নাটোরের তিনটি পৌরসভায় সুষ্ঠু ভোট হলে জয়ের আশা করা বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুকে হতাশ হতে হয়েছে। তার নিজের এই এলাকায় জয় আসেনি একটি পৌরসভায়ও। একটিতে দলের প্রার্থী হয়েছেন পঞ্চম, একটিতে তৃতীয়। কেবল একটিতে বহু ব্যবধানে দ্বিতীয় হতে পেরেছেন ধানের শীষের প্রার্থী।
অতীতের নির্বাচনগুলোতে নাটোরে বিএনপির বেশ ভালোই শক্তি দেখা গেছে। সেখানে শনিবারের ভোটে এ্ই দশা কেন?
জেলা বিএনপি অভিযোগ তুলছে কারচুপির। তবে তা নাকচ করেছেন ধানের শীষে লড়া দুই প্রার্থীই। একজন কেবল অভিযোগ করেছেন ফল পাল্টে দেয়ার।
গত ১৬ জানুয়ারি শনিবার ভোট হয় গুরুদাসপুর, নলডাঙ্গা ও গোপালপুর পৌরসভায়। আগের দিন জেলা বিএনপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দলের নেতা দুলু বলেছিলেন, সুষ্ঠু ভোট হলে তিনটিতেই জয় আসবে তাদের।
কিন্তু হয়েছে উল্টো। তিনটিতেই বড় ব্যবধানে জিতেছেন নৌকার প্রার্থীরা। শুধু নলডাঙ্গায় নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পেরেছেন বিএনপির প্রার্থী। গোপলপুরে চার প্রার্থীর মধ্যে তৃতীয় আর গুরুদাসপুরে ছয় মেয়র প্রার্থীর মধ্যে পঞ্চম হয়েছেন ধানের শীষের প্রার্থী।
নির্বাচনে বিএনপির এমন ফলের কারণ জানতে সোমবার নিউজবাংলা কথা বলেছে দলটির তিন প্রার্থীর সঙ্গে। তাদের দুই জন বলেছেন, দলের নেতাকর্মীদের বেইমানিতে তারা হেরেছেন। তবে তিন প্রার্থীই সুষ্ঠু ভোট গ্রহণে প্রশাসনের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন।
যদিও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক বলছেন, ‘নেতাকর্মীরা আসলে দলের প্রার্থীর পক্ষেই ছিলেন। নির্বাচনে হেরে অভিমানে কেউ নিজ দলের লোকজনের বিরোধিতার কথা বলছেন।’
গুরুদাসপুর
পৌরসভার মোট ভোটার ২৫ হাজার চার জন। নির্বাচনে ১২টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়। মেয়র পদে ছয় জন লড়েন।
আওয়ামী লীগের শাহনেওয়াজ আলী মোল্লা সাত হাজার ৬৪০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী দলের বিদ্রোহী আরিফুল ইসলাম বিপ্লব পেয়েছেন চার হাজার ৯৪৫ ভোট।
বিএনপির আজিমুল হক বুলবুল পেয়েছেন সবে ৬৯২ ভোট। তার নিচে আছেন আর এক জনই।
এত কম ভোট পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে বুলবুল নিউজবাংলাকে বলেন, নিজের দলের লোকজনের বেইমানির কারণেই এই ভরাডুবি হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘গুরুদাসপুর থানা বিএনপির সভাপতি আব্দুল আজিজ নৌকার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। আজিজ নৌকার প্রার্থী শাহনেওয়াজ আলী মোল্লার সঙ্গে গোপনে একাধিক বৈঠক করেন।
‘এছাড়া নিজেদের পিঠ বাঁচানোর জন্য বিএনপি নেতা দুলাল সরকার, থানা যুবদল সভাপতি সময় হাসানসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বিপক্ষ প্রার্থীর হয়ে কাজ করেন।’
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের হুমকি-ধামকির কারণে দলের ভোটাররা কেন্দ্রে যাননি বলেও অভিযোগ করেন বিএনপির এই মেয়র প্রার্থী। আবার সুষ্ঠু ভোট গ্রহণে প্রশাসনের ভূমিকার প্রশংসাও করেছেন তিনি।
নাটোরের তিন পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থীরা অনেক আশা নিয়ে নির্বাচন করলেও হতাশায় ডুবতে হয়েছে তাদের। ছবি: নিউজবাংলা
নলডাঙ্গা
পৌরসভায় ভোটার আট হাজার ৬২৫ জন। এই নির্বাচনে নয়টি কেন্দ্রে প্রথমবারের মতো ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট হয়। মেয়র পদে প্রার্থী ছিলেন তিন জন।
আওয়ামী লীগের মনিরুজ্জামান মনির নৌকা প্রতীকে তিন হাজার ৬৩০ ভোট পেয়ে জিতেছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আব্বাস আলী নান্নু পেয়েছেন এক হাজার ৯১০ ভোট। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী সাহেব আলী পেয়েছেন এক হাজার ১৭৯ ভোট।
পরাজয়ের কারণ জানতে চাইলে নান্নু বলেন, ‘কেন্দ্রে কেন্দ্রে এজেন্ট বের করে দেয়া হয়েছে। বিএনপির ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে বাধা দিয়েছে সরকার দলীয় সমর্থকরা।’
তার অভিযোগ, ফল নিজের পক্ষে থাকলেও কারচুপির মাধ্যমে তাকে হারানো হয়েছে।
বিএনপির আব্বাস আলী নান্নু নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারলেও বিজয়ী থেকে তার ভোটের ব্যবধান অনেক
পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী হাফিজুল ইসলাম বলেছেন, ‘সারাদিন প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। শেষে ফলাফল পাল্টে দিয়েছে।’
এমন অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আছলাম। তিনি বলেন, ‘বিএনপির প্রার্থী যে অভিযোগ করেছে তা ভিত্তিহীন। নাটোরের নলডাঙায় প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোট হয়েছে। আর ইভিএমে ফল পাল্টানোর কোনো সিস্টেমই নেই।’
গোপালপুর
মোট ভোটার ১৭ হাজার ৫৩৫ জন। ভোট হয় নয়টি কেন্দ্রে। মেয়র পদে প্রার্থী ছিলেন চার জন।
আওয়ামী লীগের রোকসানা মোর্ত্তজা লিলি ছয় হাজার ৭৭৮ ভোট পেয়ে জিতেছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মনজুরুল ইসলাম বিমল পেয়েছেন পাঁচ হাজার ১৫২ ভোট। বিএনপির আবদুল্লা আল মামুন কচি এক হাজার ১২২ ভোট পেয়ে হয়েছেন তৃতীয়।
এত কম ভোট পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে বিএনপির প্রার্থী কচি জানান, জন্ডিসে আক্রান্ত হওয়ায় মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর ১২ দিন হাসপাতালে ছিলেন। ভোটের আগে মাত্র চার দিন গণসংযোগ করতে পেরেছেন।
নলডাঙায় তৃতীয় হন বিএনপি মেয়র প্রার্থী আবদুল্লা আল মামুন কচি
অসুস্থতার জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী বিমল তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অপপ্রচার চালিয়েছেন বলেও দাবি করেন কচি। বলেন, ‘বিএনপির তৃণমূল নেতারা অন্য প্রার্থীর কাছে বিক্রি হয়ে গিয়েছিলেন।’
তবে নির্বাচনে প্রশাসনের ভূমিকা ভালো ছিল বলে মনে করেন বিএনপির এই মেয়র প্রার্থী।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জেলা বিএনপির আহবায়ক আমিনুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেখে-শুনেই প্রার্থী মনোনীত করা হয়েছিল। বিভিন্ন সময়ে সরকার দলীয় প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের হুমকি-ধামকি ও ভয়ভীতির কারণে বিএনপির ভোটাররা কেন্দ্র যায়নি।
‘একই কারণে বিএনপির প্রার্থীরা প্রচার চালাতে পারেননি। ভোট কারচুপি তো ছিলই। বিএনপির নেতাকর্মীরা আসলে দলের প্রার্থীর পক্ষেই কাজ করেছেন। নির্বাচনে হেরে অভিমানে কেউ নিজ দলের লোকজনের বিরোধিতার কথা বলছেন, যা সত্যি নয়।’