বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সিরাজগঞ্জে মেয়র পদে জোর করে সিল

  •    
  • ১৬ জানুয়ারি, ২০২১ ১৯:৪০

একাধিক ভোট কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, কাউন্সিলর পদে স্বাধীনভাবে ভোট দিয়েছেন ভোটাররা। তবে মেয়র পদে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে বাধ্য করা হয়েছে।

‘লজ্জাই লাগে! কী আর বলব? আমাদের সামনেই সিল মারছে। এসব দেখে ওদের বললাম, ভেতরে গিয়ে যা করার করো। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করতে পারিনি। মূল কথা আমাদের সে ক্ষমতা দেয়া হয়নি। উপর মহলের ইচ্ছায় সব হয়েছে। মুখ বুঝে সহ্য করা ছাড়া উপায় নেই।’

নিজের অপারগতা জানিয়ে আক্ষেপের সুরে কথাগুলো বলছিলেন সিরাজগঞ্জ সদর পৌরসভা নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করা একজন শিক্ষক।

তার কেন্দ্রে দুপুর দুইটা পর্যন্ত ৬০ ভাগের বেশি ভোট পড়েছে। কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ভোট গ্রহণে কোনোও অনিয়ম হয়নি। তবে মেয়র পদে নৌকার প্রার্থীর বাইরে অন্য কাউকে ভোট দেয়ার সুযোগ পাননি সাধারণ ভোটাররা।

তবে দুই একটা ভোট নৌকার ব্যাজধারীরাই ধানের শীষ ও মোবাইল ফোন প্রতীকে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন এই প্রিসাইডিং অফিসার।

সিরাজগঞ্জ পৌরসভার ৫৭টি কেন্দ্রের প্রায় সবকটিতে এমন চিত্র দেখা গেছে। নির্বাচনের মাঠে বিএনপি বা স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের প্রকাশ্য উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। নৌকার বাইরে অধিকাংশ কেন্দ্রে অন্য কোনও প্রার্থীর এজেন্টদেরও খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে মেয়র পদে নৌকার এবং কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলরদের এজেন্টদের দেখা গেছে।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ হয়েছে। প্রায় ৭৫ ভাগ ভোট কাস্ট হয়েছে।’

তবে তার বক্তব্য আর কেন্দ্রের পরিস্থিতি একেবারেই বিপরীত।

বেলা ১১টার দিকে শহরের রজব আলী মেমোরিয়াল বিজ্ঞান ডিগ্রি কলেজের প্রবেশমুখে দেখা যায়, কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থকরা অবস্থান নিয়েছেন। একেকজন ভোটারকে আসতে দেখলেই নিজের সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীকে ভোট দিতে আহ্বান জানাতে দেখা যায়।

বাইরে মেয়র পদে বিএনপি বা স্বতন্ত্র মোবাইল ফোন প্রতীকের সমর্থক কাউকে দেখা যায়নি। সর্বত্রই ছিল নৌকার কর্মী সমর্থকদের ছড়াছড়ি।

ভোটকেন্দ্রে কী হচ্ছে, তা বাইরে থেকেই অনুমান করা গেছে। কলেজের ভেতর ৭ নম্বর বুথে গিয়ে দেখা যায়, কক্ষের সামনে লম্বা লাইন। একজন করে বুথ থেকে বের হচ্ছেন আরেকজন ঢুকছেন।

একটি বেঞ্চে সারিবদ্ধভাবে বসা একজন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার, দুই জন পোলিং অফিসার। ভোটাররা ভেতরের প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে ভোটার তালিকা দেখে মিলিয়ে নিচ্ছেন। এরপর একজন তিনটি ব্যালট দেন। মেয়র পদে তিন প্রার্থীর জন্য একটি, কাউন্সিলদের জন্য একটি এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলরদের জন্য একটি।

কিন্তু তিনটি ব্যালট ও সিলসহ গোপন কক্ষে গিয়ে ভোট দিতে পারছেন না কোনও ভোটার। সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারের পাশে আরেকটি হাইবেঞ্চের উপর কখনও বসে, আবার কখনও দাঁড়িয়ে থেকে নৌকার এজেন্ট মেয়রের ব্যালটটি নিয়ে নিচ্ছেন। নিজেই নৌকায় সিল দিচ্ছেন এবং বাক্সে ফেলছেন। বাকি দুটি ব্যালট নিয়ে নিজের ভোট দিচ্ছেন ভোটাররা।

কেন্দ্রটিতে অন্তত আধা ঘণ্টা অবস্থান করে এই দৃশ্য দেখা যায়। কেন্দ্রের অন্যান্য বুথগুলোতেও একইভাবে ভোট নিতে দেখা যায়।

সিরাজগঞ্জ সবুজ কানন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, আলিয়া মাদ্রাসা, দারুল ইসলাম একাডেমি কেন্দ্রেও এ চিত্র দেখা গেছে।

অন্যান্য কেন্দ্রের মতো ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ভোট হয়েছে বলে দাবি করেন কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার নজরুল ইসলাম। বিকেল ৩টার দিকে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে ২৪৫০ ভোটার রয়েছে। বেলা ২টা পর্যন্ত ৬০ ভাগের বেশি ভোট পড়েছে।’

মেয়র পদে ভোটারদের ভোট দিতে না দেয়ার প্রতিবাদে ফলাফল বর্জন করেছেন বিএনপির প্রার্থী সাইদুর রহমান বাচ্চু। ভোট শেষে বেলা ৪টায় তিনি এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।

ভোট শেষ হওয়ার পর কেন প্রত্যাখ্যান করলেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা ভোটের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করেছি।’

ভোট শেষে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া

বিকেল ৪টায় ভোট শেষ হতেই নগরীর একটি জায়গায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। নগরীর মুজিব সড়কে মুক্তা প্লাজার সামনে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে এই উত্তেজনা দেখা দেয়।

দুই পক্ষকেই ইট পাটকেল ছুড়তে দেখা গেছে। প্রায় ১০ মিনিট ধরে চলা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

ভোট শেষ হতেই সিরাজগঞ্জ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। ছবি: নিউজবাংলা

সিরাজগঞ্জ সদর পৌরসভায় মেয়র পদে ভোট করেছেন তিন জন। আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী সৈয়দ আব্দুর রউফ মুক্তা। বিএনপির সাইদুর রহমান বাচ্চু ছাড়া অপর প্রার্থী স্বতন্ত্র থেকে লড়া নূরে আলম হেলাল।

পৌরসভার ১৫টি ওয়ার্ডে সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর প্রার্থী ২৯ জন। সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ৮৬ জন।

মোট ভোটার এক লাখ ১৩ হাজার ৯২৬, পুরুষ ৫৫ হাজার ৯২৮ ও মহিলা ৫৭ হাজার ৯৯৮ জন।

এ বিভাগের আরো খবর