বরগুনা শহরের ধর্মতলায় সরু গলির দুই পাশে সারিবদ্ধ চায়ের দোকান। শীতের সন্ধ্যায় চায়ের কাপের উত্তাপে সেখানে বেশ জমে নির্বাচনি আলাপ।
সেখানেই দেখা মিলল স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সাহাবুদ্দিন সওদাগরের। বরগুনা পৌরসভার মেয়র পদে বাঘা বাঘা রাজনৈতিক নেতাদের টেক্কা দিতে মোবাইল ফোন প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঠে নেমেছেন তিনি।
ওই এলাকায় শনিবার সন্ধ্যায় নিউজবাংলার প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপ হয় সাহাবুদ্দিনের। রিকশায় চড়ে একাই নিজের প্রচারে অলি-গলি ঘুরছিলেন তিনি। শহরজুড়ে নেই তার কোনো পোস্টার-ব্যানার, নেই মাইকিংও।
কেন মেয়র হতে চান?
সাহাবুদ্দিনের আদি নিবাস নোয়াখালীতে হলেও বাবার চাকরির সুবাদে বসবাস বরগুনায়। কাজ করেছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বরগুনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলীর গাড়িচালক হিসেবে। এখন বেতাগী পৌরসভায় চুক্তিভিত্তিক রোলার ড্রাইভার হিসেবে তিনি কর্মরত।
নিউজবাংলাকে সাহাবুদ্দিন জানান, তার প্রতিদিনের রোজগার পাঁচশ থেকে এক হাজার টাকা। এ নিয়েই ভোটের কাজ করছেন তিনি।
‘বর্তমান সময়ের জনপ্রতিনিধি হওয়া ব্যবসায় পরিণত হইছে। রাজনীতির মধ্যে নীতি শব্দটা এখন মানায় না। আমি নীতি শব্দটাকে আবার রাজনীতিতে ফিরায় আনতে চেষ্টা করতেছি। আর এই জন্য প্রথমেই দরকার নো ইনভেস্টমেন্ট।
‘এক জন প্রার্থী যখন রাজনীতিতে টাকা ইনভেস্ট করে, তখন তার লক্ষ্য থাকে নির্বাচিত হয়েই সুদে-আসলে ওই টাকা উশুল তো করবেই, নিজেও বাড়ি-গাড়ি করবে। যে কারণে দুর্নীতির আশ্রয় নিতে হয়।… এভাবে পুরা রাষ্ট্রই দুর্নীতিতে পড়ে। এর কুফল ভোগ করে খাইট্যা খাওয়া মানুষ।… আমি দিনমজুর। আমিও এর প্রভাবে প্রভাবিত।’
নেতাদের দুর্নীতির কারণে ভুক্তভোগী খেটে খাওয়া মানুষের প্রতিনিধিত্ব করতেই নির্বাচনে নামা বলে জানান সাহাবুদ্দিন।
‘আমি নৈতিকতার বাণী মানুষের কাছে পৌঁছায় দিতে চাই। ভোটাররা টাকায় বিকায় গেলেই ভোট কিনে রাজনীতির লেবাসে ব্যবসায়ীরা জনপ্রতিনিধি হইয়া যায়। আমি এই জন্যই এবার মাঠে নামছি।… অর্থ-সম্পদ, দলের পদ-পদবী, উচ্চতর ডিগ্রি কোনো যোগ্যতা না। নৈতিকতা, সততা এক জন মানুষের যোগ্যতা। মানুষকে বুঝাচ্ছি টাকায় ভোট না, যে যোগ্যতার মাপকাঠিতে আসবে, তাকেই ভোট দিবেন।’
নির্বাচনের প্রচারে তাই সাহাবুদ্দিনের স্লোগান ‘নো ইনভেস্টমেন্ট, নো করাপশন’।
প্রচার শেষে একটি দোকানে বসে চা খেতে খেতে তিনি বলেন, ‘আমি এতদিন ধরে নৈতিকতার তাবিজ বেইচ্চা মানুষকে বুঝাইতে সক্ষম হইছি, মাত্র দুই হাজার টাকায় মাথা বিক্রি করেন, আপনার মাথা কিনে নিয়ে কেউ হাজার কোটি টাকার মালিক হইয়া যায়।’
অল্পের জন্য এবার প্রার্থিতা বাতিল হওয়া থেকে বেঁচে যান সাহাবুদ্দিন। জানালেন, নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী কখনও সংসদ সদস্য ছিলেন না এমন স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নির্বাচনি এলাকার এক শতাংশ ভোটারের সমর্থনের স্বাক্ষর মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হয়।
কিন্তু তার জমা দেয়া স্বাক্ষরগুলোর মধ্যে কয়েকটি ওই ভোটারের জাতীয় পরিচয়পত্রের স্বাক্ষরের সাথে মেলেনি জানিয়ে তার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়। পরে হাইকোর্টে আবেদন করে প্রার্থিতা ফিরে পান সাহাবুদ্দিন।
এরপর থেকে নিজ পোস্টার হাতে প্রতিদিন একাই রিকশা নিয়ে বেরিয়ে যান প্রচারে। ভোটারদের জানান, রাজনীতিকে নিয়ে জমজমাট ব্যবসা না, নেতা না, প্রত্যেক জনপ্রতিনিধি হোক মানুষের সেবক। সে জন্য আগে দরকার নৈতিকতাবোধ সম্পন্ন এক জন মানুষ হওয়া।
তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে আগামী ৩০ জানুয়ারি বরগুনা পৌরসভায় হবে ভোট। মেয়র হওয়ার জন্য এখানে সাহাবুদ্দিনের প্রতিদ্বন্দ্বী গত দুই বারের বিজয়ী মেয়র ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শাহাদাত হোসেন, দলটির মনোনীত প্রার্থী কামরুল আহসান মহারাজ, বিএনপির প্রার্থী আবদুল হালিম, জাতীয় পার্টির আবদুল জলিল এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা জালাল উদ্দীন।