শনিবার রাত সাড়ে ৯টা। বরগুনা পৌর শহরের চরকলোনীর বিআরটিসি বাসস্ট্যান্ডের পাশেই বিকট শব্দে পর পর দুটি ককটেল বিস্ফোরণ হয়। বিস্ফোরণ স্থানের একেবারে পাশেই পৌর নির্বাচনের জন্য স্থাপন করা নৌকার অস্থায়ী নির্বাচনি কার্যালয়।
ককটেল বিস্ফোরণের পরই ছড়িয়ে পড়ে ভীতি, আতঙ্কিত এলাকাবাসী দ্রুত ঘটনাস্থল ও আশপাশ এলাকা থেকে সরে পড়েন। খবর পেয়ে কিছুক্ষণ পরে পুলিশ আসে। তারা খোঁজ-খবর নেন। কিন্তু কোনো কূলকিনারা করতে পারেননি।
প্রত্যক্ষদর্শী এক ভ্যানচালক বিস্ফোরণের পর দুজন কিশোরকে দৌড়ে পালাতে দেখার কথা জানান। তবুও কোনো হসিদ মেলে না ককটেল নিক্ষেপকারীদের।
পরেরদিন রোববার রাত পৌনে ৮টার দিকে শহরের নয়াকাটা এলাকায় ১নং সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী নাসরিন নাহার সুমির প্রচার মাইককে লক্ষ্য করে আবার ছোড়া হয় ককটেল। সেদিনও পুলিশ কাউকে খুঁজে পায়নি পুলিশ। এমনকি টানা তৃতীয় দিনের মতো গতকাল সোমবার রাত ৯টার দিকে চরকলোনি এলাকায় বরগুনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক, এনটিভি ও কালের কণ্ঠের বরগুনা প্রতিনিধি সোহেল হাফিজের বাসার সামনে ফের ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে।
আগামী ৩০ জানুয়ারি বরগুনা পৌরসভায় ভোটগ্রহণ হবে। এরই মধ্যে প্রার্থীরা তাদের প্রচারে ব্যস্ত। পৌর নির্বাচনের প্রচারের সময় এভাবে টানা তিনদিন ককটেল বিস্ফোরণ হলেও পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি।
বাসার সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় মঙ্গলবার বিকেলে বরগুনা সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হাফিজ।
তিনি নিউজ বাংলাকে বলেন, ‘একজন গণমাধ্যমকর্মী, আমার বাসার সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আমি রীতিমত আতঙ্কিত। আমি আশা করি বরগুনা জেলা পুলিশ এই দুর্বৃত্তদের আইনে আওতায় আনতে সক্ষম হবেন।’
বরগুনা শহরে গত শনিবার রাতে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি কার্যালয়ের কাছে পরপর দুটি ককটেল বিস্ফোরণ হয়। ফাইল ছবি
ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় সরাসরি স্বতন্ত্র প্রার্থীর দিকে অভিযোগের আঙুল তোলেন জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টুকু।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনি পরিবেশ অস্থিতিশীল করতে পৌরসভায় কিছু বহিরাগতদের আগমন ঘটানো হয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহাদাত হোসেনের ছত্রচ্ছায়ায় এসব ঘটনা ঘটানো হচ্ছে বলে আমরা ধারণা করছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আমাদের অনুরোধ, এদের আইনের আওতায় দাবি জানাচ্ছি।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহাদাত হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘ককটেল তারাই নিক্ষেপ করে যারা পৌর নির্বাচনকে ঘিরে শহরকে ভীতি ও আতঙ্কের জনপদে পরিণত করতে চায়। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী-সমর্থকরাই এমন ঘটনা ঘটাচ্ছে।
‘তাদের কারণে আমি অবরুদ্ধ, উসকানিমূলক বক্তব্যে আমার নির্বাচনি প্রচারণা বন্ধ রাখতে হয়েছে। আমার লোকজন কেউ ভয়ে বের হয় না, অথচ ককটেল নিক্ষেপের অপবাদ আমাকে দেয়া হচ্ছে।’
পরপর তিনদিন শহরের তিনটি পয়েন্টে ককটেল বিস্ফোরণ হলেও পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি। এসব ঘটনায় কারা জড়িত সে বিষয়েও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য বাহিনীটির কাছে নেই।
তবে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করার কথা নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেহেদী হাসান।
তিনি বলেন, ‘আমরা আলামত সংগ্রহ করেছি, দ্রুত ককটেল নিক্ষেপকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে।’