বরগুনা পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের পথে প্রধান বাধা দলের বিদ্রোহী প্রার্থী গত দুই বারের বিজয়ী শাহাদাত হোসেন।
বিগত চারটি নির্বাচনে বিএনপি এবার কোনো প্রকার প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়তে পারেনি। ফলে বিএনপিকে নিয়ে ক্ষমতাসীনদের মাথাব্যাথা নেই।
নির্বাচনি বৈতরণী পার হয়ে জয়ের বন্দরে নোঙর করতে আটঘাঁট বেধে প্রার্থীকে নিয়ে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ।
২০১১ সালের পৌর নির্বাচনে তৎকালীন মেয়র শাহজাহানের বিপক্ষে নির্বাচনে অংশ নেন শাহাদাত হোসেন। স্থানীয় সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর সমর্থন নিয়ে ওই নির্বাচনে তিনি জয় পান।
২০১৫ সালে ডিসেম্বরের নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে মনোনয়ন চান শাহাদাত। কিন্তু মনোনয়ন দেয়া হয় জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুল আহসান মহারাজকে। বিদ্রোহ করেন শাহাদাত। জগ প্রতীক নিয়ে তিনি ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন।
আওয়ামী লীগের থেকে মনোনয়ন নিয়ে প্রচারে নেমেছেন কামরুল আহসান মহারাজ। ছবি: নিউজবাংলা
ভোটের দিন বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে গোলযোগ হয়, আওয়ামী লীগ প্রার্থী পুলিশের গুলিতে আহত হন। তিনটি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত হয়। পরে ভোট বর্জন করে আওয়ামী লীগ। জিতে যান শাহাদাত।
এবারও দলের মনোনয়ন চান শাহাদাত। কিন্তু নিরাশ করে দল। দ্বিতীয় বারের মতো মনোনয়ন পান মহারাজ।
এবারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের লড়াইয়ে শাহাদাত। আর ১১ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগ তাকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করে শহরে মাইকিং করে।
মহারাজের পক্ষে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোও। সোমবার সন্ধ্যায় জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অন্য অঙ্গসংগঠনগুলো মিছিল করার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করে।
মহারাজের পক্ষে প্রচারে জেলা সাংষ্কৃতিক সংগঠনগুলোও। জেলা শিল্পকলা অ্যাকাডেমিতে নৌকার পক্ষে প্রচারণা শুরু করেন জনপ্রিয় অভিনেতা মীর সাব্বির।
বৃহষ্পতিবার বরগুনা শিল্পকলা একাডেমিতে নৌকার পক্ষে প্রচার করেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
নৌকার পক্ষে প্রচার করেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। ছবি: নিউজবাংলা
পথসভায় শাহাদাতের অবাধ্য হওয়ার বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করে তাকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোরও আহ্বান জানান দুই জনই।
জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সরওয়ার টুকু বলেন, ‘২০১১ সালে প্রথমবার আমরা তাকে সমর্থন দিয়েছিলাম। ওই নির্বাচনে তিনি মেয়র নির্বাচিত হন। এবারও তিনি একই পন্থায় বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। তবে আমরা মহারাজের পক্ষে প্রচার শুরু করেছি। আশা করি, আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার কাছে শাহাদাত টিকবেন না।’
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে প্রার্থী হওয়ায় জেলা আওয়ামী লীগ শাহাদাতকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছে। তিনি গত ১০ বছরে বরগুনা পৌরসভাকে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন। আমরা তার রাহুগ্রাস থেকে পৌরসভাকে মুক্ত করব।’
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মহারাজ বলেন, ‘তিনি (শাহাদাত) গত ১০ বছরে উন্নয়নের নামে টাকা লোপাট করেছেন, জনগণের উপর বাড়িয়েছেন ট্যক্সের বোঝা। ট্রেড লাইসেন্সের ফি বাড়িয়েছেন কয়েক গুণ। ফলে একদিকে যেমন নাগরিকদের তার উপর ক্ষোভ রয়েছে, তেমনি ব্যবসায়ীদেরও।’
বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, ‘তাকে (শাহাদাতকে) আমরা প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্ত তিনি আমাদের সম্মান রাখেননি। কে বিট্রে করবে সেটা তার ব্যপার, আমাদের এত পপুলার প্রার্থীর দরকার নাই। আমরা দলের প্রার্থীর জয়ের লক্ষ্যে কাজ করব।’
বিদ্রোহী প্রার্থী শাহাদাত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি গত ১০ বছর পৌরবাসীর সেবায় নিয়োজিত ছিলাম। এই পৌরশহরের মানুষের বিপদে আপদে আমি সবসময় নিবেদিতপ্রাণ ছিলাম। তাদের প্রতি আমার ভালোবাসার টানে আমি প্রার্থী হয়েছি, আমৃত্যু আমি পাশে থাকার কথা দিয়েছি।
‘এখন যারা নৌকার মঞ্চে আমায় বিদ্রোহী বলে নানা কথা বলছেন, তারাও প্রায় প্রত্যেকে বিভিন্ন সময়ে বিদ্রোহ করে নির্বাচন করেছেন। আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাস করি। আমি আশা করি, মানুষ ভোটে সঠিক জবাব দেবে।’
গত পৌর নির্বাচনে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এসএম নজরুল ইসলাম এক হাজার ৬৫৯ ভোট পান। তিনি তখন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উঠে আসতে পারেননি।
এবার বিএনপি প্রার্থী করেছে আবদুল হালিমকে। তার আশা, এবার জিতে যাবেন তিনি।
হালিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মানুষের গণতান্ত্রিক ও ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে আমরা নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। আমি মনে করি, পৌরবাসী এই নির্বাচনে ব্যালটে জবাব দেবে এবং আমি নির্বাচিত হতে পারব।’
পৌরসভায় ভোট হবে ৩০ জানুয়ারি। নির্বাচনে মেয়র পদে ছয় জন, কাউন্সিলর পদে ৩১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বদ্বিতা করছেন। এ পৌরসভার ২৫ হাজার ভোটার রয়েছেন।