ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌরসভার অলিতে-গলি, সড়ক, পাড়া-মহল্লায় মুখর হয়ে উঠেছে প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারে।
মেয়র পদে বিএনপির একক প্রার্থী থাকলেও দলীয় কোন্দল প্রকট। আর আওয়ামী লীগে তিন জন বিদ্রোহী ছিলেন; তাদের মধ্যে একজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। দুই জন এখনও প্রচারের মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন।
মেয়র পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন চার জন। তাদের মধ্যে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান মেয়র ও উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক তাকজিল খলিফা কাজল। বর্তমানে বিদ্রোহী রয়েছেন সাবেক পৌর মেয়র মো. নুরুল হক ভূঁইয়া ও যুবলীগ নেতা মো. শফিকুল ইসলাম।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. মোবারক হোসেন রতন বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার কথা থাকলেও তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন।
বিদ্রোহীদের বাগে আনতে ২৪ জানুয়ারি উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে সভা ডাকা হয়। কিন্তু সভায় বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুল হক ভূঁইয়া ও মোবারক হোসেন রতন আসেননি, তবে যুবলীগ নেতা মো. শফিকুল ইসলাম এসেছিলেন।
সভায় সিদ্ধান্ত হয় ওই দুই জনকে প্রত্যাহারের জন্য দলীয়ভাবে চিঠি দেওয়া হবে। এরপরও যদি তারা নির্বাচন থেকে সরে না দাঁড়ান, তাহলে দলীয় বিধি মোতাবেক তাদের দল থেকে বহিষ্কারের জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে সুপারিশ করা হবে।
এদিকে হঠাৎ করেই বিদ্রোহী প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মোবারক হোসেন রতন। ২৬ জানুয়ারি বিকেলে তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
বিএনপির একক প্রার্থী জয়নাল মো. জয়নাল আবেদিন আব্দু। তিনি প্রচার চালাচ্ছেন। তবে আখাউড়া পৌর কমিটিকে ঘিরে দলীয় কোন্দল দেখা দিয়েছে। ১৩ জানুয়ারি পৌর আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা হয়। কমিটিকে ঘিরে ২৩ জানুয়ারির মধ্যে ১১ জন সদস্য কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আখাউড়া পৌর কমিটিতে সেলিম ভূঁইয়া আহ্বায়ক ও আক্তার খান সদস্যসচিব হওয়ায় দলের নেতা-কর্মীরা পদত্যাগ করছেন। সেলিম ভূঁইয়া সদর উপজেলার বরিশল গ্রামের বাসিন্দা ও সদর উপজেলার বাসুদেব ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং আক্তার খান শ্রমিক নেতা।
পদত্যাগকারী একাধিক নেতা বলেন, ‘কারও সঙ্গে আলোচনা না করেই, অন্য উপজেলার লোককে আহ্বায়ক করা হয়েছে। আমরা তার নেতৃত্বে থাকব না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিএনপির রাজনীতিকে ঘরে ঢুকিয়ে ফেলা হচ্ছে। এভাবে রাজনীতি করা সম্ভব না।’
এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সদর উপজেলার বাসিন্দা আখাউড়া পৌর সভার বর্তমান মেয়র তাকজিল খলিফা কাজল। যদি সে সদর উপজেলার বাসিন্দা হয়ে পৌরসভার মেয়র হতে পারে, তাহলে সেলিম কেন হতে পারবে না। যারা পদত্যাগ করছেন, তারা পৌরসভার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করবেন।’
পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা পর পরই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা প্রচার শুরু করেন। তবে নীরব রয়েছে উপজেলা জাতীয় পার্টি। কারণ মেয়র বা কাউন্সিলর পদে প্রার্থীই খুঁজে পাচ্ছিল না দলটি।
এক প্রশ্নের জবাবে জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক রেজাউল হক ভূঁইয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কসবা ও আখাউড়া পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র প্রার্থিতা বাছাইয়ের জন্য কসবা উপজেলা জাতীয় পার্টির সাবেক আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আদেলের ছেলে তারেক আদেলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কেন সে মেয়র প্রার্থী বাছাই করেনি তা আমি জানি না।’
তিনি আরও জানান, দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তাকজিল খলিফা কাজলকে কোনো রকম সমর্থন দেওয়া হয়নি। তবে উপজেলার তৃণমূল নেতা-কর্মীরা তাকে সমর্থন দিলেও দিতে পারেন। আর এখনকার নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েও তো কোনো লাভ নেই, নির্বাচন এখন এক তরফা।
৯টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৫ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৯ জন প্রর্থী রয়েছেন।
এ পৌরসভায় ১৪ ফেব্রুয়ারি ভোট। মোট ভোটার ২৮ হাজার ৯১০ জন। পুরুষ ১৪ হাজার ২৩১ ও নারী ১৪ হাজার ৬৭৯ জন।