ভোটে কারচুপি, বৃহত্তর নোয়াখালীর সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী লালন, নিয়োগে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ তোলা আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল কাদের মির্জা বলেছেন, শেখ হাসিনার একার পক্ষে চোরদের পাহারা দেয়া সম্ভব নয়।
আগামী ১৬ ডিসেম্বর পৌরসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ভোট হবে নোয়াখালীর বসুরহাটেও। সেখানে গত তিনটি নির্বাচনে জয়ী কাদের মির্জা এবারও পেয়েছে নৌকা। তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই।
সুষ্ঠু ভোটের দাবিতে আন্দোলনে নেমে রাজনৈতিক অঙ্গনে তুমুল আলোচিত হয়ে ওঠা এই নেতার ভোটের প্রচারে প্রতিদিনকার বক্তব্যই আলোচনা তৈরি করছে।
বুধবার প্রচারে নেমেও তিনি নিজ দলের এক সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে আনলেন অবৈধ অস্ত্র সম্পৃক্ততার অভিযোগ, দলের বহু নেতার বিরুদ্ধে আনলেন বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ।
ভোটে কোনো ধরনের কারচুপি মেনে নেয়া হবে না জানিয়ে কাদেরের ভাই বলেন, ‘ভোটের দিন বাইরে কোনো অনিয়ম ঘটলে পুলিশ, প্রশাসন, ডিসি, নির্বাচন অফিসারকে জবাব দিতে হবে। বসুরহাটের জনতা জবাব নিয়ে ছাড়বে।’
ভোটের তিন দিন আগে সকালে বসুরহাটে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন কাদের মির্জা। বলেন, ‘একমাত্র শেখ হাসিনা বাংলাদেশে সষ্ঠু নির্বাচন করতে পারেন।’
তার এলাকায় নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে নিজের ভাই ও স্থানীয় সংসদ সদস্য হিসেবে ওবায়দুল কাদের দায়ী হবেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অভিযোগ করেন, ‘কোনো ত্যাগী নেতা নোয়াখালীর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নেই।’
এরপর একটি কর্মিসভায় কাদের মির্জা বলেন, ‘দেশের রাজনীতিবিদরা বিদেশে টাকা পাচার করছে, নেত্রী শেখ হাসিনা এ চোরদের কত পাহারা দেবেন?’
তিনি বলেন, ‘আমাদের পাতি নেতারা পর্যন্ত আমেরিকায় গিয়ে গাড়ি কিনেছে, বাড়ি করেছে। সেখানে গিয়ে মাদক, নারী ও ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। নেত্রী এ চোরদের কত পাহারা দেবেন?’
পুলিশের বিরুদ্ধেও আনেন এমপি তোষণের অভিযোগ। তিনি বলেন, ‘সামান্য বাংলা মদ খেলে আমরা তাদের পিটাই। জেলে দেই। আর এমপিদের মদের আসরে গিয়ে পুলিশ স্যালুট মারে। পাহারা দেয়।’
নির্বাচনে গণ্ডগোল করতে নোয়াখালীর এক সংসদ সদস্য এক বিএনপি নেতার মাধ্যমে বসুরহাটে ৫০ লাখ টাকা পাঠিয়েছেন বলেও জেনেছেন কাদের মির্জা।
বলেন, ‘বিএনপি প্রার্থী জিতবেন না জেনেও আওয়ামী লীগের ওই এমপি আমাদের নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য, প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য টাকা পাঠিয়ে, অস্ত্র পাঠিয়ে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে মেতে আছেন।’
নির্বাচনে জয়ের আশাবাদী জানিয়ে কাদের মির্জা বলেন, ‘আমি মানুষের শতভাগ সাড়া পাচ্ছি। ভোটে জয়ী হব ইনশাআল্লাহ। এখন আমার চেষ্টা হবে যেন কেউ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে, আমার জনগণের রক্ত ঝরাতে না পারে।’
নির্বাচনে কোনো রকম অবৈধ প্রভাব বিস্তার না করার বিষয়ে সম্প্রতি কর্মীদেরকে শপথ পড়িয়েছেন কাদের মির্জা।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ভোট সুষ্ঠু না হলে বিতর্কের মধ্যে পড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর যাদের জনপ্রিয়তা নেই, কারচুপি করেন তারাই।’
কাদের মির্জা বলেন, ‘সন্দ্বীপের হিরোরা মাঠে নামতে পারেন না, ফেনীতে পেশিশক্তি দেখিয়ে কমিশনাররা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয় কেন? কেন তারা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে বিতর্কের মুখে ফেলেন? কারণ তাদের জনপ্রিয়তা নেই। তাই তারা শক্তি দেখান।’
এই পৌরসভায় কাদের মির্জা লড়াই করছেন বিএনপি নেতা কামাল উদ্দিন চৌধুরী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জামায়াত নেতা মোশাররফ হোসাইনের সঙ্গে।
ভোটের পরিবেশ নিয়ে কাদেরের ভাই আপত্তি তুললেও ওই দুই প্রার্থী এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ করেননি। বরং তারা ভোটের পরিবেশ ভালো বলেছেন।