পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌরসভা নির্বাচনের প্রচার শুরুর আগেই পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে আহত করার ঘটনায় সহযোগী সংগঠনের কর্মীসমর্থকসহ সাধারণ ভোটাররাও শঙ্কিত।
বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে কলাপাড়া পৌরসভার নির্বাচনি প্রচার। সকাল থেকেই মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা মাইকিং, গণসংযোগ, লিফলেট বিতরণ শুরু করেছেন।
নির্বাচনে মেয়র পদে লড়ছেন চার জন। আওয়ামী লীগের বর্তমান মেয়র বিপুল চন্দ্র হাওলাদার, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী দিদার উদ্দিন আহমেদ মাসুম ব্যাপারী, বিএনপির প্রার্থী হুমায়ুন কবির ও ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মো. সেলিম।
তবে, প্রচার শুরুর আগেই পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদার উদ্দিন আহমেদ মাসুম মনোনয়ন প্রত্যাহার না করায় ২৬ জানুয়ারি রাতে তার সমর্থক ছাত্রলীগ নেতা রাকিবুল ইসলাম দীপ্তকে কুপিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় পরদিন ছাত্রলীগের সভাপতি আসাদুজ্জামান শুভসহ সাত-আট জনের বিরুদ্ধে কলাপাড়া থানায় মামলা করেন দীপ্তর মা সেলিনা বেগম। দীপ্ত বর্তমানে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিনে ২৬ জানুয়ারি দিদার উদ্দিন আহমেদ মাসুম প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেননি। ফলে আনুষ্ঠানিক বৈঠক ছাড়াই মঙ্গলবার রাতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মোতালেব তালুকদার, পৌরসভা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক শহিদুল আলম ও সম্পাদক আবুল কালামের বরাত দিয়ে কলাপাড়া পৌরশহরে মাইকিং করে তাকে বহিষ্কারের ঘোষণা প্রচার করা হয়।
ভোটারের হাতে লিফলেট দিচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী দিদার উদ্দিন আহমেদ মাসুম ব্যাপারী
মাইকিংয়ে বলা হয়, পৌরসভা আওয়ামী লীগের সম্পাদক দিদার উদ্দিন আহমেদ মাসুম দলের সিদ্ধান্তের অমতে কলাপাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে দাঁড়ানোর কারণে দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা কোনো মন্তব্য করেননি।
দলের এক নেতা জানান, জরুরি সভা করা উচিত ছিল। হঠাৎ করে মাইকিংয়ে বহিষ্কারের ঘোষণা গঠনতন্ত্রের পরিপন্থিও।
এদিকে নির্বাচনি প্রচারের আগেই এ ধরনের ঘটনায় সাধারণ ভোটারদের ভেতর আতঙ্ক কাজ করছে। এমন সংঘাত চলতে থাকলে তারা ভোট দিতে পারবেন কি না তা নিয়ে সংশয়ের কথাও জানিয়েছেন তারা।
বুধবার বিকেলে আওয়ামী লীগের উঠান বৈঠকে কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক পানি-সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহাবুব তালুকদার উপস্থিত থাকায় অনেকে বিস্মিতও হয়েছেন। প্রথম দিনের নির্বাচনি প্রচারে বড় ধরনের ঘটনা ঘটবে বলে মনে করছেন অনেক নেতাকর্মী।
স্বতন্ত্র প্রার্থী দিদার উদ্দিন বলেন, ‘আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্শান্বিত হয়ে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার জন্য চাপ দেয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে আমি মাঠে আছি। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জনসাধারণ তাদের পছন্দের প্রার্থীকেই বিজয়ী করবে।’
আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী বিপুল হাওলাদার জানান, উন্নয়নের জন্যেই সাধারণ মানুষ তাকে ভোট দেবে। কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে তিনি বা তার সমর্থকরা জড়িত নয়।
কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, দীপ্তকে কুপিয়ে জখমের ঘটনা আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। পৌরসভা নির্বাচন উপলক্ষ্যে পৌর এলাকায় পুলিশি তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।
নির্বাচন পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না বলে জানান তিনি।
চতুর্থ ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌরসভায় ভোট গ্রহণ হবে। ভোটার সংখ্যা ১২ হাজার ৭৯১।