বান্দরবান পৌরসভা নির্বাচন ঘিরে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের লেমিনেট করা (প্লাস্টিকে মোড়ানো) পোস্টারে ছেয়ে গেছে এলাকা। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হলেও, প্লাস্টিকের ব্যবহার করছেন তারা। বান্দরবান শহর পরিণত হয়েছে লেমিনেট করা পোস্টারের শহরে।
কাগজের পোস্টার টেকসই করার লক্ষ্যে লেমিনেট করার প্রতিযোগিতা চলছে। প্রার্থীদের কাছে পরিবেশ দূষণকারী পণ্যটিই হয়ে উঠেছে প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার। পরিবেশ দূষণ ঘটিয়েই তারা আধুনিক, উন্নত ও সুন্দর শহর গড়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
বান্দরবান পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে সরেজমিনে দেখা গেছে, বেশির ভাগ পোস্টারই লেমিনেট করা। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে জানা গেছে, আশপাশের সব ওয়ার্ডেও একই অবস্থা।
নির্বাচনি আইনে পোস্টার ব্যবহার-সংক্রান্ত বিধি ও পলিথিন ব্যবহার সংক্রান্ত আইনে স্পষ্ট ব্যাখ্যা না থাকার সুযোগ নিচ্ছেন প্রার্থীরা। কুয়াশা, আর্দ্রতা কিংবা ধুলাবালি বা অন্য যেকোনো কারণে পোস্টার নষ্ট হতে পারে—এই অজুহাতে প্রায় সব নির্বাচনি পোস্টার লেমিনেট করা হয়েছে। এসব পলিথিন দীর্ঘদিন রয়ে যাবে। আবার পোড়ালেও বায়ু দূষণ হবে।
অপচনশীল এসব পলিথিন নদী, পুকুর, জলাশয়ের তলদেশে জমা হয়ে পরিবেশ-প্রতিবেশের ক্ষতি করবে। মাটি, পানি ও বাতাস—তিন স্তরেই প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। অপচনশীল বলে এরা মাটির উর্বরতা শক্তি মারাত্মকভাবে নষ্ট করে। পলিথিন নালা-নর্দমা থেকে শুরু করে নদ-নদী সব স্তরেই পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত করে। পুড়িয়ে ফেললেও বাতাস দূষিত হয়।
পরিবেশবিদদের মতে, পোস্টার লেমিনেট করা উচিত হয়নি। একদিকে এই প্লাস্টিক নষ্ট হবে না, অন্যদিকে একে পুনরায় ব্যবহার করারও সুযোগ নেই। বছরের পর বছর ডাম্পিং গ্রাউন্ডে পড়ে থেকে পরিবেশের ক্ষতি করা ছাড়া এগুলোর আর কোনো কাজ নেই।
চতুর্থ ধাপে ১৪ ফেব্রুয়ারি বান্দরবান পৌরসভা নির্বাচনে ভোট। মেয়র পদে পাঁচ জন ছাড়াও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৯ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৭ জন লড়ছেন। প্রথমবারের মতো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট হবে এখানে।
এদিকে মেয়র প্রার্থী থেকে শুরু করে কাউন্সিলর প্রার্থী সবাই রাতদিন প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পোস্টারের পাশাপাশি বাড়ি-বাড়ি গিয়ে প্রার্থীরা ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা করছেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ ইসলাম বেবি নিউজবাংলাকে বলেন, তিনি মোট ৮ হাজার পোস্টার লেমিনেট করেছেন।
বিএনপির মেয়র প্রার্থী মো. জাভেদ রেজা বলেন, ‘এবারে পৌর নির্বাচনে আমি ৮ হাজার কপি পোস্টার ছাপিয়েছি। তার মধ্যে ৪ হাজার লেমিনেট করেছি। ’
স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী বিধান লালা বলেন, তিনি এ পর্যন্ত ৬ হাজার পোস্টার লেমিনেট করিয়েছেন।
এ বিষয়ে জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অংচমং মার্মা জানান, প্লাস্টিকের যাবতীয় জিনিস পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। প্রার্থীদের প্লাস্টিক মোড়ানো পোস্টার আইনগতভাবে নিষিদ্ধ করা দরকার। শিগগির লেমিনেট করা সব পোস্টার নামিয়ে নেয়া হোক। প্রার্থীরা যেন নতুন করে আর কোনো পোস্টার প্লাস্টিকে না মোড়ান।
পরিবেশ অধিদপ্তরের (জুনিয়র কেমিস্ট) আব্দুস সালাম জানিয়েছেন, ‘প্রার্থীদের প্লাস্টিকে মোড়ানো (লেমিনেট করা) ক্ষতিকর কিনা এই মুর্হূতে সঠিক বলতে পারছি না। কারণ আমাদের এখানে ল্যাব টেস্ট করার মতো মেশিন নাই। তবে আপনাদের পত্রিকার সংবাদ প্রকাশ হলে বিভাগীয় বরাবর চিঠি পাঠাব যাতে এটি টেস্ট করে দেখা হয়।’
পরান্টু চাকমা সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসার পৌর নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং অফিসার। তিনি জানান, বান্দরবান সদর উপজেলা নির্বাচন কমিশন অফিস এ বিষয়ে প্রার্থীদের সতর্ক করেছে।
জেলা নির্বাচন কমিশন অফিস থেকে জানানো হয়েছে, পৌর নির্বাচনে যেকোনো সমস্যা দেখার জন্য তিন জন ম্যাজিস্ট্রেটকে সাময়িকভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা হলেন নেজারত ডেপুটি কালেক্টর , ব্যবসা ও বাণিজ্য শাখার জাকির হোসাইন, ট্রেজারি শাখা ও স্থানীয় সরকার শাখার সিমন সরকার, রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর, জেলা প্রশাসকের গোপনীয় শাখার মো. কায়েসুর রহমান।
মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের লেমিনেট করা পোস্টারে সবুজ পাহাড় ছেয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ম্যাজিস্ট্রেট সিমন সরকার বলেন, ‘লেমিনেট করা পোস্টার ছাপানোর কোনো নিয়ম নাই। আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি। এ ছাড়া আমরা আচরণবিধিমালা ২০১৫-এর-২১-এর-২ ধারা লঙ্ঘন করায় ৩১ বিধি অনুযায়ী মো. মিজানকে ৩ হাজার এবং হারুনকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছি। তপন দত্তকে গণপরিবহনে নির্বাচনি পোস্টার ব্যবহার করায় ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’