বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সব লিঙ্গের জন্য কাজ করবেন তৃতীয় লিঙ্গের দিথী

  •    
  • ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ২৩:০৮

নির্বাচনে দিথী খাতুনের প্রতীক ছিল আংটি। তিনি দুই হাজার ৭৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হাসিনা আক্তার পান এক হাজার ১৮৩ ভোট।

মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতেই সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন তৃতীয় লিঙ্গের দিথী খাতুন। পৌরবাসীও বাড়িয়ে দিয়েছেন তাদের ভালোবাসার হাত। আর এতে জিতেছেনও তিনি।

শপথ নিয়েছেন, একটা স্বচ্ছ ও জবাবদিহি ব্যবস্থা গড়ে তুলে কাজ করবেন পৌরবাসীর জন্য। বিলিয়ে দেবেন সরকারের কাছ থেকে পাওয়া সব অনুদান।

দিথী পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ড থেকে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে লড়েছেন অন্যদের সঙ্গে। তৃতীয় দফায় দেশের ৬২ পৌরসভায় যে নির্বাচন হয়েছে গত ৩০ জানুয়ারি সেখানে তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছে।

তার বিজয়ে খুশি এলাকার নারী-পুরুষসহ পৌরসভার সব বয়সী মানুষ। যারা জানতেনও না তার নাম, এই কয়েকদিনে তাকে চিনেছেন সবাই। ছড়িয়ে পড়েছে তার নাম।

নির্বাচনে দিথী খাতুনের প্রতীক ছিল আংটি। তিনি দুই হাজার ৭৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হাসিনা আক্তার পান এক হাজার ১৮৩ ভোট।

পরিবার থেকে বের হয়ে দিথী খাতুন বাড়ি করেন কলারোয়ায়

দিথী এবারই প্রথম নির্বাচনে অংশ নেননি। এর আগে ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। সেই নির্বাচনে না জিতলেও সবাইকে অবাক করে দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন ভোটের হিসাবে।

এবার দিথীর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আনারস প্রতীকে মোছা. শাহানাজ খাতুন, চশমা প্রতীকে রূপা খাতুন, জবাফুল প্রতীকে হাসিনা আক্তার ও টেলিফোন প্রতীকে জাহানারা খাতুন।

দিথীর জয়ে উল্লাস প্রকাশ করে ওই সম্প্রদায়ের নূপুর খাতুন বলেন, ‘দিথী আমাদের গুরু মা। সবাই তাকে ভোটে দাঁড় করাই দিয়েছে। এটা আমাদের জন্যি না হলিয়ো গরীপ-দুখী মানুষির জন্যি তিনি পাশ করিছেন। এতে আমরা খুশি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হাজার হাজার সালাম। তিনি আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছেন।’

একই এলাকার অশীতিপর মরিয়ম বেগম বলেন, ‘দিথী খালা মা পাশ কুরাতে আমরা খুশি হইছি। আমাগির মতন গরীপ মানুষির দুকখু কষ্টগুলো সে দ্যাকপে এটাই আশা করি।’

দিথী খাতুন জানান, তার আশা ছিল এবার জিতবেন। তিনি চান তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সমাজের মূল ধারায় চলে আসা। আর এ জন্য জনপ্রতিনিধিত্ব দরকার বলে মনে করেন তিনি।

দিথী খাতুন জানান, তার পৈত্রিক নিবাস যশোর সিটি কলেজ এলাকায়। বাবার নাম আব্দুল হামিদ মিয়া এবং মায়ের নাম কুলসুম বেগম। তারা তিন ভাই ও এক বোন। তিনি সবার ছোট।

দিথী বলেন, ‘পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়ার পর পরিবার ছেড়ে চলে আসি সাতক্ষীরার কলারোয়ায়। এখানেই গোত্রের অন্যদের সঙ্গে তার চলাফেরা। কলারোয়া পৌরসভার মির্জাপুরে ৮ শতক জমি কিনে বাড়ি তৈরি করে এখানেই থাকতে শুরু করি।’

তৃতীয় লিঙ্গের হলেও দিথী জনপ্রিয় ওই এলাকায়। স্থানীয়রা ভালোবেসে কেউ ডাকেন খালা মা, কেউ ডাকেন নানি আপা। ছোট্ট শিশুরাও তাকে সম্মান, শ্রদ্ধা ও ভক্তি করে।

দিথী খাতুন জানান, সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষ যাতে এগিয়ে যেতে পারে সে জন্য কাজ করবেন তিনি। ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, সম্প্রদায়, নারী, পুরুষ নির্বিশেষে সব মানুষের জন্য তিনি সেবামূলক কাজ করবেন। যেখানে থাকবে না হিংসা, হানাহানি, বিভেদ।

তিনি বলেন, ‘বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, শিশু শিক্ষা, নারী ও শিশু অধিকার, পানি সমস্যা, রাস্তা-ঘাট সংস্কারসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করতে চাই। আর এগুলো করব স্বচ্ছতার সঙ্গে। কোনো প্রকার অন্যায় ও দুর্নীতি মেনে নেব না।’

এই কাজ তিনি একা করতে পারবেন না, এজন্য সব স্তরের মানুষের সহযোগিতা দরকার বলেও জানান।

তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আধুনিক পৌরসভা গড়ার অঙ্গীকার করেন তিনি।

এ বিভাগের আরো খবর