বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গোলাপগঞ্জে কমছে গোষ্ঠীর প্রভাব

  •    
  • ২৪ জানুয়ারি, ২০২১ ১৯:১৪

পৌরবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গোলাপগঞ্জের প্রভাবশালী দুটি গোষ্ঠী- চৌধুরী ও তালুদকার। শিক্ষা, অর্থ, আভিজাত্যে তারা এলাকায় প্রভাশালী। তবে এই দুই গোষ্ঠীর বাইরে যে জনগোষ্ঠী রয়েছে তারা সংখ্যায় বেশি। তাদের প্রতিনিধি জাকারিয়া আহমদ পাপলু।

গোলাপগঞ্জে নির্বাচন হয় গোষ্ঠীভিত্তিক- নির্বাচন নিয়ে আলাপচারিতায় গোলাপগঞ্জ উপজেলা কমপ্লেক্সে বসে এমন মন্তব্য করলেন স্থানীয় এক প্রবীণ রাজনৈতিক কর্মী।

এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনাও উল্লেখ করলেন তিনি। তার ভাষ্যমতে, একবার নুরুল ইসলাম নাহিদ (এই এলাকার সংসদ সদস্য ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী) নির্বাচনে হেরে বলেছিলেন- গোলাপগঞ্জের মানুষ দল বা প্রার্থীর যোগ্যতা দেখে ভোট দেয় না। ভোট দেয় কে কার মামা কে কার চাচা এসব দেখে।

সিলেটের গোলাপগঞ্জ পৌর এলাকা ঘুরে আরও কয়েকজন সঙ্গে কথা হয়। তারা সবাই এই প্রবীণ রাজনৈতিক কর্মীর সঙ্গে একমত। তারা জানালেন, গোলাপগঞ্জের নির্বাচন, বিশেষ করে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দল ও ব্যক্তির চাইতে গোষ্ঠীর প্রভাব বেশি। এক্ষেত্রে চৌধুরী ও তালুদকার বংশ এগিয়ে।

২০১৫ সালে গোলাপগঞ্জ পৌরসভার মেয়র হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সিরাজুল জব্বার চৌধুরী। তার মৃত্যুতে ২০১৮ সালে উপনির্বাচন হয়।

সেই নির্বাচনে বিএনপি মনোনয়ন দিয়েছিল উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহিউস সুন্নাহ চৌধুরী নার্জিসকে। তবে দলীয় মনোনয়ন ফিরিয়ে দিয়ে নারিকেল গাছ প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন চৌধুরী নার্জিস।

দলীয় ভোটের চাইতে গোষ্ঠী ভোট বেশি, দলীয় প্রার্থী হলে গোষ্ঠীর ভোট কমতে পারে- এই ধারণা থেকেই উপনির্বাচনে চৌধুরী নার্জিস দলীয় মনোনয়ন ফিরিয়ে দেন বলে জানান স্থানীয় এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক অজামিল চন্দ্র নাথ।

গোলাপগঞ্জে গোষ্ঠীর প্রভাব এতোটাই প্রবল যে, ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই পৌরসভার গত চার নির্বচানের কোনোটিতেই প্রধান দুই দলের প্রতীক নৌকা ও ধানের শীষ নিয়ে কেউ জয়ী হতে পারেননি বলেও জানিয়েছেন কয়েকজন ভোটার।

পৌরবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গোলাপগঞ্জের প্রভাবশালী দুটি গোষ্ঠী- চৌধুরী ও তালুদকাররা শিক্ষা, অর্থ ও আভিজাত্যে এগিয়ে। তবে এই দুই গোষ্ঠীর বাইরে যে জনগোষ্ঠী রয়েছে তারা সংখ্যায় বেশি। তাদের প্রতিনিধিই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জাকারিয়া আহমদ পাপলু।

তারা জানান, এই গোষ্ঠীর ভোট কাজে লাগিয়ে পৌরসভার প্রথম দুই নির্বাচনে জাকারিয়া আহমদ পাপলু চেয়ারম্যান ও মেয়র হন। তবে নির্বাচনে আগের মতো আর গোষ্ঠীর প্রভাব কাজ করে না বলেও জানান তারা।

আগামী ৩০ জানুয়ারির এই নির্বাচন সামনে রেখে পৌরসভাজুড়ে চলছে জোর প্রচার। পৌরসভায় নয়টি ওয়ার্ডে ভোটার প্রায় ২৩ হাজার।

স্থানীয় এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক অজামিল বলেন, ‘মানুষ এখন সচেতন হচ্ছে। শিক্ষার প্রসার হয়েছে। ফলে গোষ্ঠীর বদলে প্রার্থীর দোষগুণ বিবেচনা করেই এখন ভোটাররা ভোট দেন।’

নিজের বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, ‘গত দুই নির্বাচনে জাকারিয়া আহমদ পাপলুর হেরে যাওয়াই প্রমাণ করে গোষ্ঠীর প্রভাব আর আগের মতো নেই।’

গোষ্ঠীগুলোর মধ্যেও আগের মতো ঐক্য নেই বলে জানালেন স্থানীয় সাংবাদিক জাহিদ আহমদ। তিনি বলেন, ‘গত দুটি পৌরসভা নির্বাচনে (একটি উপনির্বাচন) তিনটি গোষ্ঠী থেকেই একাধিক মেয়র প্রার্থী ছিলেন।’

এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন চারজন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রুহেল আহমদ, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির প্রার্থী পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী শাহীন, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে জগ প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান মেয়র আমিনুল ইসলাম রাবেল এবং সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া আহমদ পাপলু মোবাইল ফোন প্রতীকের প্রার্থী।

এবারের প্রার্থীদের মধ্যে তালুকদার সম্প্রদায়ের রাবেল, চৌধুরী সম্প্রদায়ের শাহীন। আর পাপলু ও রুহেল এদের বাইরের সম্প্রদায়ের।

গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ চৌধুরী মনে করেন, এক সময় এখানকার মানুষের মধ্যে গোষ্ঠীপ্রীতি ছিল। এখন আর গোষ্ঠীর তেমন প্রভাব নেই। মানুষ এখন সচেতন হয়েছে। এখন আর গোষ্ঠীর জিকির নির্বাচনে তেমন প্রভাব ফেলবে না।

ইকবাল চৌধুরীর বক্তব্যের সঙ্গে একমত চার মেয়র প্রার্থীও। আওয়ামী লীগের প্রার্থী রুহেল আহমদ মনে করেন, সরকারের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে গোষ্ঠী পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে পৌরবাসী নৌকা মার্কায় ভোট দেবে।

বিএনপির প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী শাহীনের মতে, সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে এবার মানুষ ভোট বিপ্লব ঘটাবে।

অতীতের মতো সবশ্রেণির ভোটাররা এবার তাকেই ভোট দেবে বলে মনে করেন বর্তমান মেয়র আমিনুল ইসলাম রাবেল।

আর গোষ্ঠীর ভোট কাজে লাগিয়ে নির্বাচিত হওয়ার কথা অস্বীকার করে জাকারিয়া আহমদ পাপলু বলেন, ‘আমি সবার মেয়র। সবার ভোটে বিজয়ী হয়েছি। এবারও জনগণ আমাকে মূল্যায়ন করবে।’

এ বিভাগের আরো খবর