কারচুপির অভিযোগ এনে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা পৌরসভায় ভোট বর্জন করেছেন বিএনপির প্রার্থী। অন্যদিকে ঠাকুরগাঁও পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থী শেষ পর্যন্ত ভোটে থাকার ঘোষণা দিয়ে আগাম ফল বর্জনের কথা জানিয়েছেন।
আলমডাঙ্গা পৌরসভায় প্রচার চলাকালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এক নেতা ভোটের আগের রাতে ভোটারদের ভয় দেখানোর পরামর্শ দিয়ে সমালোচিত হন। আর ঠাকুরগাঁও পৌরসভায় যারা নৌকায় ভোট দেবে না তাদের এলাকা ছেড়ে যাওয়ার হুমকি দিয়ে আওয়ামী মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় এক নেত্রী সংবাদের শিরোনাম হন।
দুই পৌরসভাতেই বিএনপির প্রার্থীদ্বয় অভিযোগ করেন, কেন্দ্র থেকে তাদের এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে।
ভোটে থাকলেও ফল মানবেন না ঠাকুরগাঁওয়ের প্রার্থী
প্রথমে কারচুপির অভিযোগ করেন ঠাকুরগাঁও সদরের প্রার্থী। তিনি বলেন, নির্বাচনের ফল মানবেন না।
জেলা বিএনপির কার্যালয়ে দুপুর ১২টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে মেয়র প্রার্থী শরিফুল ইসলাম শরিফ বলেন, ‘আওয়ামী সন্ত্রাসীরা পুরো এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে বাধা দিচ্ছে। মানুষ ভোট দেয়ার অপেক্ষায় থাকলেও সন্ত্রাসীরা ঘরে ঘরে গিয়ে হুমকি দিয়ে আসছে যাতে কেন্দ্রে না আসে। এরপরও কীভাবে ভোট সম্পন্ন হবে, তা নিয়ে আমার সংশয় আছে।’
তিনি বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে আমাদের পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়ার বিষয়টি জানানো হলেও প্রশাসন ও নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করা ম্যাজিস্ট্রেটরা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তারা নীরব ভূমিকা পালন করছেন।’
তাহলে ভোট থেকে সরে যাচ্ছেন, এমন প্রশ্নে বিএনপির প্রার্থী বলেন, ‘এই সরকার ও নির্বাচন কমিশন কোথাও সুষ্ঠু ভোট উপহার দিতে পারেনি। অবশ্যই আমরা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকব। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা শেষ পর্যন্ত কী করতে পারে তা দেখতে চাই।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আঞ্জুমান আরাকে কয়েকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
আর রিটার্নিং কর্মকর্তা জিলহাজ উদ্দিন বলেন, এ ধরনের কোনো অভিযোগ তার কাছে নেই।
সরে দাঁড়ালেন আলমডাঙ্গার প্রার্থী
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় বেলা একটার দিকে নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী মীর মহিউদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে প্রতিটি কেন্দ্রেই আমার এজেন্ট ছিল। ভোটও সুষ্ঠুভাবে গ্রহণ করা হচ্ছিল। বেলা ১২টার পর প্রতিটি কেন্দ্র থেকে আমার এজেন্টদের বের করে দেয় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা।
‘আমার পরিবারের সদস্যদেরও ভোট দিতে দেয়া হয়নি। তারা জোরপূর্বক ভোটারদের ভোট নিয়ে নিচ্ছে। বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হলেও কোনো কাজ হয়নি। এ কারণে আমি নির্বাচন বর্জন করছি।’
অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হাসান কাদির গনু বলেন, ‘আলমডাঙ্গায় সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে। কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা নেই। বিএনপির প্রার্থী মিথ্যা অভিযোগ করছেন। আসলে জনগণই তাকে বর্জন করেছে।’
পৌরসভার রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তারেক আহমেদ জানান, এজেন্ট বের করে দেয়ার বিষয়ে বিএনপির প্রার্থী কোনো অভিযোগ করেননি। তা ছাড়া নির্বাচনের পরিবেশ শান্ত আছে।
ভাইরাল হওয়া দুই ভিডিওতে যা ছিল
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় ৫ ফেব্রুয়ারি এক কর্মিসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হাসানের পক্ষে প্রচারে আসেন পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন। সেখানে তার দেয়া বক্তব্যের কিছু অংশ ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে।
আলমডাঙ্গা উপজেলা পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি দেলোয়ার হোসেন। ছবি: নিউজবাংলা
ওই ভিডিওতে দেলোয়ারকে বলতে শোনা যায়, ‘যারা বিএনপি বা জামায়াত করে তাদের ঘর থেকি বাইর হতি দেয়া যাবে না। তাদের বলতি হবে তুই হচ্চে রাজাকার, তুই হচ্চে জামাত। ঘর থেকি নড়বিনি। নড়লি খবর আচে। এমন করি যদি তাদের আটকানু যায়, তাইলি আমাদের ৫০০ ভোট তা থেকিই গেল।’
এর পরিপ্রেক্ষিতে পরে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হাসানকে শোকজও করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা তারেক আহমেদ। তার জবাব সন্তোষজনক হওয়ায় তাকে শোকজ থেকে অব্যাহতিও দেয়া হয়।
আর গত বৃহস্পতিবার ভাইরাল হয় আরেকটি ভিডিও। তাতে ঠাকুরগাঁও পৌরসভার মেয়র পদে আঞ্জুমান আরার পক্ষে ভোট চাইতে দেখা যায় কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক মাহমুদা বেগম কৃককে।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওর একটি অংশে কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম কৃক। ছবি: নিউজবাংলা
ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘সারা দেশে আজকে নৌকার জয়জয়কার, নৌকা ছাড়া কোনো কথা নাই…যাদের মনে ধানের শীষের সঙ্গে প্রেম আছে, তারা ১৩ তারিখ ঠাকুরগাঁও ছেড়ে চলে যাবেন।
‘তাদেরকে ১৩ তারিখ সন্ধ্যার পর দেখতে চাই না ঠাকুরগাঁও পৌরসভায়…তাদের মুখ দেখতে চাই না…তাদের ভোটকেন্দ্রে আসার প্রয়োজন নাই, ভোটকেন্দ্রে যাবেন শুধু নৌকা, নৌকা, নৌকা…।’
তবে রিটার্নিং কর্মকর্তা জিলহাজ উদ্দিন জানান, তিনি ওই ভিডিও দেখেননি; কোনো ব্যবস্থাও নেননি।