নোয়াখালীর বসুরহাটের পৌরসভার ভোটকে নির্বাচনের মডেল হিসেবে উল্লেখ করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ধরনের নির্বাচনই দেখতে চান বলে মন্তব্য তার।
শনিবার দ্বিতীয়ধাপে যে ৬০টি পৌরসভায় ভোট হলো তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিল বসুরহাট। সেখানে ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জার কাছে পাত্তাই পেল না বিএনপি ও স্বতন্ত্র হিসেবে লড়াই করা জামায়াতের প্রার্থী।আরও পড়ুন: কাদেরের ভাইয়ের বিশাল জয়
প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী মিলিয়ে যত ভোট পেয়েছেন, কাদের মির্জা একাই পেয়েছেন তার কয়েকগুণ বেশি ভোট। নয়টি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে ভোট পড়েছে ১০ হাজার ৭৩৮টি। বিএনপির ধানের শীষে ভোট পড়েছে এক হাজার ৭৭৮। জামায়াত নেতার মোবাইল ফোনে পড়েছে এক হাজার ৪৫১টি।
দ্বিতীয় ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আলোচনা ছিল বসুরহাট নিয়ে। প্রচারের সময় মির্জা সুষ্ঠু ভোটের দাবিতে আন্দোলনে নেমে দেশজুড়ে মনযোগের কেন্দ্রে আসেন।
কাদের মির্জা বলেছিলেন, একটি ভোটও যদি কারচুপি করে নেয়া হয়, তাহলে তিনি মানবেন না। প্রশাসন কারচুপি করলে পা ভেঙে মোড়ে ঝুলিয়ে রাখার কথাও বলেন।
অবশ্য ভোটের দিন আর কোনো অভিযোগ করেননি কাদের মির্জা। জানান, কোনো অভিযোগ নেই তার, ভোট সুষ্ঠু হয়েছে।
নোয়াখালীর বসুরহাটে ভোট দেয়ার পরেই জয়ের প্রত্যাশার কথা জানিয়েছিলেন আবদুল কাদের মির্জা। তিনি জিতেছেন বড় ব্যবধানে। ছবি: নিউজবাংলা
বসুরহাটের এমন নির্বাচনকে মডেল বলছে ওবায়দুল কাদের। বিকেলে দ্বিতীয় ধাপের পৌরসভা নির্বাচন পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘এখানে বিএনপি প্রার্থীও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়টি স্বীকার করেছেন।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “বসুরহাটে যে নির্বাচন হয়েছে এমন নির্বাচনই চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ নির্বাচনকে অনেকেই স্বচ্ছতার জন্য ‘বসুরহাট মডেল’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।”
বসুরহাটের ভোটাররা বিএনপির মিথ্যাচারের জবাব দিয়েছে বলে মনে করেন ওবায়দুল কাদের।
‘দেশের ভোটের সংস্কৃতি নিয়ে বিএনপির মিথ্যাচারের জবাব নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভার ভোটাররাই দিয়েছে। বিএনপি ভোটে হারার আগেই হেরে বসে থাকে। তারা রাজপথ ভয় পায়, আন্দোলনেও ভয় পায়।’
কাদের বিএনপি মহাসচিবকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে গণমাধ্যম এবং রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আগ্রহ ছিল। সেখানেও অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। অন্ধকারে ঢিল না ছুঁড়ে নিজ দলের প্রার্থীর কথা অনুধাবন করুন।’
ওবায়দুল কাদের বলছেন, বিএনপির প্রার্থীরা ভোটের পরিবেশ ও ভোটাধিকার প্রয়োগ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও তাদের কেন্দ্রীয় নেতারা শুধুমাত্র সমালোচনার জন্য সমালোচনা করছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
নির্বাচনে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ভোটার ও নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিএনপি ভোটের মাঠে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকার আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে মাঝে মধ্যে। তারা কল্পিত অভিযোগ এনে ভোটের মাঠ ত্যাগ করে তাদের চর্চিত নেতিবাচক রাজনীতির ঐতিহ্য ধরে রাখার অপচেষ্টা করে।
‘আওয়ামী লীগ একটি সুসংগঠিত রাজনৈতিক দল। আমরা আদর্শের রাজনীতি করি। জনগণের চোখের ভাষা, মনের ভাষা বুঝে রাজনীতি করে আওয়ামী লীগ। তাই পরিবারের কে কোথায় কি বলল, সেটা বিষয় নয়। প্রত্যেকের ব্যাক্তিগত অপিনিয়ন থাকতে পারে।’
ওবায়দুল কাদের মনে করেন, আওয়ামী লীগ পরিবারে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ রয়েছে। আবার গঠনতন্ত্র বিরোধী কার্যকলাপের জন্য শাস্তির বিধানও যথাযথভাবে কার্যকর করা হয়, যা বিএনপির রাজনৈতিক চর্চায় নেই।
ইভিএমে ভোট দিচ্ছেন এক ভোটার
নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘বিএনপি উদ্দেশ্যমূলক বিরোধিতা করলেও দেশের জনগণ অত্যন্ত সাবলিলভাবে ইভিএমে ভোট দিয়েছে। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে জনগণ ইতিমধ্যে অভ্যস্ত হয়ে উঠলেও বিএনপির মানসিকতা এখনও এনালগ রয়ে গেছে। তাই তারা এ পদ্ধতির বিরোধিতা করে।
‘বিএনপি মুখে স্বচ্ছতার কথা বললেও প্রকৃতপক্ষে প্রযুক্তিবিমুখ এবং পিছিয়ে পড়া ধ্যানধারণা আঁকড়ে ধরে বসে থাকতে চায়। দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার যে অপপ্রয়াস বিএনপি অবিরাম চালিয়ে যাচ্ছে, তা আর হালে পানি পাচ্ছে না। জনগণ এখন আর বিএনপি নেতাদের মিথ্যাচারে বিশ্বাস করে না।’