বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কেন্দ্রে ভোটার, ৮ প্রার্থীর বর্জন

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ১৭:০৯

চতুর্থ ধাপে সব পৌরসভাতেই ব্যাপক ভোটার উপস্থিতি দেখা গেছে। তাদের দেখা বেশির ভাগ ভোটকেন্দ্রে ছিল ভোটারদের লম্বা লাইন, আর পুরুষের তুলনায় নারী ভোটার সংখ্যা বেশি। তবে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনায় প্রাণ গেছে এক জনের। ভোট থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন আট প্রার্থী।

ভোটের আগের ধাপগুলোর চেয়ে চতুর্থ ধাপে ৫৫ পৌরসভায় ভোটার উপস্থিতি আরও বেড়েছে। কয়েকটি পৌরসভায় আট মেয়র প্রার্থীর ভোট বর্জন এবং বিচ্ছিন্ন কিছু সহিংসতা ছাড়া ফাল্গুন মাখা এই ধাপের ভোট ছিল উৎসবমুখর।

রোববার সকাল ৮টায় শুরু হওয়া ভোট শেষ হয় বিকেল ৪টায়। চতুর্থ ধাপে ২৯ পৌরসভায় ভোট হয়েছে ইভিএমে, বাকি ২৬ পৌরসভায় ব্যালট পেপারে।

ভোট শেষে শুরু হয়েছে গণনা, অপেক্ষা এখন ফলাফলের।

এই ধাপে সব পৌরসভাতেই ব্যাপক ভোটার উপস্থিতি দেখতে পেয়েছেন নিউজবাংলার প্রতিনিধিরা। তাদের দেখা বেশির ভাগ ভোটকেন্দ্রে ছিল ভোটারদের লম্বা লাইন, আর পুরুষের তুলনায় নারী ভোটারের সংখ্যা ছিল বেশি।

সিলেটের কানাইঘাটে ভোট ঘিরে তৈরি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ। সকালে কিছুটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে বাড়ে ভোটার উপস্থিতি। ভোট চলাকালে অনিয়মের কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

একই রকম দৃশ্য দেখা যায় হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে। সেখানে ইভিএমে ভোট হলেও কেউ কোনো সমস্যার কথা বলেনি। আর পুরুষ ভোটারের তুলনায় নারী ভোটারের সংখ্যা ছিল ঢের বেশি। আওয়ামী লীগ বা বিএনপির প্রার্থীসহ কেউ কোনো অভিযোগ তোলেননি।

শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট হয় রাজশাহীর নওহাটা, গোদাগাড়ী, তানোর ও তাহেরপুরে। চারটি পৌরসভার বেশির ভাগ কেন্দ্রেই দেখা যায় ভোটারদের লম্বা লাইন।

নওহাটার একটি কেন্দ্রের বাইরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হলেও ভোট প্রদান বিঘ্নিত হয়নি।

ময়মনসিংহের ফুলপুর ও ত্রিশালে ভোট হয় আমেজের সঙ্গে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে ভোটার। পৌরসভা দুটিতে কোনো সহিংসতা দেখা যায়নি।

কুমিল্লার দাউদকান্দি ও হোমনায় ভোট হয় ইভিএমে। সেখানেও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। ব্যাপক ভোটার উপস্থিতি ছিল, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দেয় তারা।

বাগেরহাট সদর পৌরসভায় সকালে ভোটার উপস্থিতি কিছু কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে। ভোটারদের লাইনে নারীদেরই বেশি দেখা যায়; কোনো অনিয়মের অভিযোগও উঠেনি।

যশোরের চৌগাছায় একজন কাউন্সিলর প্রার্থীর ভয়ভীতির অভিযোগ ছাড়া সার্বিক অবস্থা স্বাভাবিক ছিল। ভোটারদের উপস্থিতিও ব্যাপক। জেলার বাঘারপাড়া পৌরসভায় কোনো অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রের সামনেই দীর্ঘ লাইন।

জীবননগরে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী। ছবি: নিউজবাংলা

ভোট বর্জন

অনিয়ম, কারচুপি ও নৌকার প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ তুলে আটটি পৌরসভায় কয়েকজন মেয়র প্রার্থী ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর পৌরসভায় কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী শাহাজাহান কবির।

উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ে রোববার সকাল ১০টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে এই ঘোষণা দেন তিনি। বলেন, ‘প্রতিটা কেন্দ্রে জোরপূর্বক নৌকা প্রতীকে সিল মেরে নিতে দেখেছি। আওয়ামী লীগ ও প্রশাসন পরস্পরের সহযোগিতায় প্রহসনের নির্বাচনের আয়োজন করেছে। এ কারণে আমি প্রহসনের নির্বাচন বর্জন করছি।’

একই অভিযোগ তুলে ভোট থেকে সরে দাঁড়ান কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মো. এহেসান কুফিয়া।

ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন বরিশালের বানারীপাড়া পৌরসভার বিএনপির মেয়র প্রার্থী রিয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জিয়াউল হক মিন্টু।

কারচুপির অভিযোগ তুলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌরসভার ভোট বর্জন করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম খান।

অনিয়মের অভিযোগ তুলে ভোট থেকে সরে দাঁড়ান ঠাকুরগাঁওয়ে সদর পৌরসভার বিএনপির মেয়র প্রার্থী শরিফুল ইসলাম শরিফ।

জেলা বিএনপির কার্যালয়ে দুপুর ১২টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে আমাদের পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়ার বিষয়টি জানানো হলেও প্রশাসন ও নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করা ম্যাজিস্ট্রেটরা কোনো ব্যবস্থা নেননি। তারা নীরব ভূমিকা পালন করছেন।’

অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ এনে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ পৌরসভার ভোট বর্জন করেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইমাম হোসেন।

আওয়ামী লীগ প্রার্থীর লোকদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করেন বাগেরহাট পৌরসভার বিএনপির মেয়র প্রার্থী সাঈদ নিয়াজ হোসেন শৈবাল।

একই অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করেন নাটোরের বড়াইগ্রাম পৌরসভার বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইসাহাক আলী।

চট্টগ্রামে পটিয়ায় জাপার মেয়র প্রার্থী ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌরসভার ভোট বর্জন করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম খান।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, ভোটের সুষ্ঠু কোনো পরিবেশ নেই। নৌকার লোকজন জোর করে নৌকায় ভোট দিতে ভোটারদের বাধ্য করছে…।

চট্টগ্রামের পটিয়ার গোবিন্দরখীলে নির্বাচনি সহিংসতার সময় চায়ের দোকানে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। আগুন নেভানোর চেষ্টায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা

সংঘর্ষ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া

বেশ কয়েকটি পৌরসভায় কাউন্সিলর প্রার্থী পর্যায়ে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এতে একজনের প্রাণহানিসহ আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন।

চট্টগ্রামের পটিয়া পৌরসভা নির্বাচনে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে এক জন নিহত হয়েছেন। এ সময় কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। একটি দোকানে আগুন দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

পৌরসভার গোবিন্দরখীল এলাকায় দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আবদুল মাবুদ ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুল মান্নানের ছোট ভাই।

এ ঘটনায় আটক করা হয় ওয়ার্ডের দুই কাউন্সিলর প্রার্থী সরওয়ার কামাল রাজীব ও আবদুল মান্নানকে।

পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. সাদিয়া বলেন, নিহত আবদুল মাবুদের পেটে ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়।

পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম মজুমদার জানান, গোবিন্দরখীল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের সামনে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। পরবর্তী সময়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে এক জন গুলিবিদ্ধসহ তিন জন আহত হন। এ সময় একটি ককটেল বিস্ফোরণও করা হয়।

সংঘর্ষের কথা স্বীকার করলেও গুলিবিদ্ধের ঘটনা নাকচ করে দেন নোয়াখালীর পুলিশ সুপার (এসপি) আলমগীর হোসেন।

তিনি বলেন, ‘শুনেছি কেন্দ্রের বাইরে বিচ্ছিন্নভাবে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় কয়েকজন আহত হয়ে নোয়াখালী সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তবে গুলিবিদ্ধের ঘটনা ঘটেনি।’

টাঙ্গাইলের কালিহাতী পৌরসভার একটি কেন্দ্রে ভোট দেয়া নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পাঁচ জন আহত হন।

পৌরসভার হ‌রিপুর কেন্দ্রে রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে নিশ্চিত করেন কা‌লিহাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাওগাতুল আলম।

লালমনিরহাট সদর উপজেলায় ৩২ হাজারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে কাউন্সিলর প্রার্থী সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। ভোটারদের নৌকায় ভোট দিতে বাধ্য করা হয়।

আর গিয়াসউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় এক পুলিশ সদস্যের মাথা ফেটে যায়।

চতুর্থ ধাপে ৫৫টি পৌরসভায় মোট মেয়র প্রার্থী ২২৩ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২ হাজার ৯৯ এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ২৬৯ জন প্রার্থী রয়েছেন।

মোট ভোটার ১৭ লাখ ৬২৪। এর মধ্যে পুরুষ ৮ লাখ ৪৯ হাজার ৩৯৬ ও নারী ভোটার ৮ লাখ ৫১ হাজার ২২৭।

পঞ্চম ধাপে ৩১ পৌরসভায় ভোট হওয়ার কথা ২৮ ফেব্রুয়ারি। দেশের তিন শতাধিক পৌরসভার বাকিগুলোর ভোট হতে পারে আগামী ৭ এপ্রিল।

এ বিভাগের আরো খবর