বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘ইবার ভোটের পরিবেশ বালা, কুনু ডর নাই’

  •    
  • ১৬ জানুয়ারি, ২০২১ ১৪:০২

‘গত ইলেকশনো (জাতীয় সংসদ নির্বাচনে) বুট দিতে ফারছি না। গ্যাঞ্জাম অইত ফারে অউ ডরে ফুয়াইনতে আইতে দিছুইন না। ইবার পরিবেশ মুটামুটি ঠান্ডা। এর লাগি নাতনিরে লই বুট দিতে আইছি। খাউন্সিলর ফ্রার্তিয়ে (প্রার্থী) রিকশাও ফাঠাইছলা।’

মাঘ আসতেই শীত যেন যৌবন ফিরে পেয়েছে। একেবারে হাড় কাঁপানো অবস্থা। এমন শীতে কুয়াশার প্রায় অন্ধকার সকালে লাঠিতে ভর দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছেন আফিয়া খাতুন।

বয়স পেরিয়েছে ৯০। বয়স, শীত, কুয়াশা কিছুই ঘরে আটকাতে পারেনি আফিয়াকে। চলে এসেছেন কেন্দ্রে।

শনিবার সকালে সুনামগঞ্জের ছাতক পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চন্দ্রনাথ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে কথা হয় আফিয়া খাতুনের সঙ্গে। নাতনিকে নিয়ে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি।

আফিয়া খাতুন বলেন, ‘গত ইলেকশনো (জাতীয় সংসদ নির্বাচনে) বুট দিতে ফারছি না। গ্যাঞ্জাম অইত ফারে অউ ডরে ফুয়াইনতে আইতে দিছুইন না। ইবার পরিবেশ মুটামুটি ঠান্ডা। এর লাগি নাতনিরে লই বুট দিতে আইছি। খাউন্সিলর ফ্রার্তিয়ে (প্রার্থী) রিকশাও ফাঠাইছলা।’

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ভোটারদের লাইন। ছবি: এম এ হামিদ/নিউজবাংলা

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ পৌরসভার বাসিন্দা দীপিকা মালাকার সিলেটের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। জীবনে প্রথমবারের মতো ভোট দিলেন।

বলেন, ‘গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেটে থাকায় ভোট দিতে পারিনি। তাই আজকের সুযোগটা মিস করিনি। নিজেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে।’

কমলগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ভোট দেন দীপিকা।

এই কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন শতাধিক নারী। এ তুলনায় পুরুষের উপস্থিতি কম। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা নিয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন কয়েক জন। বুথ বাড়ানোর দাবিও জানিয়েছেন তারা।

দ্বিতীয় ধাপের পৌর নির্বাচনে সিলেট বিভাগের সাতটি পৌরসভায় ভোট চলছে। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া ও কমলগঞ্জ, সুনামগঞ্জের সদর, ছাতক ও জগন্নাথপুর এবং হবিগঞ্জের মাধবপুর ও নবীগঞ্জে প্রতিনিধি নির্বাচন করছেন ভোটাররা।

এসব পৌরসভার প্রায় প্রতিটি ভোটকেন্দ্রেই দেখা গেছে ভোটারদের ভিড়। সবগুলোতেই পুরুষের তুলনায় নারীদের উপস্থিতি বেশি।

সুনামগঞ্জ সদরে একটি কেন্দ্রের বাইরে ভোটারদের লাইন। ছবি: মোসাইদ রাহাত/নিউজবাংলা

সুনামগঞ্জের ছাতকের স্থানীয় সাংবাদিক ছদরুল আমিন। তিনি বলেন, ‘পৌরসভা নির্বাচনে এত সংখ্যক ভোটারের উপস্থিতি আগে কখনও দেখিনি। এবার সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোটাররা আসছেন। এদের মধ্যে নারীরাই বেশি।’

কুলাউড়ার আমীর-সলফু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এসেছিলেন ৭০ বছর বয়সী কটরা বিবি। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। লাইনেই বসে পড়েন। তবু ভোট না দিয়ে কেন্দ্র ছাড়েননি।

কটরা বিবি বলেন, ‘কেন্দ্রে আসছি যখন ভোট না দিয়ে যাব কেন? আমি না দিলে অন্য কেউ আমার ভোট দিয়ে দেবে।’

মাধবপুর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অর্চনা দাশ। সকালেই ভোট দিতে কেন্দ্রে এসেছেন তিনি। বলেন, ‘ইবার ভুটের পরিবেশ বালা। কুনু ডর নাই। এরলাগি ভুট দিতে আইছি।’

বেলা দেড়টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সিলেট বিভাগের কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। বেশিরভাগ কেন্দ্রেই ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানা যাচ্ছে।

নবীগঞ্জ পৌরসভার সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা দেবশ্রী দাস পার্লি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ ভোট হচ্ছে। অত্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হচ্ছে। ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক।’

যেখানে ভোট ইভিএমে হচ্ছে, সেখানে উৎসাহ আরও বেশি।

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে বাসুদেব বাড়ি এলাকার মীরা দেব বলেন, ‘মেশিনের মাধ্যমে কীভাবে ভোট দেয় সেটা দেখার আগ্রহ ছিল। এই আগ্রহ থেকে সকালেই কেন্দ্রে চলে এসেছি। তা ছাড়া কোনো মারামারির ঘটনা ঘটেনি।’

উপজেলা নির্বাচন ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান বলেন, ‘অত্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হচ্ছে। বেলা ১২টা পর্যন্ত ৩০ শতাংশ ভোট পড়েছে।’

বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি সিলেটের সভাপতি শিরিন আক্তার বলেন, ‘সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে অনেকে ভোট দেয়ার সুযোগ পাননি। বিশেষত নারীরা ঘর থেকে বের হননি। তবে এবার পরিবেশ তুলনামূলক ভালো।

‘এ ছাড়া স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থীরাও বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের নিয়ে আসেন। সবমিলিয়ে ভোটার উপস্থিতি বেড়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর