ঠাকুরগাঁওয়ে পৌর নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে ভোট না দিলে এলাকায় থাকতে না দেয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেত্রীর হুমকির ভিডিও ছড়িয়ে পড়লেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
সমালোচনার মধ্যে মুখে কুলুপ এটেছেন আওয়ামী লীগ নেত্রী। দলের প্রার্থী বলছেন, এই বক্তব্য এডিট করে ফেসবুকে ছাড়া হয়েছে। তবে তার দাবির পক্ষে জোরালো কোনো বক্তব্য দিতে পারেননি।
রিটার্নিং কর্মকর্তা বলছেন, তিনি কোনো অভিযোগ পাননি, ফলে ব্যবস্থাও নেয়া হয়নি।
রোববার দেশের ৫০টিরও বেশি পৌরসভার মধ্যে ভোট হবে হবে ঠাকুরগাঁওয়েও। বৃহস্পতিবার ভোটের প্রচারে আওয়ামী মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নেতা মাহমুদা বেগম একটি পথসভায় বক্তব্য রাখেন।
সেখানে তিনি বলেন, যারা নৌকায় ভোট দেবেন না, তারা যেন শনিবার ঠাকুরগাঁও ছেড়ে চলে যান। তিনি বলেন, ভোটকেন্দ্রে যাবেন শুধু নৌকার সমর্থকরা। অন্যদের তিনি কেন্দ্রে দেখতে চান না।
ভোটের আগের দিন কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে ভোটের সরঞ্জাম। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ নেত্রীর এই বক্তব্যে এলাকায় চলছে তীব্র সমালোচনা।
বিএনপির প্রার্থী রিটার্নিং কর্মকর্তা জিলহাজ উদ্দিনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি।
কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর সত্যতা তিনি পাননি।
নিউজবাংলাকে জিলহাজ বলেন, ‘আমরা বিএনপির প্রার্থীর কাছ থেকে একটি অভিযোগ পেয়েছি যে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, যারা নৌকায় ভোট দেবে না, তারা যেন ১৩ তারিখ পৌরসভা ছেড়ে চলে যান। কিন্তু আমি মাঠ পরিদর্শন করে দেখেছি এমন কোনো সূত্র আমি পাই নাই। যদি আমি পেয়ে থাকি তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
কিন্তু এই বক্তব্যের ভিডিও তো আছে- এমন মন্তব্যের জবাবে রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি এটা এখনও দেখি নাই। দেখব।’
বিএনপির প্রার্থী শরিফুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মাহমুদা বেগমসহ ওই দলের অন্য নেতারা তার কর্মীদের ভয় দেখাচ্ছেন। সাধারণ ভোটাররাও এতে শঙ্কিত।’
কী বলছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী
বক্তব্যের ব্যাখ্যা জানতে আওয়ামী লীগ নেত্রী মাহমুদা বেগমকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কল ধরেননি।
পরে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন পৌরসভায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী করেছে আঞ্জুমান আরা বেগম। তার দাবি, ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি বানোয়াট। এটি এডিট করে ছাড়া হয়েছে।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘পৌরসভায় ধানের শীষের ভোট তলানিতে ঠেকেছে। নিশ্চিত পরাজয় জেনে মাহমুদা আপার বক্তব্য এডিট করে বিএনপির লোকজন ছড়িয়ে দিতে পারে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা কোথাও এ ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন না।’
যা ছিল ওই ভিডিওতে
ঠাকুরগাঁও পৌরসভার মেয়র পদে আঞ্জুমান আরার পক্ষে ভোট চাইতে কয়েক দিন ধরেই এলাকায় আছেন মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাফিয়া খাতুন ও সম্পাদক মাহমুদা।
শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডে গেল বৃহস্পতিবার এক নির্বাচনি সভায় মাহমুদা ধানের শীষের সমর্থকদের এলাকা ছাড়ার হুমকি দিয়ে বক্তব্য দেন। তা ছড়িয়ে পরে ফেসবুকে।
ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘সারা দেশে আজকে নৌকার জয়জয়কার, নৌকা ছাড়া কোনো কথা নাই…যাদের মনে ধানের শীষের সঙ্গে প্রেম আছে, তারা ১৩ তারিখ ঠাকুরগাঁও ছেড়ে চলে যাবেন, তাদেরকে ১৩ তারিখ সন্ধ্যার পর দেখতে চাই না ঠাকুরগাঁও পৌরসভায়…তাদের মুখ দেখতে চাই না…তাদের ভোটকেন্দ্রে আসার প্রয়োজন নাই, ভোটকেন্দ্রে যাবেন শুধু নৌকা, নৌকা, নৌকা…।’
এর আগের দিন আরেক পথসভায় মাহমুদা বলেন, ‘সুস্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, যারা নৌকায় ভোট দিতে না চান, ১৩ তারিখ সন্ধ্যার পরে আপনাদের চেহারা এলাকায় দেখতে চাই না… কোথায় যাবেন আমি জানি না। তবে ঠাকুরগাঁওয়ে থাকতে পারবেন না।’
নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘…খাইদাই আমি জব্বারের, গান সালামেরটা গাইব না… কালকে থেকে রাস্তায় কোনো ধানের শীষের পোস্টার আমরা দেখতে চাই না।
‘ধান বলে কোনো কথা নাই। ধানের শীষ বলে কোনো কথা নাই। আমরা শুধু দেখতে চাই নৌকা আর নৌকা। যদি ধান থাকে, তবে ধরে নেব এখানে আওয়ামী লীগ নাই।’
এসব বক্তব্যের বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে মাহমুদা বেগমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া মেলেনি।
চতুর্থ ধাপে রোববার এই পৌরসভায় হবে ভোট। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাশাপাশি মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আনোয়ার হোসেনও।
এর আগে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় আওয়ামী লীগের এক নেতার আগের রাতে ভোট দেয়ার কৌশল শেখানোর ভিডিও ভাইরাল হয়।
গত সপ্তাহে আলমডাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেনকে ওই ভিডিওতে বলতে শোনা যায়, ‘গলির মদ্যি জামাত-বিএনপি... ভোটের আগের রাত্রি গলির মদ্যি বুলে আসতি হবে…তুই বাড়ির মদ্যিতি নড়বিনে। নড়লি তোর খবর আছে…ভোট করার কায়দা আছে... ভোট আগে থাকতি কইরে ফেলতি হবে। স্যান্টারে যায়ে ভোট হবে না।’
এরপর সেখানকার রিটার্নিং ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তারেক আহমেদ পৌরসভা নির্বাচনের বিধিমালা লঙ্ঘন করেছেন জানিয়ে আলমডাঙ্গার মেয়র প্রার্থী আওয়ামী লীগের হাসান কাদিরকে শোকজ করেন।
তারেক বলেন, তার জবাব সন্তোষজনক হওয়ায় তাকে শোকজ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে তাকে এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতেও সতর্ক করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।