ঝালকাঠির নলছিটি পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েই প্রচারে নেমেছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও সাবেক মেয়র কেএম মাসুদ খান। দলের মনোনিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে গণসংযোগে বাধা দেয়ার অভিযোগও করেছেন তিনি। তবে অভিযোগ নাকচ করে নৌকার প্রার্থী আবদুল ওয়াহেদ কবির বলেন, সব প্রার্থীর জন্যই ভোট চাওয়ার সমান সুযোগ আছে।
ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর মতো ভোটের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কিত বিএনপির প্রার্থী মজিবুর রহমান।
মেয়র পদের জন্য মনোনয়ন জমা দেয়ার পর হলফনামায় মামলা সংক্রান্ত জটিলতায়, গত ৩ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাসুদ খানের মনোনয়ন বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ওহিদুজ্জামান মুন্সি।
ঝালকাঠি জেলা প্রশাসকের কাছে আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে না পেয়ে, গত ৫ জানুয়ারি উচ্চ আদালতে যান মাসুদ খান। ১৩ জানুয়ারি শুনানি শেষে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি। একই সঙ্গে তাকে প্রতীক বরাদ্দ দিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ দেয়ার জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মাহমুদ হাসান তালুকদারের বেঞ্চ।
এর পর প্রার্থীকে মোবাইল ফোন প্রতীক দেয়া হয়। কিন্তু ওই আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। পরে আট সপ্তাহের জন্য ওই আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ দেয়া হয়। মাসুদ খানের আইনজীবী আকতার রসুল মুরাদ জানান, প্রার্থিতা ফিরে পেতে আবারও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়। গত মঙ্গলবার শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হাসানসহ চার বিচারপতির বেঞ্চ চেম্বার জজ আদালতের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেন এবং মাসুদের প্রার্থিতা বহাল রাখার নির্দেশ দেন।
প্রার্থিতা ফিরে পেয়ে মঙ্গলবার রাতেই নির্বাচনি এলাকায় যান মাসুদ খান। নির্বাহী ম্যাজিট্রেটসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে এলাকায় প্রবেশ করেন তিনি।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের তিনি জানান, নলছিটিতে তার প্রবেশ ঠেকাতে পথে পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। ভাড়া করা বহিরাগতদের দিয়ে তার ওপর আওয়ামী লীগের প্রার্থী হামলার প্রস্তুতি নিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন।
প্রশাসনের উদ্দেশে মাসুদ বলেন, ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর তাণ্ডব বন্ধ করে পৌর এলাকাকে বহিরাগত মুক্ত করে নির্বাচনি পরিবেশ ফিরিয়ে দিতে হবে। অন্যথায় তিনি কাফনের কাপড় পরে প্রচারে নামবেন। নৌকার প্রার্থীর পক্ষে রিটার্নিং কর্মকর্তা অবস্থান নিয়েছে এমন অভিযোগ তুলে, তাকে সরিয়ে নিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে দাবি জানান তিনি।
প্রার্থিতা নিয়ে জটিলতায় যখন দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর ভোটে দাঁড়ানো অনিশ্চয়তায় পরে, তখন নলছিটিতে ফুরফুরে মেজাজে প্রচার চালিয়েছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল ওয়াহেদ খান। তবে ভোটাররা এখন বলছেন, ভোটযুদ্ধে মাসুদের ফিরে আসা পাল্টে দেবে পরিস্থিতি। পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের মুদি দোকানি বেল্লাল শরীফ বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে ফেরত আসায় দুশ্চিন্তায় আছেন নৌকার ওয়াহেদ। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার স্কুল শিক্ষক প্রদীপ দাস বলেন, ‘মাসুদ খান এই পৌরসভার সাবেক মেয়র। তার আমলে এলাকার বেশ উন্নয়ন হয়েছে। তিনি জনবান্ধব একজন নেতা। তার প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ায় শুধু নৌকার প্রার্থী নয়, দলীয় সব নেতাকর্মীর টেনশন বেড়ে গেছে।’
তবে প্রচারের পরিবেশ নিয়ে মাসুদ খানের অভিযোগ নাকচ করেছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবদুল ওয়াহেদ কবির। তিনি বলেন, ‘সব প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা বিনা বাধায় ভোট চাইতে ভোটারের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন, পোস্টার টানাচ্ছেন, মাইকিং-মিছিলও করছেন। এ থেকেই প্রমাণ হয় সরকার নিরপেক্ষ ভোটের মাঠ তৈরি করে দিয়েছে।’
বিএনপির প্রার্থী মজিবুর রহমান জানান, সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কিত থাকায় তিনি জোর প্রচারে নামছেন না। নলছিটিতে এখনও তৈরি হয়নি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড।
নলছিটি নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে মেয়র প্রার্থী হয়েছেন মাওলানা মো. শাহ জালাল। তিনি জানান, প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাইছেন। কর্মী-সমর্থকরাও উৎসবমুখর পরিবেশে প্রচার চালাচ্ছেন। ভোটের পরিবেশ এখন পর্যন্ত সুন্দর আছে। ঝালকাঠি জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ওহিদুজ্জামান মুন্সি জানান, নলছিটি পৌরসভায় মোট ভোটার ২৪ হাজার ১০১ জন। মেয়র পদে চার জন ছাড়াও নয়টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪০ ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
তৃতীয় ধাপে এই পৌরসভায় ভোট হওয়ার কথা রয়েছে ৩০ জানুয়ারি।