তৃতীয় ধাপের পৌর নির্বাচনে ভোটের হার আরও বাড়ল। নির্বাচন কমিশনের হিসাবে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৭০ জন ভোটার কেন্দ্রে গিয়েছেন।
শনিবার এই ভোট হয় ৬২টি পৌরসভায়। এর আগে গত ২৮ ডিসেম্বর প্রথম দফায় ৬৫ শতাংশ এবং ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফায় ৬২ শতাংশ ভোট পড়ার কথা জানিয়েছিল নির্বাচন কমিশন।
ব্যালটে ভোট বেশি পড়ার চিত্র দেখা গেছে দ্বিতীয় ধাপের পৌর নির্বাচনেও। সেই ধাপে ইভিএমের কেন্দ্রে ভোটের গড় হার ছিল ৫৭ শতাংশ। আর ব্যালটের ক্ষেত্রে তা ছিল ৬৭ শতাংশ।
প্রথম দফায় ২৪টি পৌরসভার সবগুলোতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে আর ১৬ ডিসেম্বর ৬০ পৌরসভার অর্ধেকে ইভিএমে ও বাকিগুলোতে ব্যালটে ভোট হয়। তৃতীয় দফায় সবগুলো পৌরসভা ভোট হয়েছে ব্যালটে।
গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন নির্বাচনে যে ভোটারের খরা দেখা যাচ্ছে, সেই চিত্র অনেকটাই পাল্টাতে শুরু করেছে পৌর নির্বাচনে। বিভিন্ন এলাকাতেই কেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ সারি দেখা যাচ্ছে। তবে কোথাও কোথাও সহিংসতা, সংঘর্ষ, জাল ভোটের ঘটনাও ঘটছে। তবে বিরোধী পক্ষের একাধিক প্রার্থী আবার ভোটকে সুষ্ঠু বলেছেন, এমন ঘটনাও ঘটেছে।
সিলেটের গোলাপগঞ্জ পৌরসভায় একটি কেন্দ্রের সামনে নারীদের দীর্ঘ লাইন
প্রথম দুই ধাপের তুলনায় তৃতীয় ধাপে বিভিন্ন নির্বাচনি এলাকায় গোলযোগ যেমন বেশি দেখা গেছে, তেমনি একটি বড় অংশ ভোটারের দীর্ঘ লাইনও দেখা গেছে।
বিতর্কহীন ভোট যেমন দেখা গেছে, তেমনি ফেনী পৌরসভায় একটি বিস্ময়কর ঘটনাও ঘটেছে। সেখানে নয়টি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির একটি ভোটও না পাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
এই ৬২ পৌরসভায় সবচেয়ে বেশি জিতেছে আওয়ামী লীগ, ৪৫টিতে। বিএনপি জিতেছে তিনটিতে। আর স্বতন্ত্র হিসেবে লড়া প্রার্থীরা জিতেছেন ১৪টিতে, যাদের মধ্যে একজন ছাড়া বাকি সবাই আওয়ামী লীগ নেতা। তারা দলের মনোনয়ন না পেয়ে প্রার্থী হয়েছেন। আর সেই একজন কোনো দল না করলেও তার ভাই আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য।
জামালপুরের সরিষাবাড়ী পৌরসভায় ভোট দিতে আসা আছিয়া বেগম। ছবি: সাইমুম সাব্বির শোভন
গত দুই ধাপের পৌর নির্বাচনে অভাবনীয় এক চিত্র দেখা গেছে। বিতর্ক এড়াতে ভোটের সকালে কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে ব্যালট।
রোববার দুপুরে নির্বাচন কমিশন জানায়, এবার ৬২ পৌরসভায় ভোট পড়েছে ৭০. ৪২ শতাংশ।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে নওগাঁর ধামইরহাটে। সেখানে ভোট পড়েছে ৯২.১৪ শতাংশ। আর সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে মৌলভীবাজার পৌরসভায়। ৪১.৮৭ ভোটার সেখানে কেন্দ্রে গিয়ে রায় দিয়েছেন।
তৃতীয় ধাপে চূড়ান্ত লড়াইয়ে মোট তিন হাজার ৩৪৪ জন প্রার্থী অংশ নেন।
এর মধ্যে মেয়র পদে ২২৯ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭৫৫ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২ হাজার ৩৬০ জন।
তৃতীয় ধাপে ৬৪ পৌরসভায় ভোটের জন্য তফসিল হলেও ভোট হয়নি ময়মনসিংহের ত্রিশাল ও কুমিল্লার লাকসামে পৌরসভায়।
ত্রিশালে এক মেয়র প্রার্থীর মৃত্যু হওয়ায় সেখানে ভোট হবে ১৪ ফেব্রুয়ারি। আর কুমিল্লার লাকসাম পৌরসভায় মেয়র, সারাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে সবাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে একটি ভোটকেন্দ্রের সামনে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়
ইসির তথ্য অনুযায়ী, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া, কুমিল্লার লাকসাম ও বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ পৌরসভায় মেয়র পদে একক প্রার্থী থাকায় তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
এ ধাপে মোট ৩৭ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে তিন জন মেয়র ছাড়াও আছেন ৯ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ও ২৫ জন সাধারণ কাউন্সিলর।
দ্বিতীয় ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর একক প্রার্থী হওয়ায় মেয়র পদে চার জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১১ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
এখন পর্যন্ত পাঁচ ধাপে পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে ইসি।
চতুর্থ ধাপে ৫৭ পৌরসভায় ভোট হবে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি এবং পঞ্চম ধাপে ৩১ পৌরসভায় ভোট হবে ২৮ ফেব্রুয়ারি।