পৌরসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় শনিবার দেশের ৬০টি পৌরসভায় এক যোগে শুরু হয়েছে ভোট। পৌরসভা পরিচালনায় মেয়র ও কাউন্সিলর নির্বাচনে রায় দিচ্ছেন ২২ লাখের বেশি ভোটার।
সকাল আটটায় শুরু হওয়া এ ভোট একটানা চলবে বিকেল চারটা পর্যন্ত। এর মধ্যে ২৮টিতে ইভিএম ও ৩২টিতে ব্যালটে নেয়া হবে ভোট। বিতর্ক এড়াতে ভোটের দিন ভোরে কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে ব্যালট।
সাম্প্রতিক সময়ে এক দিনে এর চেয়ে বেশি ভোটারের নির্বাচন আসেনি। স্বভাবতই রাজনৈতিক অঙ্গনে এই ভোট নিয়ে আছে বাড়তি আগ্রহ।
৬০টি পৌরসভার মধ্যে মেয়র পদে ভোট হবে ৫৬টিতে। বাকি চারটিতে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন একক প্রার্থী হিসেবে। পৌরসভাগুলো হলো সিরাজগঞ্জের কাজিপুর, পাবনার ভাঙ্গুরা, পিরোজপুরের পিরোজপুর সদর এবং নারায়ণগঞ্জের তারাব।
স্থানীয় সরকারের এই ভোট নিয়ে আগ্রহ বেড়েছে গত ২৮ ডিসেম্বর প্রথম ধাপের নির্বাচনের পর। গত জাতীয় নির্বাচনের পর বিভিন্ন নির্বাচনে ভোটারের যে খরা দেখা গেছে, তার অবসান হয় সেদিন।
প্রায় সব কেন্দ্রেই ভোটারের দীর্ঘ সারি দেখা যায়। হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ আর দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে নির্ধারিত সময় বিকাল চারটার পরও ভোট নিতে হয়।
এই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে বিএনপি তিনটি পৌরসভা নির্বাচন বর্জন করে, একটির ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে। এ ছাড়া আরও একটি নিয়ে করে বিস্তর অভিযোগ।
বাকিগুলো নিয়ে নির্বাচনি এলাকা থেকে তেমন কোনো অভিযোগ আসেনি। যদিও বিএনপির কেন্দ্র থেকে বলা হয়, ভোট কারচুপি হয়েছে।
রংপুরের বদরগঞ্জে ভোটের পর বিএনপির এক নেতা বলেন, ভোট যে এমন হবে, সেটা তাদের ধারণা ছিল না। আগে বুঝলে তারা প্রচারে আরও বেশি সচেষ্ট হতেন।
ভোট চলছে সাভার পৌরসভায়। ছবি: নিউজবাংলা
ওই অভিজ্ঞতা পর ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপের এই ভোটকে কেন্দ্র করে ৬০টি পৌরসভায় ভোটের প্রচার ছিল আরও জমজমাট। অল্প কিছু ছাড়া বেশির ভাগ পৌরসভাতেই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকরা দিন-রাত প্রচার চালান।
শনিবার ভোট হওয়ার কথা ছিল ৬১টি এলাকায়। তবে নীলফামারীর সৈয়দপুরে এক মেয়র প্রার্থীর মৃত্যুতে সেখানে স্থগিত হয়েছে নির্বাচন।
দ্বিতীয় দফা ভোটের আগের দিন শুক্রবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নিশ্চয়তা দিয়েছেন সুষ্ঠু হবে ভোট। তিনি বলেছেন, সরকার নির্বাচনে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করবে না।
দ্বিতীয় দফার এ নির্বাচনের সব ধরনের প্রচার বন্ধ হয় বৃহস্পতিবার মধ্যরাতেই। এর আগে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে প্রচারে শান্তি থাকলেও শেষ বেলায় নারায়ণগঞ্জের তারাব, ঝিনাইদহের শৈলকুপা ও বরগুনা পৌরসভায় কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতার ঘটনা ঘটে।
শৈলকুপায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে এক কাউন্সিলর প্রার্থীর ভাই নিহত হয়েছেন। এই ঘটনার পর এক কাউন্সিলর প্রার্থীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
পরিসংখ্যানে ভোট
নির্বাচনে মোট ভোটার ২২ লাখ ৪০ হাজার ২২৬ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ১১ লাখ ৮ হাজার ৪৩১ জন, নারী ১১ লাখ ৩১ হাজার ৮৩১ জন।
নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা এক হাজার ৮০টি, ভোটকক্ষ ছয় হাজার ৫০৮টি।
নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী ২২১ জন। সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী দুই হাজার ৩২০ জন, সংরক্ষিত নারী আসনে লড়ছেন ৭৪৫ জন।
নির্বাচনে দেশের দুই প্রধান দল আওয়ামী লীগ, বিএনপির পাশাপাশি সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, সিপিবি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম, জাসদ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির প্রার্থী রয়েছেন।
পৌরসভার নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় রায় দেবেন ২২ লাখের বেশি ভোটার। ছবি: নিউজবাংলা
ইভিএমে ভোট যেসব পৌরসভায়
রংপুর বিভাগে ইভিএমে ভোট হবে একটি পৌরসভাতেই। সেটি হলো দিনাজপুরের বীরগঞ্জ।
রাজশাহী বিভাগে বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও সান্তাহার; নওগাঁর নজিপুর; রাজশাহীর কাঁকনহাট ও আড়ানী; নাটোরের নলডাঙ্গা; সিরাজগঞ্জের কাজীপুর এবং পাবনার ফরিদপুর।
খুলনা বিভাগে মেহেরপুরের গাংনী, কুষ্টিয়ার কুমারখালী, ঝিনাইদহের শৈলকূপা, বাগেরহাটের মোংলা ও মাগুরা সদর।
বরিশাল বিভাগে পিরোজপুর পৌরসভা।
ঢাকা বিভাগে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী, কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর, ঢাকার সাভার, গাজীপুরের শ্রীপুর, নরসিংদীর মনোহরদী, নারায়ণগঞ্জের তারাব ও শরীয়তপুর সদর।
ময়মনসিংহ বিভাগে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া ও নেত্রকোণার কেন্দুয়া।
সিলেট বিভাগে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর এবং চট্টগ্রাম বিভাগে কুমিল্লার চান্দিনা, ফেনীর দাগনভূঞা, নোয়াখালীর বসুরহাট ও খাগড়াছড়ি সদর।
ব্যালটে ভোট
রংপুর বিভাগে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী, গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, দিনাজপুর সদর ও বিরামপুর।
রাজশাহী বিভাগে পাবনার ভাঙ্গুড়া, সাঁথিয়া, সুজানগর, ঈশ্বরদী, বগুড়ার শেরপুর, রাজশাহীর ভবানীগঞ্জ, সিরাজগঞ্জের বেলকুচি, উল্লাপাড়া, সদর ও রায়গঞ্জ এবং নাটোরের গোপালপুর ও গুরুদাসপুর।
খুলনা বিভাগে কুষ্টিয়া সদর, মিরপুর ও ভেড়ামারা; ঢাকা বিভাগে ফরিদপুরের বোয়ালমারী ও কিশোরগঞ্জ সদর।
ময়মনসিংহ বিভাগে নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ ও ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা।
সিলেট বিভাগে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, কমলগঞ্জ, সুনামগঞ্জ সদর ও ছাতক এবং হবিগঞ্জের মাধবপুর ও নবীগঞ্জ।
চট্টগ্রাম বিভাগের সন্দ্বীপ ও বান্দরবানের লামা পৌরসভা।
নির্বাচন উপলক্ষে কেন্দ্রগুলোতে নেয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ছবি: নিউজবাংলা
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
নির্বাচন কমিশনের যুগ্মসচিব আসাদুজ্জামান জানান, নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য এবং ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করা হয়েছে।
ভোটকেন্দ্র ছাড়াও নির্বাচনি এলাকাগুলোতে বিজিবি, পুলিশ ও আনসার মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া মোবাইল টিম এলাকায় টহল দিচ্ছে এবং স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রতিটি সাধারণ ভোট কেন্দ্রে অস্ত্রসহ তিন জন পুলিশ সদস্য, এক জন অঙ্গীভূত আনসার সদস্য পিসি (অস্ত্রসহ), অঙ্গীভূত আনসার এক জন এপিসি (অস্ত্র/লাঠিসহ) ও অঙ্গীভূত আনসার (লাঠিসহ তিন জন পুরুষ ও তিন জন নারী সদস্য) নিয়ে ১১ জন নিয়োজিত রয়েছেন।
গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে অস্ত্রসহ চার জন পুলিশ সদস্য, এক জন অঙ্গীভূত আনসার সদস্য পিসি (অস্ত্রসহ), অঙ্গীভূত আনসার এক জন এপিসি (অস্ত্র/লাঠিসহ) ও অঙ্গীভূত আনসার (লাঠিসহ চার জন পুরুষ ও তিন জন নারী সদস্য) মিলিয়ে ১৩ জন দায়িত্ব পালন করছেন।
নির্বাচন কমিশনার এবার ধাপে ধাপে পৌরসভা নির্বাচন সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ছবি: নিউজবাংলা
ধাপে ধাপে ৩০০ পৌরসভায় হবে ভোট
নির্বাচন কমিশন এবার ধাপে ধাপে দেশের প্রায় ৩০০ পৌরসভায় নির্বাচন করতে চায়। চার ধাপে দুই শতাধিক পৌরসভার তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রথম দুই ধাপের পর তৃতীয় ধাপে ভোট হবে আগামী ৩০ জানুয়ারি। সেদিন রায় দেবে ৬৪ পৌরসভার ভোটাররা।
চতুর্থ ধাপে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি ভোট হবে ৫৬ পৌরসভায়।
ইসির এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, পঞ্চম ধাপে অর্ধশতাধিক পৌরসভার ভোট হতে পারে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে।
দলীয় প্রতীকের এ নির্বাচনে প্রথম ধাপের ২৪ পৌরসভার মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী ১৮ জন, বিএনপির ধানের শীষের দুই জন এবং তিন জন স্বতন্ত্র প্রার্থী মেয়র পদে বিজয়ী হন।