ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে এখন আকাশ দেখা কঠিন হয়ে গেছে। শহর ভরা পোস্টারে। সেসব পোস্টার নষ্ট হওয়া ঠেকাতে জামার মতো পরিয়ে দেয়া হয়েছে স্বচ্ছ পলিথিন। তার সঙ্গে সারা দিন চলছে মাইকিং। সাউন্ড বক্সে বেজেই চলেছে নানা ধরনের চটকদার প্যারোডি গান।
২৮ ফেব্রুয়ারি পৌরসভা নির্বাচনের পঞ্চম ধাপে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য জোরেশোরে প্রচার চালাচ্ছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা।
জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর জানায়, নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীদের চার লাখ পোস্টারে পলিথিন ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতি পোস্টারে ৯ থেকে ১৮.৫ গ্রাম করে পলিথিন ব্যবহার হয়েছে।
অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, নির্বাচনি প্রচার শেষে পোস্টার ও পলিথিন মিলিয়ে ১১.৭২ টন আবর্জনা তৈরি হবে।
অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুরুল আমিন নিউজবাংলাকে জানান, পলিথিনসহ এসব আবর্জনা পৌর শহরের বিভিন্ন নালা–নর্দমায় গিয়ে জমা হবে। ফলে তা একদিকে যেমন পরিবেশ দূষণ করবে, অন্যদিকে বৃষ্টির পানি আটকে রেখে জলাবদ্ধতা তৈরিতেও ভূমিকা রাখবে।
বুধবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে দেখা যায়, জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন শতাধিক রিকশা নিয়ে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে শোডাউন করে। বেশিরভাগ রিকশাওয়ালার হাতে থাকা বাঁশি বাজানো হচ্ছিল বিকট শব্দে।
জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের শোডাউন। ছবি: নিউজবাংলা
জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরী কমিটির সভাপতি আশরাফুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নৌকার সমর্থনে একটি শ্রমিক সমাবেশ ছিল। তাই কিছু রিকশা নিয়ে একসঙ্গে জড়ো হয়ে ওই সমাবেশে যাচ্ছিলাম।’
মোসাম্মৎ তাসমিয়া নামের এক ছাত্রী বলেন, ‘প্রতিদিন মাইকের আওয়াজ শুনতে হয়। পড়ার সময় মাইকের ব্যাপক আওয়াজে আমাদের পড়ালেখার অনেক ক্ষতি হচ্ছে। আর এখন দেখেন রিকশাওয়ালারা হাতে বাঁশি নিয়ে কী শব্দটাই না করতেছে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডের প্রতিটির অলিগলিতে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচারে বিরতিহীনভাবে বাজানো হচ্ছে প্যারোডি গান। প্রচণ্ড শব্দে বিপাকে পড়েছে শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ ব্যক্তিরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, আবাসিক এলাকায় শব্দের মাত্রা দিনের বেলা ৫৫ ডেসিবেল, রাতে ৪৫ ডেসিবেল হওয়া উচিত। বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৬৫ ডেসিবেল, রাতে ৫৫ ডেসিবেল; শিল্পাঞ্চলে দিনে ৭৫ ডেসিবেল, রাতে ৬৫ ডেসিবেলের মধ্যে শব্দ মাত্রা থাকা উচিত৷ আর হাসপাতালে দিনে ৫০, রাতে ৪০ ডেসিবেল শব্দ মাত্রা থাকা উচিত৷
তবে পরিবেশ অধিদপ্তর জানায়, পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় ১২০ ডেসিবেলের চেয়ে বেশি মাত্রায় মাইক বাজানো হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর ক্ষমতাবলে শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬-এ বলা হয়েছে, ‘শব্দদূষণ সংক্রান্ত নীতিমালা লঙ্ঘন করলে, অনধিক এক মাস কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য ছয় মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে৷’
কিন্তু উচ্চস্বরে মাইক বাজানোর অভিযোগে কাউকে জরিমানা করতে দেখা যায়নি।
জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহবায়ক আব্দুন নূর নিউজবাংলাকে জানান, পৌর নির্বাচনকে ঘিরে পরিবেশ দূষণের কোনো অন্ত নেই। অলিতে-গলিতে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রে যে মাইক ব্যবহার করা হচ্ছে সেই শব্দের কোনো নির্দিষ্ট মাপ নির্ধারণ করে দেয়া হয়নি। এমনিতেও শব্দের মাত্রার যে সীমা রয়েছে তাও মানা হচ্ছে না।
এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা জিল্লুর রহমানের মোবাইলে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।