কিশোরগঞ্জে স্থগিত ভোটকেন্দ্রে বিএনপির জন্য অভাবনীয় কিছু হয়নি। আগে থেকে এগিয়ে থাকা আওয়ামী লীগ এই কেন্দ্রটিতেও জিতে গেল আওয়ামী লীগ। টানা দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র হলেন নৌকা মার্কার পারভেজ মিয়া।
শনিবার শহরের নিউটাউন এলাকায় ওয়ালীনেওয়াজ খান কলেজে ২০ নং কেন্দ্রে পারভেজ মিয়ার নৌকার পক্ষে ভোট পড়ে ৯০২টি। অন্যদিকে বিএনপির ইসরাইল মিঞা পান ৫১৬ ভোট। দুই জনের ব্যবধান ৩৮৬।
ফলাফল উল্টো হলেও এখানে জিততেন পারভেজ মিয়াই। কারণ গত ১৬ জানুয়ারি পৌরসভার ২৭টি কেন্দ্রে তিনি এগিয়ে ছিলেন ৪৮৪ ভোটে।
সেদিন অন্য সব কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ ভোট হলেও কলেজের ২০ নম্বর কেন্দ্রে দুই দল ভোটারের মধ্যে তর্কাতর্কি ও হাতাহাতি হয়। পরে সেখানে ভোট স্থগিত করে দেয় প্রশাসন।
এটি জিতে আওয়ামী লীগ পৌরসভায় জয় পেল মোট ৮৭০ ভোটে। ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো ভোটে দাঁড়িয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা পারভেজ জিয়া বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছিলেন। তবে এবার তাকে কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে হলো।
কিশোরগঞ্জে ১৬ জানুয়ারি স্থগিত হয়ে যাওয়া কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ব্যাপক। আগে থেকে এগিয়ে থাকা আওয়ামী লীগ জিতে নিল এই কেন্দ্রটিও
কিশোরগঞ্জের সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সাল থেকে টানা বড় ব্যবধানে জয় পেয়ে আসলেও পৌরসভার পরিস্থিতি ভিন্ন। সংসদ নির্বাচনে নানা সময় পৌর এলাকায় নানা সময় বিএনপি বেশি ভোট পেয়ে থাকে। তবে ইউনিয়ন পর্যায়ে বড় ব্যবধানে জিতে যাওয়ায় ফল যায় নৌকার পক্ষে।
১৬ জানুয়ারি যে কেন্দ্রটিতে ভোট স্থগিত হয়, সেই কলেজে অন্য একটি কেন্দ্রে বিএনপি ২১৪ ভোট বেশি পেয়েছিল। সেখানে ভোট পড়েছিল ৫২ শতাংশ। আর সামগ্রিকভাবে ভোট পড়েছিল ৬২ শতাংশ।
বিএনপির জন্য সমীকরণটি ছিল এমন।
- আরও পড়ুন: কিশোরগঞ্জে এখনও জিততে পারে বিএনপি
স্থগিত কেন্দ্রে যদি ৫২ শতাংশ ভোট পড়ত তাহলে ভোট পড়বে ৯৬৪টি। এর মধ্যে ধানের শীষে পড়তে হবে ৭২৫টি। আর নৌকায় পড়তে হবে ২৩৯ ভোট। নৌকায় তখন ২৪০টি ভোট পড়লে ফলাফল হবে সমান। আর নৌকায় ২৪১টি পড়লে এক ভোটে জিতবে আওয়ামী লীগ।
আবার যদি ৬২ শতাংশ ভোট পড়ত, তাহলে সেখানে মোট ভোট হবে এক হাজার ১৮৪টি। তখন যদি নৌকায় ৩৩৪ ভোট পায়, তাহলেই আওয়ামী লীগের জয় হবে। এই পরিমাণ ভোট হলে বিএনপিকে পেতে হবে ৮১৭ ভোট। আর নৌকায় পড়তে হবে ৩৩১ ভোট।
এই সমীকরণকে সামনে দুই সপ্তাহ পর এই ভোটকে ঘিরে নির্বাচনী এলাকায় ছিল টান টান উত্তেজনা। দুই পক্ষই এলাকায় বিভিন্ন দল গঠন করে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে প্রচার চালিয়েছে।
এই প্রচারের পর ভোটাররা সেদিনের তুলনায় আজকের ভোটার উপস্থিতি ছিল অনেক বেশি। এক হাজার ৮৫২ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দেন এক হাজার ৪৯১ জন। ভোটার উপস্থিতি ৮০ শতাংশ।
বিজয়ী প্রার্থী পারভেজ মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে। জনগণ স্বতঃস্ফুর্তভাবে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। এজন্য পৌরবাসীকে আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাই।’
তবে বিএনপির প্রার্থী ইসরাইল মিঞা ১৬ জানুয়ারির ভোটের আগে বা পরে কারচুপির অভিযোগ না আনলেও এবার তুলেছেন সে অভিযোগ। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের শুরু থেকেই পারভেজ মিয়ার লোকজন বিভিন্ন মাধ্যমে আমাকেসহ আমার কর্মীদেরকে হয়রানি করে করে আসছে। আমি নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত দেখার জন্য মুখ বুঝে সকল অভিযোগ বুকে চাপা দিয়ে রেখেছি। গত ১৬ জানুয়ারি নির্বাচনের পর থেকেই আমার কর্মীরা ঠিকমত নিজের ঘরে ঘুমাতে পারেনি।’
তিনি বলেন, ‘১৬ তারিখে ২৭ টি কেন্দ্রে নির্বাচনও সুষ্ঠু হয়নি। যদি অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতো, তবে আমি পারভেজ মিয়ার চেয়ে ১০ হাজার ভোট বেশি পেতাম।’