দ্বিতীয় ধাপের পৌর নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়ে উঠা আবদুল কাদের মির্জা বলেছেন, নোয়াখালীর বসুরহাটে তিনি হারলে প্রতিদ্বন্দ্বীকে অভিনন্দন জানিয়ে মিষ্টি খেয়ে বাড়ি ফিরবেন।
ভোটের আগের দিন শুক্রবার নিউজবাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে নৌকা মার্কার এই প্রার্থী বলেছেন, যদি একটি ভোটও হেরফের হয়, তাহলে নির্বাচনি কর্মকর্তাদের জবাবদিহি করতে হবে।
কাদের মির্জা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাই। এবারের পৌর নির্বাচনকে ঘিরে তার দিকে দৃষ্টি আকর্ষিত হওয়ার কারণ নানা বক্তব্য ও কর্মকাণ্ড।
বাংলাদেশের নির্বাচনগুলোতে সাধারণত বিরোধীদলের প্রার্থীরা ভোট নিয়ে সংশয়ের কথা বলে থাকেন, হুঁশিয়ারি দিয়ে থাকেন। তবে এই এলাকায় এই সতর্কতা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী কাদের মির্জা।
তার অনুসারীরা সুষ্ঠু ভোটের দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছেন। জেলা প্রশাসককে বলেছেন, কোথাও কারচুপি হলে ভোট বন্ধ করে দেয়া হবে।
কাদের মির্জা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বলেছেন, কোনো অভিযোগ এলে ভোট বর্জন না করে তাকে জানাতে। তিনি তাদেরকে নিয়ে রাজপথে নামবেন।
বিস্ময়কর হলো, নোয়াখালীর এই পৌরসভায় কাদের মির্জার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নেতা কামাল উদ্দিন চৌধুরী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোশাররফ হোসাইনের ভোটের পরিবেশ নিয়ে আপত্তি তো নেইই, বরং বাংলাদেশে বিরোধীদের মধ্যে যে ঢালাও অভিযোগের প্রবণতা আছে তার বিপরীতে গিয়ে তারা বলছেন, এলাকায় নির্বাচনের পরিবেশ ভালো আছে।
সরকারি দলের প্রার্থী হয়ে এই ধরনের বক্তব্য এর আগে দেশে কখনো কেউ দেয়নি। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনের খবর জানতে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা এখন অবস্থান করছেন বসুরহাটে।
নিউজবাংলাকে এই প্রার্থী বলেছেন, তিনি ভোটের প্রচারে যেসব আশঙ্কার কথা বলেছিলেন, তা এখন আর করছেন না। সুষ্ঠু ভোটের নিশ্চয়তা পেয়েছেন।
জয়ের ব্যাপারে কতটুকু আশাবাদী?
আমাদের প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।
আপনি কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করে এসেছেন। পরিবেশ কেমন দেখছেন?
অত্যন্ত সুন্দর।
এখন আপনার কোনো অভিযোগ আছে কি?
আমার অভিযোগ ছিল। আমাদের জাতীয় নেতৃবৃন্দ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, এখানে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। এ জন্য দেখছি এখানে মোটামুটি পরিবেশ ভালো। কোনো সমস্যা নাই।
যদি ভোটে হেরে যান?
এই অপরাজনীতির বিরুদ্ধে আমার বক্তব্য আগামীকাল শুনবেন।
(তার কার্যালয়ের সামনে মাইক দেখিয়ে বলেন) এখানে মাইকগুলা এই যে আপনি দেখেন, এখনও কিন্তু ৩২টা লাগিয়া রাখছি। আমি যদি নির্বাচনে হেরে যাই প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে অভিনন্দন জানাব। আমার নেতাকর্মীদের নিয়ে মিষ্টি-চা খেয়ে বাড়িতে ফিরব। এককথায় ফলাফল যাই হোক মেনে নেব।
ভোটের প্রচারে আবদুল কাদের মির্জা কথা বলেছেন দুর্নীতি নিয়ে প্রশাসনের অব্যবস্থাপনা নিয়েঅন্য রাজনৈতিক দলের নেতারা বলছেন, এসব বক্তব্য নির্বাচনে জয়লাভের একটা কৌশল। সেটাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
আমি কৌশলী না কি সেটা আগামীকাল প্রমাণ পাবেন। আমি এর চেয়ে বেশি কিছু এখন বলতে চাই না।
আপনার চাওয়া তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন…
আমি শতভাগ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। যেহেতু আমি বলেছি অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করব, এই অনিয়মের নির্বাচনের সঙ্গে আমি নাই।
আজকে সকালবেলা প্রত্যেকটা প্রিজাইডিং অফিসার এবং অ্যাসিসটেন্ট প্রিজাইডিং অফিসারের সঙ্গে আমি আলাপ করেছি। ওনাদের বলে দিছি, একটা ভোটে অনিয়ম যদি হয়, এর দায়দায়িত্ব আপনাদের বহন করতে হবে।
আপনার বিপরীতে যারা প্রার্থী আছেন তাদের কতটা শক্তিশালী মনে করছেন?
প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে। এখানে তো সকল দল অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে প্রচার চালিয়েছে। আপনারা শুনেছেন কি না জানি না, এ ক্ষেত্রে কোনো বাধা প্রদান করা হয়নি। আমি মনে করি সকল দলই আমার প্রতিদ্বন্দ্বী।
নির্বাচন ঘিরে সহিংসতা বা সংঘর্ষের আশঙ্কা তাহলে এখন আর করছেন না?
এই আশঙ্কা আমরা এখন দেখতেছি না। যেহেতু জাতীয় নেতৃবৃন্দ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নোয়াখালীর এমপি এবং ফেনীর এমপি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করছিলেন। এখন আমার মনে হচ্ছে যে, জাতীয় নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে বা যে কোনো কারণে হোক ওই ধরনের পরিস্থিতি আর নেই।
তারাও তো আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন, তাহলে আপনাকে ঠেকিয়ে তাদের স্বার্থটা কী?
তাদের অপরাজনীতির বিরুদ্ধে আমি কথা বলেছি। বলার কারণে আমার প্রতি তাদের একটি খারাপ মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে। সেখান থেকেই তারা আমার বিরোধিতা করেছেন।
সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে গত ১০ জানুয়ারি রাজপথে অবস্থান নিয়ে প্রথম আলোচনায় আসেন কাদের মির্জাআপনি বলেছিলেন অস্ত্রধারী ব্যক্তিরা প্রবেশ করার চেষ্টা করবে। যদি এ রকম কিছু হয়?
অবশ্যই প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমাদেরও প্রস্তুতি আছে। আমাদের কাছে তো অস্ত্র নাই, আমাদের কাছে আছে জনগণ। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এটা প্রতিরোধ করা হবে।
আপনি যখন এই আশঙ্কা করছেন, তখন ভোটাররা কি ভয় পেতে পারেন না?
না, সে পরিস্থিতি এখন নাই। ভোটাররা এখানে উজ্জীবিত। তারা যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করে ভোট দেয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে।
ভোট চুরির শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন কেন?
এটা আসলে প্রশাসনের কারণে আমি সন্দেহ প্রকাশ করেছি। নোয়াখালীর ডিসি, ওনার যে একটিভিটিজ… উনি যদি একজন এমপির, যার সঙ্গে আমার রাজনৈতিক কারণে একটা বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে, তার মাস্ক লাগাইয়া যদি তার চেয়ারে বসেন, তাহলে নিরপেক্ষতা তো এখানে প্রশ্নবিদ্ধ। সে জন্য আমরা আশঙ্কা করছিলাম যে, প্রশাসনের লোকজন দিয়ে সে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য এখানে কিছু একটা করতে পারে।
আগের নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে?
গত নির্বাচনগুলোতে হইছে, প্রশাসনই করছে। এবার যেহেতু ইভিএমে ভোট হচ্ছে, ওই ব্যাপারে আমার এখন কোনো অভিযোগ নাই।
এবারই প্রথম ভোটাররা ইভিএমে ভোট দেবেন। সেটা তাদের কাছে জটিল মনে হতে পারে কি না।
একটু জটিলতা তো আছেই। নতুন একটা সংযোজন এটা। নতুন যেহেতু একটু সমস্যা তো হবেই।
ইভিএমে কারচুপির সুযোগ নাই বলতে চাচ্ছেন?
আমি কারচুপির বিষয়টা বলছি। ডিসি সাহেব ষড়যন্ত্র করেন, উনি প্রশাসন দিয়ে… এখানে একটা কারচুপি করার সুযোগ আছে। ইভিএমেও এক পারসেন্ট সুযোগ আছে কারচুপি করার।
সে এক পারসেন্ট থেকে আপনার শঙ্কা এসেছিল যে এখানেও কারচুপি হতে পারে?
জ্বি।
দুর্নীতির নিয়েও আপনি অভিযোগ করেছেন। আপনি তো মেয়র ছিলেন। আপনার এলাকায় কি এই দুর্নীতি দৃশ্যমান ছিল?
না, আমার এলাকায় না। এইগুলা নোয়াখালীতে। নোয়াখালীর এমপিসহ তার পরিবার পুরোপুরি দুর্নীতিবাজ। এই পরিবারটা নোয়াখালীতে অপরাজনীতি শুরু করছে। টেন্ডারবাজি, চাকরি বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। আমাদের উপজেলার চেয়ারম্যান মহোদয় অনেক ভালোমানুষ এবং সাদা মনের মানুষ। উনি উপজেলার ভাতাসহ কোনো সুবিধা সেখান থেকে নেন না।
আপনি দলের প্রার্থী। বড় ভাই বড় পদে। আপনি কি মনে করেন, আপনার বক্তব্য দল বা আপনার ভাইয়ের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে?
কী জন্য প্রভাব পড়বে? আমি তো সত্য কথা বলছি। আমি তো বলছি, আমি সাহস করে সত্য কথা বলব। এখনও তিন বছর আমাদের সময় আছে। আমি তো সারা বাংলাদেশের কথা বলতে পারব না। আমি আমার এলাকার যে পরিস্থিতি দেখছি, আগামী নির্বাচনে (এলাকায়) তো আমাদের ভরাডুবি হবে। এই কারণে আমি অপরাজনীতি বন্ধের কথা বলছি।
আপনি আগে কেন এই কথাগুলো বলেননি?
এই কথাগুলো তো বার বার বলা হইছে। আমি চিকিৎসা নেয়ার জন্য আমেরিকাতে গেছি। আমার দুইটা টিউমার হইছে। ভাবছিলাম আমার দেশে আর আসা হবে না। আল্লার মেহেরবানী ও সবার দোয়া আছে। আমার ওই টিউমারে কোনো ক্যান্সার ছিল না।
বাংলাদেশে ফিরে বিষয়গুলো আমাকে নাড়া দিয়েছে। নোয়াখালীর ও ফেনীর অপরাজনীতি, অনিয়মগুলো আমার বিবেকে নাড়া দিয়েছে, যার কারণে আমি বিমানবন্দরে এসে বলছি। আমি সাহস করে সত্য কথা বলব। অন্যায়, অবিচার, অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলব।