পৌরসভা নির্বাচনের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের তুলনায় এবার ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কম। আবার প্রথম দুই ধাপের তুলনায় সহিংসতাও বেশি।
শনিবার ভোট হওয়ার কথা ছিল ৬৪ পৌরসভায়। এর মধ্যে একটিতে সব প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় এবং একটিতে মেয়র প্রার্থী মারা যাওয়ায় ভোট হয়েছে ৬২ টিতে।
সকাল আটটায় ভোট শুরুর পর বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটারের লাইন দেখা গেলেও কোথাও কোথাও ফাঁকাও দেখা গেছে। তবে কুয়াশা কেটে গেলে আবার ভোটার ফিরেছে বহু এলাকায়।
বিকাল চারটায় ভোট শেষ হওয়ার পর শুরু হয়েছে গণনা।
রাজবাড়ীর পাংশায় ভোট শেষে চলছে গণনা। ছবি: নিউজবাংলাপ্রথম ধাপের ২৪ পৌরসভায় সবগুলোতে এবং দ্বিতীয় ধাপের ৬০ পৌরসভায় অর্ধেক কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে ভোট হলেও এবার সবগুলোতে ভোট নেয়া হয়েছে ব্যালট পেপারে। বিতর্ক এড়াতে দ্বিতীয় ধাপের মতো এবারও কেন্দ্রে ব্যালট পাঠানো হয়েছে সকালে।
জালভোট, এজেন্ট বের করে দেয়াসহ নানা অভিযোগে বিএনপির মোট নয় জন মেয়র প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন। কোথাও কোথাও আবার বিএনপি সমর্থকরা সক্রিয় ছিলেন না।
কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুরে।
জাল ভোট দেয়ায় টাঙ্গাইলের ভুঞাপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুতে এক যুবলীগ কর্মীকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
লক্ষ্মীপুরে রামগঞ্জে ভোটকেন্দ্র দখলকে কেন্দ্র করে সড়কে গাছের গুড়ি ফেলে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। ছবি: নিউজবাংলা
চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর ও নোয়াখালীর চৌমুহনীতে বিএনপির প্রার্থী ভোট নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
ভোটের চিত্র
ফেনী সদর পৌরসভায় ৪৫টি ভোটকেন্দ্রের চার পাঁচটি ছাড়া বেশির ভাগ কেন্দ্রই দেখা গেছে ভোটারশূন্য।
এই কেন্দ্রে বিএনপি মেয়র প্রার্থী আলাউদ্দিন আলালের অভিযোগ আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আলাউদ্দিন আলালের সমর্থকেরা কেন্দ্র দখল করে রেখেছে। বিএনপির ভোটাররা ভোট দিতে পারছেন না। তাদের এজেন্টদেরও বের করে দেয়া হয়েছে।
সার্বিকভাবে কম ভোটার উপস্থিতি চিত্র নোয়াখালীর হাতিয়া পৌরসভায়। ১৩ ভোটকেন্দ্রের ছয়টিকে ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেলেও বাকিগুলোতে কম।
বিএনপি প্রার্থী আব্দুর রহিমকে মাঠেই দেখা যায়নি। মেয়র পদে হয়েছে একপেশে ভোট। সবকেন্দ্রেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী কে এম ওবায়দুল্লাহ বিল্পবের সমর্থকদের সরব উপস্থিতি। প্রতিদ্বন্দ্বিতা মূলত কাউন্সিলর প্রার্থীদের ঘিরে।
তবে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হয়েছে নোয়াখালীর চৌমুহনী পৌরসভায়। ২০টি কেন্দ্রের সবগুলোতেই সকাল থেকে দেখা গেছে ভোটারদের ব্যাপক উপস্থিতি।
কোনো প্রার্থীর কোনো অভিযোগ নেই। এখানে মেয়র পদে হচ্ছে ত্রিমুখী লড়াই। আওয়ামী লীগের আকতার হোসেন ফয়সাল, বিএনপির জহিরউদ্দিন হারুনের সঙ্গে সমান সম্ভাবনা নিয়ে আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী স্থানীয় সাংসদ মামুনুর রশিদ কিরনের বড় ভাই খালেদ সাইফুল্লাহ।
মৌলভীবাজার সদর পৌরসভায় ভোটকেন্দ্রগুলো খুব একটা ভোটার উপস্থিতি দেখা যায়নি। নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে ভোটের আগের দিনই সরে দাঁড়িয়েছেন বিএনপি প্রার্থী ওলিউর রহমান। ফলে একপেশে ভোট হচ্ছে।
সিলেটের গোলাপগঞ্জ ও জকিগঞ্জ পৌরসভায় ভোটার উপস্থিতি ছিল বেশ ভালো। দুই পৌরসভার প্রতিটি কেন্দ্রেই দেখা গেছে অনেক ভোটার।
কোনো কোনো ভোট কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছিল হতাশাজনক। ছবি: নিউজবাংলাগোলাপগঞ্জে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী রাহেল আহমদ। দলটির আরও দুই জন বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় বিএনপি প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া শাহীন বেশি আশাবাদী।
সিলেটের জকিগঞ্জেও ভোটার উপস্থিতি ছিল ভালো। এখানে মেয়র প্রার্থী পাঁচ জন। খলিল উদ্দিন আহমদ নৌকার টিকিট পেলেও আওয়ামী লীগ থেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন আরও দুই জন।
অন্যদিকে, ধানের শীষের টিকিট ইকবাল আহমদ পেলেও বিএনপি থেকে বিদ্রোহী রয়েছে একজন।
উৎসব মুখর পরিবেশে ভোট হয়েছে খুলনার পাইকগাছায়। সকাল থেকে ভোটার উপস্থিতি ছিল ব্যাপক। পৌরসভাটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিম জাহাঙ্গীর। বিএনপির কোনো প্রার্থী নেই। জাহাঙ্গীরের প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিবি থেকে দাঁড়ানো প্রশান্ত মন্ডল। ভোট নিয়ে কারো কোনো অভিযোগ নেই।
তৃতীয়ধাপে ভোট হয়েছে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর ও হরিণাকুণ্ড পৌরসভায়। দুটিতেই ভোটার উপস্থিতি ছিল ভালো।
কোটচাঁদপুর ১৪ কেন্দ্রের প্রতিটিতেই সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট হয়েছে। কারো কোনো অভিযোগ নেই।
এই পৌরসভায় নৌকার টিকিট শাহাজাহান আলি পেলেও আওয়ামী লীগের দুই জন বিদ্রোহী রয়েছেন। নিজ দল থেকে কেউ বিদ্রোহী না হওয়ায় তুলনামূলক সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন বিএনপির এস কে এম সালাউদ্দিন বুলবুল।
দুই একটা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ছাড়া নয়টি কেন্দ্রের সবকটিতে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়েছে হরিণাকুণ্ডে। পৌরসভাটিতে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ফারুক হোসেন; বিএনপির প্রার্থী জিন্নাতুল হক। এ ছাড়া, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হয়ে দাঁড়িয়েছেন একজন, মেয়র প্রার্থী দিয়েছে ইসলামী আন্দোলনও।
এই ধাপে ময়মনসিংহ জেলায় ভোট হয়েছে তিনটি পৌরসভায়- ঈশ্বরগঞ্জ, ভালুকা ও গৌরীপুর। ভালোমন্দে হয়েছে ভোট।
ঈশ্বরগঞ্জে কোনো প্রার্থীরে অভিযোগ নেই। ১০টি কেন্দ্রের সবগুলোতেই ভোটার উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এখানে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে লড়ছেন বিএনপির শরীফ মোহাম্মাদ জুলফিকার আলি টিপু।
পছন্দের পৌর নগরপিতা বাছাইয়ে ভোট দিতে আসা এক বৃদ্ধ। ছবি: নিউজবাংলাভালুকায় ১০টি কেন্দ্রের সবগুলোকে সকাল থেকে ভোটারদের মোটামুটি উপস্থিতি দেখা গেলেও দুপুরের দিকে ভাটা পড়ে। আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থী একেএম মেজবাউদ্দিনের সমর্থকদের বিরুদ্ধে সিলমারা ও কেন্দ্র দখলের অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করেছেন বিএনপির হাতেম খান।
ব্যালট ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে গৌরীপুরে। এতে জড়িত ইউনিয়ন পরিষদের চার চেয়ারম্যানকে আটক করা হয়েছে। তবে ১০টি কেন্দ্রের সবকটিতেই ভোটার উপস্থিতি ছিল বেশ ভালো।
গৌরীপুরে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম হবি ও বিএনপির আতাউর রহমান ছাড়াও ক্ষমতাসীন দলের একজন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন।
বরিশালের গৌরনদীর ১১টি কেন্দ্র ও মেহেন্দিগঞ্জের নয়টি কেন্দ্রে ভোট চিত্রে দেখা গেছে, সকালে উপড়েপড়া ভিড় থাকলেও দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমেছে।
এর মধ্যে অনিয়মের অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করেছেন গৌরনদীর বিএনপির মেয়র প্রার্থী জহির সাজ্জাত হান্নান। তার অভিযোগ, নৌকার প্রার্থী হারিছুর রহমান হারিছের সমর্থকেরা আগেই কেন্দ্র দখলে নিয়ে নিয়েছে।
তবে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি মেহেন্দিগঞ্জ পৌরসভায়। এখানে নৌকার মেয়র প্রার্থী কামাল উদ্দিন খান, বিএনপির জিয়াউদ্দিন সুজন ছাড়াও ইসলামী আন্দোলনের একজন প্রার্থী রয়েছেন।
ভোলার বোরহানউদ্দিনের নয়টি কেন্দ্রে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হলেও ভোটার উপস্থিতি কম দেখা গেছে দৌলতখানে। বোরহানউদ্দিনের একটি কেন্দ্রে জাল ভোটের অভিযোগ উঠলেও বাকিগুলোতে ভোট হয়েছে সুষ্ঠু পরিবেশে।