গত দুইবারের বিজয়ী মেয়র। প্রার্থী হয়েছেন এবারও। অভিযোগ, হুমকির কারণে যেতে পারছেন না ভোটারের দুয়ারে। কিন্তু থেমে থাকতে রাজি নন শাহাদাত হোসেন। ডিজিটাল যুগে প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে যাচ্ছেন ভোটারের কাছে।
বরগুনা পৌরসভায় নৌকা চেয়েছিলেন টানা ১০ বছরের মেয়র শাহাদাত। গতবারের মতোই দল দেয়নি প্রতীক। এবারও তিনি হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
এবার সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন গতব নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী কামরুল আহসান মহারাজ।
শাহাদাতের অভিযোগ, ভোট থেকে সরে যেতে তাকে দেয়া হয়েছে প্রাণনাশের হুমকি। এ কারণে করছেন না সভা-সমাবেশ।
সনাতন নির্বাচনি প্রচারের বদলে বাসায় বসে নিয়মিত ফেসবুক লাইভে প্রচার করছেন শাহাদাত, ভোট চাইছেন ভোটারদের কাছে।
তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মহারাজ অভিযোগ অস্বীকার করে শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ঢাকতে রাজনৈতিক কূটকৌশলের আশ্রয় নেয়ার পাল্টা অভিযোগ করেন।
পথসভা ও প্রচার বন্ধ রেখে বাড়িতে বসে গত ১৬ জানুয়ারি লাইভে এসে তিনি দাবি করেন, পৌরবাসীর সেবার জন্যই তিনি প্রার্থী হয়েছেন। তার সমর্থকদের প্রচারে বাধা দিয়ে পোস্টার, ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা হয় ও মাইক ছিনিয়ে নেয়া হয়। এই কারণেই তিনি প্রচার বন্ধ রেখেছেন।
তিনি অভিযোগ করেন, বরগুনায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী মহারাজের সমর্থকেরা আতঙ্ক সৃষ্টি করছেন। ভোটারদের ভয় না পেয়ে ভোটকেন্দ্রে আসার আহ্বান জানান তিনি।
বরগুনা পৌলসভায় নৌকার প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে অভিনেতা মীর সাব্বির। ছবি: নিউজবাংলা
২২ জানুয়ারি ফের লাইভে এসে তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রচারে বাধা, কর্মীদের হেনস্তা করাসহ নানা অভিযোগ জানান।
১১ জানুয়ারি বরগুনা পৌরসভায় আনুষ্ঠানিক নির্বাচনি প্রচার শুরু হয়। ১৪ জানুয়ারি ক্রোক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে স্বতন্ত্র ও আওয়ামী লীগ উভয়ের পথসভা নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। দুটি পথসভাই বন্ধ করে দেয় নির্বাচন কমিশন।
১৩ জানুয়ারি রাতে পৌরশহরের স্টেডিয়াম এলাকার সরকারি আবাসনে পোস্টার ছেড়াকে কেন্দ্র করে মহারাজ ও শাহাদাতের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। শাহাদাতের সমর্থকরা হামলা চালিয়েছে, এমন অভিযোগে কামরুল আহসান মহারাজের সমর্থক জাহাঙ্গীর হোসেন শাহাদাত হোসেনের জামাতা আরিফ খানসহ ১৭ জনকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় মামলা করেন। শাহাদাত হোসেনের তিন সমর্থককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
১৪ জানুয়ারি বরগুনা সদর থানায় মেয়র প্রার্থীদের নিয়ে পুলিশের আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভায় স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহাদাত হোসেন নির্বাচনে তার জীবননাশের আশঙ্কা রয়েছে বলে দাবি করেন।
এরপর তিনি সব পথসভা প্রত্যাহার করে বাসায় অবস্থান করেন। ভোট চেয়ে শুধুমাত্র গণসংযোগের জন্য মাইকিং অব্যহত রাখেন।
১৭ জানুয়ারি নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণার জন্য বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করেন।
শাহাদাত হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচনের শুরু থেকেই আমি হামলার আশঙ্কায় আছি। আমার কর্মী-সমর্থকদের বিভিন্ন স্থানে প্রচারে বাধা ও হামলা করা হয়েছে। নৌকার জনসভায় আমার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে হুমকি দেয়া হয়। আমি বাসায় বসে লাইভে ভোটারদের ভোট চাইছি। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জয় আমারই হবে।’
স্বতন্ত্র প্র্রার্থী শাহাদাত হোসেনের এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে মহারাজ বলেন, ‘তিনি একজন দুর্নীতিবাজ, নাটকবাজ। ২০১৫ সালে নির্বাচনের দিন আমার উপর হামলা করা হয়, আমি গুলিবিদ্ধ হই, অথচ তিনি বলছেন আমার সমর্থকদের কারণে তিনি প্রচার চালাতে পারছেন না।
‘গত ১০ বছরে দুর্নীতি করে পৌরসভার টাকা লোপাট করেছেন তিনি। এবার পৌরবাসীর সামনে তার মুশোখ খুলে গেছে, যে কারণে লজ্জায় গা ঢাকা দিয়ে বাসায় বসে টাকা দিয়ে ভোট কিনছেন।’
আগামী ৩০ জানুয়ারি বরগুনা পৌরসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন নয় মেয়র প্রার্থী।