‘সৈয়দপুর নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে প্রশাসন যে আশ্বাস দিয়েছিল বাস্তবতার সঙ্গে তার কোনো মিল নেই। যেভাবে ভোট ডাকাতি হয়েছে তাতে গণতন্ত্রের অধঃপতন হয়েছে। ওই আসনে জাতীয় পার্টি সবসময় বিজয়ী হয়। তাই ভোট ডাকাতি ছাড়া আওয়ামী লীগের কোনো বিকল্প ছিল না।’
ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন জাপার
নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার নিয়েও প্রশ্ন তোলেন জাপা মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘পত্রিকায় উঠেছে, ১০০ শতাংশ ভোট পড়েছে। এটা কীভাবে সম্ভব? তার মানে এই ব্যবস্থাকে ত্রুটিপূর্ণ করা হয়েছে। ব্যবস্থার কোনো দোষ আমরা দিচ্ছি না। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন একে ত্রুটিপূর্ণ করছেন। তারাই এর জন্য দায়ী।’