প্রথম ধাপের মতোই পৌরসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপেও কেন্দ্রে ভোটারের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে। দেশের কিছু কিছু এলাকায় তীব্র শীত ও কুয়াশা থাকলেও সকাল আটটার আগেই ভোটাররা কেন্দ্রে চলে আসেন।
শনিবার দেশের ৬০টি পৌরসভায় এক যোগে শুরু হয়েছে ভোট। পৌরসভা পরিচালনায় মেয়র ও কাউন্সিলর নির্বাচন করবেন ২২ লাখের বেশি ভোটার।
২৮টি পৌরসভায় ইভিএমে ও ৩২টিতে ব্যালটে নেয়া হবে ভোট। বিতর্ক এড়াতে ভোটের দিন ভোরে কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে ব্যালট।
ফরিদপুরের বোয়ালমারী পৌরসভায় কনকনে শীত আর কুয়াশা উপেক্ষা করে সকালেই নারী ভোটারদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
কয়েকটি পৌরসভায় গোলযোগের ঘটনার খবর এলেও বেশিরভাগ এলাকাতেই শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই ভোট হচ্ছে। একাধিক পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থী বলেছেন ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। তবে ভোট বর্জনের ঘটনাও ঘটেছে কয়েকটিতে।
কারচুপির অভিযোগে পাবনার ঈশ্বরদী, রাজশাহীর ভবানীগঞ্জ, খুলনার মোংলা ও কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন। পাবনার ঈশ্বরদীতে বিএনপির প্রার্থীর অভিযোগ, তাকে কেন্দ্র থেকে মেরে বের করে দেয়া হয়েছে।
সিরাজগঞ্জে বিএনপির প্রার্থীর অভিযোগ, শহরে ভোট ভালো হলেও শহরতলী বা গ্রামের দিকে ভোটারদেরকে নৌকায় সিল দিতে বাধ্য করা হয়েছে।
ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে ফেনীর দাগনভুঞা পৌরসভার একটি কেন্দ্রে।
সকাল আটটায় ফরিদপুরের বোয়ালমারী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, নারী ভোটারদের দীর্ঘলাইন। এই কেন্দ্রে ভোট দেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদার।
ছোলনা মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র ও সুতাশি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রেও একই চিত্র লক্ষ্য করা যায়। সেখানেও নারী ভোটারদের সাথে পুরুষ ভোটারের উপস্থিতিও বেশ ছিল।
নোয়াখালীর বসুরহাটের নয়টি কেন্দ্রেই সকাল থেকে ভোটারদের লম্বা লাইন চোখে পড়ে। শুরুতে নারী পুরুষের সংখ্যা সমান থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নারী ভোটারদের উপস্থিতি বেশি চোখে পড়ছে।
নোয়াখালীর বসুরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটারদের লাইন। ছবি: মো. সোহেল/নিউজবাংলা
ভোটারদের একই চিত্র বাগেরহাটের মোংলা পৌরসভার ১২টি কেন্দ্রে। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে মোংলা বন্দর বহুমুখী কাওমী মাদ্রাসায় নারীদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটার সংখ্যা এক হাজার ৪৩৮ জন। সকাল নয়টার মধ্যে একশরও বেশি ভোট পড়ে। তখনও লাইনে আরও শতাধিক মানুষ।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ভোটারদের লাইন। ছবি: এম এ হামিদ/নিউজবাংলা
মাগুরার ৩৫টি কেন্দ্রের বেশ কয়েকটি ঘুরে দেখা যায় ভোটাররা বেশ নির্বিঘ্নে ভোট দিচ্ছেন।
মাগুরার বরুনাতৈল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের লাইন। ছবি: ফয়সাল পারভেজ/নিউজবাংলা
এই পৌরসভায় পুরুষের চেয়ে নারী ভোটার প্রায় দুই হাজারের মতো বেশি। সকাল থেকেই নারী, পুরুষের পাশাপাশি বয়স্ক ভোটারের উপস্থিতিও চোখে পড়ার মতো।
মাগুরার বরুনাতৈল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেড় ঘণ্টায় ১৬৬টি ভোট পড়েছে। ভোটারদের ধারণা বিপুল পরিমাণ ভোট জমা পড়বে এই পৌরসভায়।
মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য মো. সাইফুজ্জামান ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ২ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইভিএমে ভোট দেন। ভোট দিয়ে বের হয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইভিএম ব্যবহার খুব সহজ। আমি নিজেও এতে ভোট দিলাম। আশা করি ভোটাররা সহজভাবেই এতে ভোট দিতে পারবে।’
নিজ দলের মেয়র প্রার্থীর জয়ের ব্যাপারে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
নেত্রকোণার কেন্দুয়ার আলীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক হাজার ৭১৮ জন ভোটার। প্রথম ঘণ্টায় ভোট পড়েছে ১৪৬টি।
এই কেন্দ্রে ভোট দিয়ে কেন্দ্র বেড়িয়ে এসেছেন ৬২ বছরে মানিক মিয়া। তিনি বলেন, ‘ইভিএমে জীবনে পয়লা ভোট দিছি। খুউব সহজেই ভোট দিতাম পারছি।’
রহিম উদ্দিন নামে আরেক ভোটার ভোট দিয়ে বলেন, ‘কেন্দ্রডার ভিতরে কুনু ঝামেলা নাই।’
নেত্রকোণায় ইভিএমে ভোট দিয়ে বের হয়ে সন্তুষ্ট এক ভোটার। ছবি: অনিন্দ্য পাল চৌধুরী/নিউজবাংলা
এই কেন্দ্রে ভোট দেন কাউন্সিল প্রার্থী মিজানুর রহমান মিজান। তিনি বলেন, ‘ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে।’
একই কথা জানালেন সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর প্রার্থী মনোয়ারা আক্তার।
সাম্প্রতিক সময়ে এক দিনে এর চেয়ে বেশি ভোটারের নির্বাচন আসেনি। স্বভাবতই রাজনৈতিক অঙ্গনে এই ভোট নিয়ে আছে বাড়তি আগ্রহ।
স্থানীয় সরকারের এই ভোট নিয়ে আগ্রহ বেড়েছে গত ২৮ ডিসেম্বর প্রথম ধাপের নির্বাচনের পর। গত জাতীয় নির্বাচনের পর বিভিন্ন নির্বাচনে ভোটারের যে খরা দেখা গেছে, তার অবসান হয় সেদিন।
প্রায় সব কেন্দ্রেই ভোটারের দীর্ঘ সারি দেখা যায়। হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ আর দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে নির্ধারিত সময় বিকাল চারটার পরও ভোট নিতে হয়।
এই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে বিএনপি তিনটি পৌরসভা নির্বাচন বর্জন করে, একটির ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে। এ ছাড়া আরও একটি নিয়ে করে বিস্তর অভিযোগ।
বাকিগুলো নিয়ে নির্বাচনি এলাকা থেকে তেমন কোনো অভিযোগ আসেনি। যদিও বিএনপির কেন্দ্র থেকে বলা হয়, ভোট কারচুপি হয়েছে।
শনিবার ভোট হওয়ার কথা ছিল ৬১টি এলাকায়। তবে নীলফামারীর সৈয়দপুরে এক মেয়র প্রার্থীর মৃত্যুতে সেখানে স্থগিত হয়েছে নির্বাচন।
দ্বিতীয় দফা ভোটের আগের দিন শুক্রবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নিশ্চয়তা দিয়েছেন সুষ্ঠু হবে ভোট। তিনি বলেছেন, সরকার নির্বাচনে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করবে না।
দ্বিতীয় দফার এ নির্বাচনের সব ধরনের প্রচার বন্ধ হয় বৃহস্পতিবার মধ্যরাতেই। এর আগে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে প্রচারে শান্তি থাকলেও শেষ বেলায় নারায়ণগঞ্জের তারাব, ঝিনাইদহের শৈলকুপা ও বরগুনা পৌরসভায় কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতার ঘটনা ঘটে।
শৈলকুপায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে এক কাউন্সিলর প্রার্থীর ভাই নিহত হয়েছেন। এই ঘটনার পর এক কাউন্সিলর প্রার্থীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।