সিরাজগঞ্জ পৌরসভায় শহরের কেন্দ্রগুলোতে ভোটের পরিবেশ ভালো থাকলেও শহরতলী বা একটু দূরের কেন্দ্রগুলোতে কারচুপির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থীর অভিযোগ, দূরের কেন্দ্রগুলোতে কাউন্সিলর পদে ভোটাররা স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারলেও মেয়র পদে নৌকায় ভোট দিতে বাধ্য করছে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা।
যদিও রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেছেন, দুই একটি জায়গায় ছোটখাট অভিযোগ এলেও সামগ্রিকভাবে পরিবেশ ভালো।
বিএনপি প্রার্থীর অভিযোগ পেয়ে শহর থেকে আনুমানিক দুই কিলোমিটার দূরের দারুল ইসলাম একাডেমি কেন্দ্রে গিয়ে এর সত্যতা পেয়েছে নিউজবাংলা।
কেন্দ্রের প্রবেশমুখে একটি ফোনালাপ পাশ থেকে শোনা যায়, যাতে একজন কীভাবে ভোট দিতে হবে, তার বর্ণনা দিচ্ছিলেন।
তিনি ফোনে একজনকে বলছিলেন, ‘কাউরে কিছু কইবা না। ভোট দিতে আসছো, দুইটা ব্যালট দিবা। এ নিয়া আওয়াজ যেন বাইরে না আসে।’
ওই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার সুযোগ ছিল না। তাকে ঘিরে ছিলেন বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক কর্মী। তারা ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক-এটা বোঝা যায়।
এই কেন্দ্রে মেয়র পদে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পেরে আক্ষেপ করেন ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার হেলাল।
তিনি বলেন, ‘ভোট দুই কাউন্সিলরে দিবার পারছি, মেয়র তো ওরাই দিছে।’
ভেতরে ভোট গ্রহণের প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভোটার স্লিপ দেখিয়ে ব্যালট নেয়ার সময় দুইটা ব্যালট দেন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার। মেয়রেরটা দেন না।’
‘মেয়রটা চাইলে বলেন পাশে থাকা নৌকার সমর্থকরা বলে ‘নৌকায় দিবা, তাইলে দিয়ে দিচ্ছি, সামনেই সিল মারো। নইলে কাউন্সিলর দুইটা দিয়ে বের হও।’
বাধ্য হয়ে মেয়র পদে নিজে ভোট না দিয়েই কেন্দ্র থেকে বের হন হেলাল। তিনি বলেন, ‘আমার সামনেই ওরা নৌকায় ভোট দিয়ে বাক্সে ফেলছে।’
দারুল ইসলাম একাডেমি মহিলা কেন্দ্রের ভোটার রাজিয়া খাতুনও একই কথা বললেন।
তিনি বলেন, ‘আমাকে ধানের শীষে ভোট দিতে দেয় নাই। তারাই নৌকায় ভোট দিছে।’
সরেজমিনে দারুল ইসলাম একাডেমি কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, দুটি ভবনে নারী ও পুরুষদের ভোট নেয়া হচ্ছে। কেন্দ্রের বাইরে ও ভেতরে বিভিন্ন প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ভোটারদেরও লাইন ধরে থাকতে দেখা গেছে। কেন্দ্রের ভেতর ভোট প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকা ব্যক্তিদের বাইরেও অসংখ্য মানুষের উপস্থিতি পাওয়া যায়।
তবে মেয়র পদে ব্যালট ভোটারদের না দেয়ার ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি দুই প্রিসাইডিং কর্মকর্তা।
এই প্রক্রিয়ায় মেয়রের ভোট ছিনিয়ে নেয়ার আশঙ্কার কথা গতকালই নিউজবাংলাকে জানিয়েছিলেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী সাইদুর রহমান বাচ্চু।
ভোটের সকালে তিনি বলেন, ‘শহরের ভেতরের কেন্দ্রগুলোতে ভোট ভালো হচ্ছে। কিন্তু বাইরের কেন্দ্রগুলোতে মেয়রের ব্যালট দিচ্ছে না। মেয়রের ব্যালট রেখে শুধু কাউন্সিলরদের ব্যালট দিচ্ছে। আমরা রিটার্নিং কর্মকর্তাকে মৌখিক জানিয়েছি, লিখিতও জানাব।’
তার এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রিটানিং কর্মকর্তা ফনাজী বেনজীর আহম্মেদ বলেন, ‘দুই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বড় ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। বিএনপির প্রার্থী যে অভিযোগ করেছেন, তা সঠিক নয়।’
সিরাজগঞ্জ সদর পৌরসভায় মেয়র পদে ভোট করছেন তিনজন প্রার্থী। আওয়ামী লীগের সৈয়দ আব্দুর রউফ মুক্তা, বিএনপির সাইদুর রহমান বাচ্চু ও স্বতন্ত্র নূরে আলম হেলাল।
পৌরসভার ১৫ টি ওয়ার্ডে সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর ২৯ জন ও সাধারণ আসনে কাউন্সিলর প্রার্থী ৮৬ জন।
ভোটার সংখ্যা এক লাখ ১৩ হাজার ৯২৬, পুরুষ ৫৫ হাজার ৯২৮ ও নারী ৫৭ হাজার ৯৯৮ জন।