বহু বছর পর যেন নির্বাচনি উৎসবের স্বাদ পাচ্ছে নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার বাসিন্দারা। ভোটকেন্দ্রে তাদের স্বতঃস্ফুর্ত উপস্থিতি আর উচ্ছ্বাস তাই বলছে। নয়টি কেন্দ্রের সবকটিতেই ভোটারদের লাইন।
সবাই নিজ থেকেই কেন্দ্রে এসেছেন নিজের ভোট নিজে দিবেন বলে। একেতো নতুন পদ্ধতি ইভিএম, অন্যদিকে সুষ্ঠু ভোটে উৎসবের ছোঁয়া লেগেছে, তাই ভোটারা এসেছেন নিজ তাগিদেই। যারা আসতে চাননি তাদেরও সুষ্ঠু ভোটের ভরসা দিয়ে বাড়ি থেকে ডেকে এনেছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা।
সকাল আটটায় ১ নম্বর ওয়ার্ডের উদয়ন প্রি ক্যাডেট একাডেমি কেন্দ্রে প্রথম ভোটটি দেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আবদুল কাদের মির্জা। সেখানে সকাল থেকেই ছিল নারী ভোটারদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মত। বিপরীতে পুরুষ ভোটারদের লাইটা খুব ছোট। সকালে প্রতিটি কেন্দ্রের চিত্র এক। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে পুরুষ ভোটারদের উপস্থিতিও বাড়ে।
পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের বসুরহাট এ এই সি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোট দিতে আসেন সামসুন্নাহার। দুপুরে রান্নঘরের ব্যস্ততা বাড়বে তাই সকাল সকাল এসে লাইনে দাড়িঁয়েছেন। বলেন, ‘তিনবার নিজের ভোট দিতাম পারিনাই, আইজকা দিমু। আমার ভোট অইন্নরা দিয়া দিত, ভোট দিতাম আইলে কইতে ভোট নাই যানগা।’
পৌরসভার ভোটে উৎসবের আমেজে বসুরহাটবাসী। ছবি: নিউজবাংলা
একই কেন্দ্রে কথা হয় আশি বছর বয়সী ভোটার ওবায়েদ মোল্লার সঙ্গে। বার্ধক্যের কারণে চলাচলই কঠিন, তবু লাঠি ভর করে অন্য এক জনের সহায়তা নিয়ে এসেছেন ভোট দিতে। বলেন, ‘২০০১ সালের পর থিক্কা ভোট দিয়া শান্তি নাই, সব চুরি কইরা লইয়া যায়, এইবার নিজের ভোট নিজে দিয়্যুম।’
সামুসুন্নাহার ও ওবায়েদের মত আরও অনেক অসংখ্য ভোটারের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার। সবার অভিজ্ঞতাই এক। আগে নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি।
এই নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীরা তিন জন সঙ্গে আছেন ২৫ জন কাউন্সিলর প্রার্থী। ভোটারদের মত তারাও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে। ভোট দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিন মেয়র প্রার্থীই একই সুরে কথা বলেছেন।
পৌরসভা নির্বাচনে স্বতঃস্ফুর্ত ভোট দিচ্ছেন বসুরহাটের ভোটাররা। ছবি: নিউজবাংলা
প্রথা ভেঙে সুষ্ঠু নির্বাচনি পরিবেশ তৈরিতে অবদান রাখায় আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থীকে ধন্যবাদ জানান বিএনপি ও জামায়াতের দুই মেয়র প্রার্থী।
রিটার্নিং অফিসার, নোয়াখালী জেলার সিনিয়র নির্বাচনী কর্মকর্তা রবিউল আলম টেলিফোনে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে কোনো অভিযোগ পাননি কোনো প্রার্থীর কাছ থেকে। শুধুমাত্র মোবাইফোন মার্কার মেয়র প্রার্থী বলেছেন ভোট গ্রহণের ধীর গতির কথা। সেটাতো মেশিন আমাদের হাতে কিছু নাই। অনেক সময় বাকি আছে সব ভোটারই তাদের ভোট দিতে পারবেন।’
বিগত সময়ের নির্বাচনের চিরচেনা পরিবেশ থেকে বসুরহাটের এই নির্বাচনে পার্থক্য দৃশ্যমান কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ বুথেও। সব কেন্দ্রেই উপস্থিত ছিল আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতের পোলিং এজেন্টরা। এবার দায়িত্ব পালনে কেউই বাঁধার মুখে পড়েননি।
উত্তর পূর্ব চর কাঁকড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পাশাপাশি বসে কাজ করছেন আওয়ামীলীগ-বিএনপি-জামায়াত প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট কাদের-পলাশ-মিশু। নিউজবাংলাকে তারা জানান, ভোট গ্রহণে কোন অনিয়ম ধরা দেয়নি তাদের চোখে।
ভোটকেন্দ্রের বাইরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল। ছবি: নিউজবাংলা
নির্বাচনি পরিবেশ ঠিক রাখতে তৎপর আছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। কেন্দ্রের ভিতরের শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ-আনসার সদস্যরা একসঙ্গে কাজ করেছেন, ভোটার ছাড়া প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের প্রবেশ করতে দেয়া যায়নি কোনো কেন্দ্রে। ভোটকেন্দ্রে রয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কড়া নজরদারি।
নিয়মিত টহল চালিয়ে যাচ্ছে র্যাব- বিজিবি। নোয়াখালী জেলার পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমরা সতর্ক আছি, কেউ নির্বাচনি পরিবেশ নষ্ট করতে পারবে না। পরিবেশ ঠিক রাখতে আমরা ভোটার ও ভোট সংশ্লিষ্ট ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দিচ্ছিনা। আমাদের নজরদারি অব্যাহত আছে।’