পৌরসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় পর্বের ভোটকে উৎসব বলছে নির্বাচন কমিশন। প্রথম ধাপের মতোই ৬০ শতাংশের বেশি ভোটার উপস্থিতি হতে পারে বলে ধারণা করছে তারা।
শনিবার ৬০টি পৌরসভায় ভোট চলার সময় গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় কমিশনের কর্মকর্তারা এই মূল্যায়ন করেন।
ভোটের মূল্যায়ন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের উপসচিব আতিয়ার রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কিশোরগঞ্জের একটি কেন্দ্র ছাড়া আর কোথাও ভোট বন্ধের খবর আসেনি। ভোটারের উপস্থিতিও আশাব্যঞ্জক। তৃণমূলের এ ভোটকে উৎসবই বলা যায়।’
গত জাতীয় নির্বাচনের পর বিভিন্ন ভোটের খরা নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে ব্যাপক সমালোচনায় পড়তে হয়। তবে প্রথম ধাপের পৌর নির্বাচনের আগে রাষ্ট্রপতির কাছে ৪২ নাগরিকের চিঠির পর অনেকটাই পাল্টে গেছে পরিস্থিতি।
২৮ ডিসেম্বরের ভোটে ২৪টি পৌরসভাতেই ব্যাপক ভোটার উপস্থিতি, বেশিরভাগ এলাকাতেই নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ নিয়ে আলোচনা চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।
দ্বিতীয় ধাপেও ৬০ পৌরসভায় কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটারের সারি দেখে কমিশন অনেকটাই নির্ভার।
এবার যেসব এলাকায় ভোট হয়েছে, তার মধ্যে মেয়র পদে ভোট হয়েছে ৫৬টিতে। বাকি চারটিতে একক প্রার্থী থাকায় ভোটের দরকার পড়েনি।
প্রথম ধাপে ২৪টি পৌরসভার সবগুলোতে ইভিএমে ভোট হলেও দ্বিতীয় ধাপে ৩২টিতে ভোট হয়েছে ব্যালটে। বাকিগুলোতে ভোট হয়েছে ইভিএমে।
যেসব কেন্দ্রে সনাতন পদ্ধতিতে ভোট হয়েছে, সেগুলোতে এবার প্রথমবারের মতো ভোটের সকালে কেন্দ্রে পাঠানো হয় ব্যালট পেপার।
অবশ্য পুরোপুরি বিতর্কমুক্ত ভোট করা যায়নি। ছয়টি পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থীরা ভোট বর্জন করেছেন কারচুপির অভিযোগে। সিরাজগঞ্জ পৌরসভাতে মেয়র পদে ভোটারদেরকে প্রকাশ্যে সিল দিতে বাধ্য করার অভিযোগ করা হয়েছে বিএনপির পক্ষ থেকে।
শৈলকুপায় কেন্দ্রের উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ। ছবি: নিউজবাংলা
কিশোরগঞ্জ পৌরসভায় একটি কেন্দ্রে সংঘর্ষের পর সেখানে ভোট স্থগিত করা হয়েছে। সারা দেশে এই একটি কেন্দ্রেই কেবল স্থগিত হয়েছে ভোট।
তবে এবার নোয়াখালীর বসুরহাট ও কুষ্টিয়ার সদর পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থীরা নির্বাচনের প্রশংসা করেছেন।
বসুরহাটে বিএনপির প্রার্থী কামাল উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, ‘অবশ্যই আমি ফলাফল মেনে নেব। এই সুন্দর নির্বাচনের ফলাফল না মানলে আমি কেন রাজনীতি করি?’
কুষ্টিয়ায় বিএনপির প্রার্থী বশিরুল আলম চাঁদ। তিনি বলেন, ‘অনেক দিন পর সুষ্ঠু পরিবেশে নিজের ভোট দিতে পারলাম।… ব্যালট সকালে কেন্দ্রে আসায় ভোটারদের মধ্যে আস্থা ফিরে এসেছে।’
যদিও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ভোটের পরিস্থিতি পাল্টায়নি। জোর করে কেন্দ্র দখল করেছে ক্ষমতাসীনরা।
নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব আসাদুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভোট উৎসবের খবরই আমরা মাঠ থেকে পাচ্ছি। যেহেতু এটা স্থানীয় নির্বাচন, দলীয় পরিচয়ের বাইরেও এসব নির্বাচনে ভোটারদের বাড়তি আগ্রহ থাকে। তা ছাড়া কাউন্সিলররাও ভোটারদের কেন্দ্রে আনতে ঘরে ঘরে গিয়ে প্রচারণা চালান।
‘ইসিও ভোটারদের ভোট দেয়া নিশ্চিত করতে পেরেছে বলেই ভোটার আসছে’- বলেন কমিশনের এই কর্মকর্তা।
কমিশনারদের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য না এলেও গত কয়েক বছর ধরে ভিন্নমত দিয়ে আলোচনায় আসা কমিশনার মাহবুব তালুকদার কথা বলেছেন গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে।
নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার সাভারের একটি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন। ছবি: নিউজবাংলা
সাভারের কয়েকটি কেন্দ্র পরিদর্শন করে তিনি বলেছেন, তার প্রতিক্রিয়া ‘মিশ্র’। তিনি বলেছেন, ‘আশার আলোর কথা এই মুহূর্তে বলতে পারব না। আশা করি নির্বাচন নির্বিঘ্ন হবে, শান্তিপূর্ণ হবে এবং বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় যে সহিংসতা হয়েছে সেটা থেকে বেরিয়ে আসতে পারব।’
সাভারের যে কেন্দ্রগুলোতে মাহবুব তালুকদার গিয়েছিলেন, তার একটিতেই কেবল বিএনপির এজেন্ট দেখেছেন। কেন্দ্রে কেন্দ্রে ধানের শীষের পোস্টারও দেখেননি তিনি।
গত ২৮ ডিসেম্বরে প্রথম ধাপের নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৬৫ শতাংশ।