চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় আওয়ামী লীগের এক নেতার ‘আগের রাতে ভোট দেয়ার কৌশল শেখানোর’ ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় তোপের মুখে পড়েছেন দলটির মেয়র প্রার্থী হাসান কাদির। তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তারেক আহমেদ বুধবার রাতে তাকে এই নোটিশ করেন। জবাব দিতে বলা হয়েছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে।
আলমডাঙ্গা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়ে গত শুক্রবার একটি কর্মিসভার আয়োজন করেন মেয়র প্রার্থী হাসান। সেখানে আলমডাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেনের বক্তব্যের ১ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডের ভিডিও ক্লিপ মঙ্গলবার ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে।
ওই ভিডিওতে দেলোয়ারকে বলতে শোনা যায়, ‘যারা বিএনপি বা জামায়াত করে তাদের ঘর থেকি বাইর হতি দেয়া যাবে না। তাদের বলতি হবে তুই হচ্চে রাজাকার, তুই হচ্চে জামাত। ঘর থেকি নড়বিনি। নড়লি খবর আচে। এমন করি যদি তাদের আটকানু যায়, তাইলি আমাদের ৫০০ ভোট তা থেকিই গেল।’
রিটার্নিং কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। ওই ধরনের সভা-সমাবেশের আয়োজন করায় পৌরসভা নির্বাচনের বিধিমালা লঙ্ঘন করেছে তারা। যেহেতু সভায় মেয়র প্রার্থী হাসান কাদির উপস্থিত ছিলেন, তাই এ বিষয়ে আইন অনুযায়ী তার কাছেই ব্যাখা চাওয়া হয়েছে।’
নোটিশে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচনকালীন এ ধরনের সভা-সমাবেশ আয়োজন পৌরসভা (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা ২০১৫–এর স্পষ্ট লঙ্ঘনের শামিল। নির্বাচনকালীন আপনার উপস্থিতি এবং নির্বাচন নিয়ে এ ধরনের ন্যক্কারজনক বক্তব্য, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও ভিডিও ক্লিপের বিষয় ১১ ফেব্রুয়ারি অফিস চলাকালীন সময়ের মধ্যে লিখিত ব্যাখ্যা প্রদান করতে বলা হলো। অন্যথায় আপনার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত নোটিশের জবাব পাওয়া যায়নি বলেও জানান তারেক আহমেদ।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হাসান কাদিরের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
পৌরসভার বিএনপির প্রার্থী মীর মহিউদ্দিন ও স্বতন্ত্র সবেদ আলী মুঠোফোনে নিউজবাংলাকে জানান, তারা প্রশাসনের ওপর আস্থা রেখেছেন।
মহিউদ্দিন বলেন, ‘প্রশাসন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। আশ্বস্ত করেছে সুষ্ঠু নির্বাচন করবে, তাই আমি অভিযোগ দিইনি।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী সবেদ জেলা জাসদের সভাপতি। তবে তিনি দলীয়ভাবে ভোটে না দাঁড়িয়ে নির্বাচন করছেন নির্দলীয় প্রার্থী হিসেবে। তিনি বলেন, ‘আমার মাঠ শক্ত আছে, এসব ভিডিও ভাইরাল বা জোর করে ভোট নেয়ার কোনো সুযোগ আমি দেব না।’
আগামী রোববার আলমডাঙ্গা পৌরসভায় হবে ভোট।
ভিডিওতে যা বলেছিলেন দেলোয়ার
সেই কর্মিসভায় নেতা-কর্মীদের দেলোয়ার হোসেন বলেন, ভোট করে ফেলতে হবে কেন্দ্রে আসার আগেই।
তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে পরিশ্রম করছি কিসির জন্যি? ভোটের জন্যি। এই ভোটগুলো কীভাবে বাড়ির কাছে আটকে দেব? গলির মদ্যি জামাত-বিএনপি।
‘টুক করে ভোটের আগের রাত্রি গলির মদ্যি বুলে আসতি হবে…তুই বাড়ির মদ্যিতি নড়বিনে। নড়লি তোর খবর আছে…ভোট করার কায়দা আছে, অনেক কায়দা আছে। ভোট আগে থাকতি কইরে ফেলতি হবে। সেন্টারে যায়ে ভোট হবে না।’
ভাইরাল হওয়া ভিডিওর ব্যাপারে জানতে চাইলে দেলোয়ার দাবি করেন, তিনি ওই কথাগুলো বলেননি। ষড়যন্ত্র করে কেউ তার বক্তব্য পাল্টে দিয়েছে।