নেত্রকোণার কেন্দুয়া পৌরসভার সাউদপাড়া এলাকার বাসিন্দা আমেনা খাতুন। ৯৩ বছর বয়সী এ নারী জীবনে অনেক বার ভোট দিয়েছেন। তবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) এবারই প্রথম ভোট দেন তিনি। এ নিয়ে উচ্ছ্বাস দেখা গেছে তার চোখে-মুখে।
দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে শনিবার বেলা ১১টার দিকে কেন্দুয়া সরকারি কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিতে যান আমেনা। বাড়ি থেকে রিকশা করে এলেও ভোটকেন্দ্রে ঢোকেন নাতি ইমরান মিয়ার কোলে চড়ে।
ভোট দেয়া শেষে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে আমেনা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হারা জীবন কত ভোট দিছি চিল (ছিল) মাইরে। এইবার আঙ্গুলে টিপ দে বুট দিছি। বালা লাগছে।’
আমেনা খাতুনের নাতি ইমরান মিয়া বলেন, ‘ইবিএমে বুটের কথা হোনার পরেত্তে (পর থেকে) দাদি ভোট দিয়াম দিয়াম করতাছে। লইয়া আইলাম। বুট দিছে। ইবিএমে বুট দে দাদি কুব কুশি অইছে।’
নেত্রকোণায় দুইটি পৌরসভায় চলছে নির্বাচন। এর মধ্যে কেন্দুয়া পৌরসভায় ভোট চলছে ইভিএমে। আর মোহনগঞ্জ পৌর নির্বাচনের ভোট হচ্ছে ব্যালটে।
কেন্দুয়ায় চলা ইভিএমে ভোট মন ছুঁয়েছে জ্যেষ্ঠ ভোটারদের। ইভিএমে ভোট দিতে তাদের আগ্রহের শেষ নেই। কেউ স্বজনদের কাঁধে চড়ে, কেউবা স্বজনদের কোলে চড়ে কেন্দ্রে কেন্দ্রে যাচ্ছেন ভোট দিতে।
তেমনই এক জন কেন্দুয়া পৌর শহরের কান্দিউড়া এলাকার বাসিন্দা মস্কান মিয়া। ভোটার আইডি কার্ড অনুযায়ী, তার বয়স ১০১ বছর; ভাতিজার কাঁধে চড়ে এসেছেন ভোট দিতে। তিনি ভোট দিয়েছেন আলীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে।
১০১ বছর বয়সী মস্কান মিয়া। ভোট দিতে এসেছেন ভাতিজার কাঁধে চড়ে। তিনি ভোট দিয়েছেন আলীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে। ছবি: নিউজবাংলা
প্রবীণ এ ভোটার বলেন, ‘কয়ডা দিন বাঁচি না বাঁচি আর কুনু বুট দিতারি, না দিতারি কুনু টিক নাই। সহাল সহাল বুট দিতাম আইয়া পরছি। আগের তেইক্যে বুট দিছি সোজাই।’
তার ভাতিজা আবু জাফর বলেন, ‘চাচা ১০০ বছর পার কইরা ফালাইছে। আগের মত চলতে ফিরতে পারেনা। কাইল রাত থ্যাইকা বুট দেয়নের লাইগ্যা কইতাছে। সহালে ভোট দেয়নের লাইগ্যা বাউ অইয়া ডাহাডাহি করতাছে। লইয়া আইলাম কেন্দ্রে। বুট দিছে। মনডায় অহন শান্তি পায়ছে।’
কেন্দুয়া সরকারি কলেজ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হায়দার জাহান জানান, কেন্দ্রটিতে ২ হাজার ৭০১টি ভোট রয়েছে। বেলা ১১টা পর্যন্ত ৫০২টি ভোট পড়েছে। এখানে ভালভাবে ভোট গ্রহণ চলছে।
সকালে কেন্দুয়া পৌরসভার বিএনপির মেয়র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ভোটের পরিবেশ ভাল আছে। এভাবে ভোট হলে জয়ী হবো।’
নৌকার প্রার্থী আসাদুল হক ভুঁইয়া বলেন, ‘সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে ভোট হচ্ছে, ভোটার খুব আগ্রহে ভোট দিচ্ছেন।’
কেন্দুয়া পৌরসভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান মেয়র আসাদুল হক ও বিএনপির প্রার্থী উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ভোট যুদ্ধে রয়েছেন। এখানে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৪ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১৩ জন লড়ছেন।
অন্যদিকে মোহনগঞ্জ পৌরসভা ভোটের সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা জহিরুল হক জানান, মেয়রপদে চার জন, ৩৯ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১৪ জন লড়ছেন।