পৌর নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ভোটে মীমাংসা হলো না কিশোরগঞ্জ পৌরসভার জয়-পরাজয়। এগিয়ে আওয়ামী লীগ। কেন্দ্র বাকি একটি। আপাতদৃষ্টিতে নৌকার জয় মনে হলেও আশা শেষ হয়ে যায়নি বিএনপির।
পৌরসভায় মোট ভোট কেন্দ্র ২৮টি। ফলাফল এসেছে ২৭টির। ৪৮৪ ভোটে এগিয়ে পারভেজ মিয়ার নৌকা।
তবে ঘোষণা করা হয়নি ফলাফল। কারণ, যে কেন্দ্রে ভোট স্থগিত হয়েছে, সেটাতে ভোটারের সংখ্যা এক হাজার ৮৫২। ফলে সেখানে ভোট নিতে হবে।
এই ভোট নিয়ে টানটান উত্তেজনা ছিল দিনভর। ভোটের পরদিনও সেই উত্তেজনা শেষ হয়নি। দুই পক্ষই হিসাব কষছে কী করতে হবে।
শনিবার বিকেল চারটায় ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর ফল আসতে থাকে। শহরের কেন্দ্রস্থলের কেন্দ্রগুলোতে নৌকা বড় ব্যবধানে এগিয়ে থাকলেও শহরতলীর কেন্দ্রগুলোতে জয় পায় ধানের শীষ।
সময় যত আগাতে থাকে, জয় পরাজয় নিয়ে দোলাচাল তত বাড়ে। কখনও নৌকা এগিয়ে যায়, কখনও এগিয়ে যায় ধানের শীষ। দুই দলের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে ভোট নিয়ে উৎসাহ জিইয়ে থাকে শেষ পর্যন্ত। সেটি এখনও বজায় আছে।
জয় পরাজয় নির্ধারণ হতে পারে যেভাবে
২৭টি কেন্দ্রে পারভেজ মিয়া পেয়েছেন ২০ হাজার ৯২২ ভোট। আর ইসরাইল মিঞা পেয়েছেন ২০ হাজার ৪৩৮ ভোট।
দুই পক্ষই বলছে, স্থগিত কেন্দ্রে ভোট শেষে জয় তাদেরই হবে।
বিএনপি এখনও আশা করার কারণটি হচ্ছে, যে কেন্দ্রটি স্থগিত হয়েছে সেটিতে অতীতের নানা নির্বাচনে জিতেছে তারাই।
আবার দুই পক্ষে ভোটের যে ব্যবধান, তা যে এক কেন্দ্রে ঘোঁচানো সম্ভব, সেটি এই নির্বাচনেও দেখা গেছে। শহরে একাধিক কেন্দ্র আছে, যেখানে ধানের শীষের তুলনায় নৌকা বা নৌকার তুলনায় ধানের শীষে এর চেয়ে বেশি ভোট পড়েছে।
২৭ নং জেলা স্মরণী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে মোট ভোটার দুই হাজার ৩৩৬। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ পেয়েছে ৯৯০ ভোট, বিএনপি পেয়েছে ৩৩২ ভোট। ব্যবধান ৬৫৮।
২৫ নং কিশোরগঞ্জ টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে নৌকা পেয়েছে এক হাজার ২৫৩ ভোট। ধানের শীষ পেয়েছে ৬১৭ ভোট। ব্যবধান ৬৩৬।
৩ নং আদর্শ সরকারি শিশু বিদ্যালয়ে শোলাকিয়া-১ (পুরুষ) কেন্দ্রে নৌকা পেয়েছে এক হাজার ৪৪ ভোট। ধানের শীষ পেয়েছে ৪৫৪ ভোট। ভোটের ব্যবধান ৫৯০।
৪ নং এসভি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শোলাকিয়া-১ (মহিলা) কেন্দ্রে নৌকা পেয়েছে ৯৮৯। ধানের শীষ পেয়েছে ৪১০ ভোট। ব্যবধান ৫৭৯ ভোট।
এমন আরও বেশ কিছু কেন্দ্র আছে, যেখানে নৌকার তুলনায় ধানের শীষ ৪৮৫ ভোট বেশি পেয়েছে।
১৬ নং সতাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মোট দুই হাজার ৫৩২ ভোটের মধ্যে নৌকা পেয়েছে ৫০৭ ভোট, ধানের শীষে পড়েছে ১১৭৩। ব্যবধান ৬৬৬।
১৭ নং পৌর কলেজিয়েট স্কুল কেন্দ্রে মোট দুই হাজার ৭৪৭ ভোটারের মধ্যে নৌকা পেয়েছে ৫০৯ ভোট, আর ধানের শীষ পেয়েছে ১১৩৮। ভোটের ব্যবধান ৬২৯।
১৮ নং তারাপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এক হাজার ৭৬০ ভোটারের মধ্যে নৌকা পেয়েছে ২৯৬ ভোট, আর ধানের শীষ ৯২৮ ভোট। ব্যবধান ৬৩২।
১২ নং সরকারি গুরুদয়াল কলেজে নৌকা পেয়েছে ৪৭২ ভোট। আর ধানের শীষে পড়েছে ৯৭০ ভোট। ব্যবধান ৪৯৮।
যে কেন্দ্রটিতে ভোট স্থগিত, সেটি বিএনপি অধ্যুষিত হিসেবেই পরিচিত। তার পরেও তিনটি কারণে বিএনপির জন্য এই ব্যবধান ঘোঁচানো কঠিন।
প্রথমত, ৪৮৪ ভোটের বেশি ব্যবধান ছিল যেসব কেন্দ্রে সেগুলোতে ভোটারের সংখ্যা স্থগিত কেন্দ্রের চেয়ে বেশি।
দ্বিতীয়ত, সামগ্রিকভাবে যে পরিমাণ ভোট পড়েছে, স্থগিত কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি হতে হবে আরও বেশি।
তৃতীয়ত, স্থগিত কেন্দ্রের পাশের কেন্দ্রে যে ব্যবধানে ধানের শীষ জিতেছে, তার চেয়ে দ্বিগুণ ব্যবধান হতে হবে।
শহরের নিউটাউন এলাকায় ওয়ালীনেওয়াজ খান কলেজে এবার কেন্দ্র ছিল দুটি। একটি ২০ নম্বর এবং একটি ১৯ নম্বর।
২০ নম্বর কেন্দ্রে ভোট স্থগিত হলেও ১৯ নম্বর কেন্দ্রে ভোট হয়েছে।
এই কেন্দ্রে এক হাজার ৮৬২ ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৯৬৯ জন। এর মধ্যে নৌকা প্রতীক পেয়েছে ৩৭৮ ভোট, আর ধানের শীষ প্রতীক পেয়েছে ৫৯১ ভোট। বিএনপি বেশি পেয়েছে ২১৪ ভোট।
এই কেন্দ্রে ভোট দানের হার ৫২ শতাংশ। আর সামগ্রিকভাবে ভোটের হার ৬২ শতাংশ।
স্থগিত কেন্দ্রে যদি ৫২ শতাংশ ভোট পড়ে তাহলে তাহলে ভোট পড়বে ৯৬৪টি। এর মধ্যে ধানের শীষে পড়তে হবে ৭২৫টি। আর নৌকায় পড়তে হবে ২৩৯ ভোট। নৌকায় তখন ২৪০টি ভোট পড়লে ফলাফল হবে সমান সমান। আর নৌকায় ২৪১টি পড়লে এক ভোটে জিতবে আওয়ামী লীগ।
আবার যদি ৬২ শতাংশ ভোট পড়ে, তাহলে সেখানে মোট ভোট হবে এক হাজার ১৮৪টি। তখন যদি নৌকায় ৩৩৪ ভোট পায়, তাহলেই আওয়ামী লীগের জয় হবে। এই পরিমাণ ভোট হলে বিএনপিকে পেতে হবে ৮১৭ ভোট। আর নৌকায় পড়তে হবে ৩৩১ ভোট।
বিএনপির প্রার্থী ইসরাইল মিঞা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্থগিত কেন্দ্রে ১৫০০ থেকে ১৬০০ ভোট পড়বে। মানুষ অবাধে ভোট দেয়ার সুযোগ পেলে ৯০ ভাগ ভোট আমি পাব।’
তার দাবি, এ কেন্দ্রের ভোট স্থগিত হওয়ায় তার প্রতি মানুষের সহানুভূতি আরও বেড়েছে। তাই পাশের ১৯ নম্বর কেন্দ্রের চেয়ে এখানে ব্যবধান বেশি হবে।
অপরদিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী পারভেজ মিয়া আশা করছেন, তিনি স্থগিত কেন্দ্রে জয় পাবেন।
তিনি বলেন, ‘একটি মাত্র কেন্দ্র হওয়ায় সকল নেতাকর্মী মিলে ভোটের কাস্টিং বাড়াতে চেষ্টা করব। বিএনপির লোকদের সহিংস আচরণের কারণেই এ কেন্দ্রটি স্থগিত হয়েছে। এ কারণে আমার প্রতি ভোটারদের সহানুভূতি বেশি কাজ করবে।’