ভোটের আগের দিন কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানোর যে রীতি, তাতে ছেদ পড়েছে এবার।
যেসব পৌরসভায় এবার সনাতন পদ্ধতিতে ভোট নেয়া হবে, তার মধ্যে অনেকগুলোতে সকাল আটটায় ভোট শুরুর আগে ব্যালট পাঠানোর কথা জানিয়েছেন নির্বাচনী কর্মকর্তারা।
প্রথম ধাপে ২৪টি পৌরসভার সবগুলোতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমে ভোট হলেও দ্বিতীয় ধাপে দ্বিতীয় ধাপে ৬০টি পৌরসভার মধ্যে ৩২টিতে ব্যালটে আর ২৮টিতে ইভিএমে ভোট নেয়া হবে।
নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব আসাদুজ্জামান নিউজবাংলাকে জানান, ‘এবার যেসব পৌরসভায় ব্যালট পেপারে ভোট নেয়া হবে, তার অনেকগুলোতেই সকালে ব্যালট পাঠানো হবে।’
এই সিদ্ধান্তের কারণ কী- জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের উপসচিব আতিয়ার রহমান বলেন, ‘মূলত রিটার্নিং কর্মকর্তাদের চাহিদার ভিত্তিতেই ইসি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জেলা বা উপজেলা নির্বাচন অফিসের দুই থেকে চার কিলোমিটারের মধ্যে পৌরসভা হওয়ায় রিটার্নিং কর্মকর্তারা সকালেই কেন্দ্রে ব্যালট পাঠানোর আবেদন করেন। প্রস্তাব যৌক্তিক হওয়ায় ইসি তা অনুমোদন করেছে।’
ব্যালট ছাড়া অন্য সরঞ্জাম কেন্দ্রে
কুষ্টিয়ার তিনটি পৌরসভায় শনিবার ভোটের সকালে ব্যালট পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা।
প্রার্থীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনের অনুমতি নিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানিয়েছেন তারা।
এই জেলায় মোট চারটি পৌরসভায় ভোট হচ্ছে। এর একটিতে ভোট হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমে বাকি তিনটিতে হবে সনাতনী ব্যালটে।
ইভিএমে ভোট দেবেন কুমারখালীর ভোটাররা। আর ব্যালটে ভোট দেবেন কুষ্টিয়া, ভেড়ামারা ও মিরপুর পৌরসভার ভোটাররা।
শুক্রবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ভোটকেন্দ্রের জন্য ইভিএম নিয়ে যান রিটার্নিং কর্মকর্তারা।
অন্য তিনটি পৌরসভার ৬২টি কেন্দ্রের জন্য নির্বাচনি কর্মকর্তারা ব্যালট পেপার ছাড়া ব্যালট বাক্স, সিল, হাতের কালিসহ অন্য সরঞ্জাম বিতরণ করা হয়।
রিটার্নিং কর্মকর্তা লুৎফুন্নাহার জানান, শান্তিপূর্ণ ভোট করতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নিয়মিত বাহিনীর পাশাপাশি মোতায়েন করা হয়েছে বিজিবি।
দেশের অন্য এলাকাগুলোর পাশাপাশি শনিবার সকাল আটটা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত একটানা ভোট চলবে কুষ্টিয়াতেও।
এই সিদ্ধান্ত কেন?
গত ৬ জানুয়ারি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে প্রশাসনের মতবিনিময়ে আগের রাতে ভোট কেটে রাখার আশঙ্কার কথা বলেন প্রার্থীরা।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার বলেন, প্রার্থীরা দাবি তোলার পর সভায় উপস্থিত জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বাস দেন।
পরে লুৎফুন নাহার নির্বাচন কমিশনের অনুমতি চেয়ে চিঠি পাঠান। কমিশন সম্মতি দেয়ায় আগের দিন ব্যালট না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, ‘সকালে ম্যাজিস্ট্রেটসহ কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালট পাঠানোর চিন্তা চলছে। তবে ব্যালট ছাড়া বাকি নির্বাচনী সামগ্রী এরই মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।’
করোনাকালে ভোটের সামগ্রী ছাড়াও বিতরণ করা হয়েছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও সাবান। ভোটাররা হাত ধুয়ে বা জীবাণুমুক্ত করে কেন্দ্রে যাবেন।
গত কয়েক বছরের মধ্যে এবারের পৌর নির্বাচনগুলো তুলনামূলক বেশি অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে, তেমনি ভোট ঘিরে অভিযোগও কম।
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপির প্রার্থী ও কর্মী সমর্থকদের এবার আগের তুলনায় প্রচারে বেশি সক্রিয় দেখা গেছে।
গত ২৮ ডিসেম্বরের ভোটেও কেন্দ্রে বিপুল সংখ্যক ভোটারের উপস্থিতি দেখা গেছে। ভোটারের চাপ এত বেশি ছিল যে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ ও দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে নির্ধারিত সময় বিকাল চারটার পরেও ভোট নিতে হয়েছে। এর মধ্যে শায়েস্তাগঞ্জে ভোট চলে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত।
কিশোরগঞ্জেও একই চিত্র
এই জেলার দুটি পৌরসভায় ভোট হচ্ছে এবার, যার মধ্যে কুলিয়ারচরে ভোট হবে ইভিএম-এ আর কিশোরগঞ্জ পৌরসভায় ব্যালটে।
আগের দিন নির্বাচনি সরঞ্জাম বিতরণের খবর নিতে গিয়ে সাংবাদিকরা জানতে পারেন, ব্যালট পেপার দেয়া হবে না।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আশ্রাফুল আলম বলেন, ‘অন্যান্য সরঞ্জাম আমরা পাঠিয়ে দিচ্ছি। তবে ব্যালট পেপার দেয়া হবে শনিবার ভোর ছয়টার সময়।’
কেন এই সিদ্ধান্ত- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ। কমিশন থেকে চিঠি দিয়ে আমাদেরকে ভোটের সকালে ব্যালট পেপার দিতে বলা হয়েছে।’
কুলিয়ারচরের জন্য ইভিএম তিন দিন আগেই পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সেখানে আজ এসব যন্ত্র প্রিজাইডিং অফিসারদের কাছে দেয়া হয়েছে।’