আওয়ামী লীগের দাবি, বিগত পাঁচ বছরে মৌলভীবাজার পৌরসভায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। চলমান আছে অনেক কাজ। এসব কাজ শেষ করতে হলেও বর্তমান মেয়র ফজলুর রহমানকে ভোট দেবে ভোটাররা।
অন্যদিকে বিএনপি মনোনিত অলিউর রহমানের ভাষ্য, ভোট দেয়া নিয়ে ভোটাররা শঙ্কায় আছেন। যদি তারা সঠিকভাবে ভোট দিতে পারেন তাহলে জয় তাদের নিশ্চিত।
মৌলভীবাজার পৌরসভা নির্বাচনে এবারও আওয়ামী লীগের নৌকা পেয়েছেন ফজলুর রহমান। বিপরীতে বিএনপি থেকে ধানের শীষের প্রার্থী হয়েছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী মো. অলিউর রহমান।
প্রতীক পেয়েই মাঠে নেমেছেন দুই প্রার্থী। চলছে জোর প্রচারণা। মেয়র প্রার্থীদের পাশাপাশি ৯টি ওয়ার্ডের ৮টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীরাও গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ৯নং ওয়ার্ডে বিনা প্রতিন্দন্দ্বিতায় মাসুদ আহমদ কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন।
প্রচারে প্রার্থীদের পক্ষে গণসংযোগ আর মিছিলে অংশ নিচ্ছেন নেতাকর্মীরা, ভোটার ও তাদের কর্মী সমর্থকরা। এখন পর্যন্ত পৌর এলাকায় নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘনের কোনো ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে ও ভোটারদের উৎসাহ বাড়াতে আওয়ামী লীগের ফজলুর রহমান নিয়েছেন ভিন্ন পন্থা। তিনি যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, কৃষকলীগসহ দলের সব সহযোগী সংগঠনগুলোকে নিয়ে ধারাবাহিক বর্ধিত কর্মীসভা করছেন।
আওয়ামী লীগের প্রার্থীর প্রচারসভার মাধ্যমে ৯টি ওয়ার্ডেই দলীয় সমন্বয়ের মাধ্যমে সাধারণ ভোটারদের সম্পৃক্ত করে ধারাবাহিক উঠান বৈঠকও করছেন তিনি।
বর্ধিত সভার পাশাপাশি চলা প্রতিটি উঠান বৈঠকেই মেয়র প্রার্থী ফজলুর রহমান তার সময়ে নেয়া নানা উন্নয়ন ও পৌরসভার চলমান উন্নয়নে বড় বড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের আবারও নৌকায় ভোট দিয়ে তাকে নির্বাচিত করার আহ্বান জানাচ্ছেন ভোটারদের কাছে।
ফজলুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণায় যেভাবে জনসাধারণ স্বতস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছেন তাতে আমি নৌকার বিজয়ের বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত।’
গত পাঁচ বছরে জনগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতির শতভাগ কাজ সম্পন্ন করার দাবি করেন তিনি।
বলেন, ‘বেশ কিছু মেগা প্রকল্প হাতে নেয়া আছে, সেগুলো বাস্তবায়ন হলে মৌলভীবাজার গ্রিন সিটিতে পরিণত হবে।’
মৌলভীবাজার পৌরসভায় ১৪ বছর ক্ষমতার বাহিরে রয়েছে বিএনপি। তাই উৎকণ্ঠা ও শঙ্কার মধ্যেই নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথা জানিয়েছেন দলটির প্রার্থী অলিউর রহমান। বিগত নির্বাচনেও তিনি ধানের শীষের প্রার্থী হয়েছিলেন।
প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে সেদিনই সন্ধ্যায় শহরের পুরাতন হাসপাতাল সড়কে প্রধান নির্বাচনি কার্যালয় উদ্বোধন করেন তিনি। পরদিন সকালের দিকে প্রধান নির্বাচনি কার্যালয় থেকে পশ্চিমবাজার পর্যন্ত চলে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়ে প্রচার।
প্রচারে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমান নেতৃত্ব দেন।
নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটের সুষ্টু পরিবেশ নিয়ে বিএনপি শিবির শঙ্কার কথা জানায়।
বিএনপি প্রার্থী অলিউর রহমানের প্রচারে নেতাকর্মীজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বর্ধিত সভা না হলেও পৃথক পৃথকভাবে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে বৈঠক হচ্ছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে দলীয় নেতৃত্বের মাধ্যমে কো-অর্ডিনেটর রয়েছেন, তাদের মাধ্যমে সমন্বয় সভা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘পৌরসভায় এখনো অনেক সমস্যা রয়েছে, যার মধ্যে রাস্তাঘাট, ড্রেন, লাইটিং অন্যতম। পৌরসভায় ভোটাররা ধানের শীষে ভোট দিতে চান, কিন্তু নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে আমাদের মত ভোটাররাও শঙ্কিত।’
বিএনপি প্রার্থী অলিউর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জোর করে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা না হলেও তার আশঙ্কা আছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক ও আইসিটি) মামুনুর রশীদ নিউজবাংলাকে জানান, নির্বাচন নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে তারা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। পৌরবাসীকে একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দিতে চান তারা।
আগামী ৩০ জানুয়ারি মৌলভীবাজার পৌরসভা নির্বাচনে লড়বেন দুই মেয়র প্রার্থী, ২৭ জন কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১০ জন প্রতিন্দন্দ্বিতা করছেন।
পৌরসভায় মোট ভোটার ৪৩ হাজার ৪৪৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২২ হাজার ৭৫০ আর নারী ভোটার ২০ হাজার ৬৯৬ জন। ১৮টি কেন্দ্রে ১২৫টি বুথে নেযা হবে ভোট।