কিশোরগঞ্জ পৌরসভায় ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, প্রার্থী ও সমর্থকদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তত বাড়ছে। ভোটারদের মন জয় করতে তৎপর সব প্রার্থীই। চলছে শেষ মুহূর্তের ভোটের হিসাব নিকাশ।
এ পৌরসভায় মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী পারভেজ মিয়া, বিএনপির ইসরাইল মিয়া, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নজরুল ইসলাম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) স্বপন মিয়া ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শফিকুল গণি ঢালী লিমন।
আওয়ামী লীগের পারভেজ মিয়া গত নির্বাচনে এখান থেকে দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়ে মেয়র হয়েছিলেন। কিন্তু এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন।
মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শফিকুল গণি ঢালী লিমন। জনপ্রিয়তার বিচারে তিনিও অন্য প্রার্থীদের চেয়ে কম নন। তরুণ কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে দিন রাত নিজের মোবাইল ফোন প্রতীকের প্রচার চালাচ্ছেন তিনি।
সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জয়ের ব্যাপারে পুরোপুরি আশাবাদী বলে জানিয়েছেন লিমন। তবে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীকে তেমন তোয়াক্কা করতে নারাজ আওয়ামী লীগের পারভেজ মিয়া।
তিনি মনে করেন, বিদ্রোহী প্রার্থী দলের ভোট ব্যাংক নষ্ট করতে পারবে না। তার উপর সাধারণ ভোটারদের আস্থা রয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।
কিশোরগঞ্জ পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পারভেজ মিয়ার প্রচার। ছবি: নিউজবাংলা
অপরদিকে খোশ মেজাজে প্রচারণা চালাচ্ছেন বিএনপির প্রার্থী ইসরাইল মিয়া। বিএনপির সাবেক দুইবারের মেয়র আবু তাহের মিয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রথমে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও পরে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রত্যাহার করে নেন। দলের একক প্রার্থী হিসেবে জয়ের ব্যাপারে অনেকটাই আশাবাদী ইসরাইল মিয়া।
হাত পাখা প্রতীকের প্রার্থী নজরুল ইসলামকেও প্রচারের তৎপর দেখা গেছে। তবে অন্যদের তুলনায় আম প্রতীকের প্রার্থী স্বপন মিয়ার প্রচারে খুব একটা দেখা যায়নি।
এ ছাড়া কাউন্সিলর প্রার্থীরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রচারে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী পারভেজ মিয়া ১৯৯০ সালে কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। পরবর্তীতে জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ২০১৬ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হন।
গত পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে প্রথমবারের মতো মেয়র পদে জয়লাভ করেন তিনি।
পারভেজ মিয়া নিউজবাংলাকে জানান, গত পাঁচ বছরে পৌরসভার রাস্তাঘাট, ড্রেন, কালভার্ট নির্মাণ ও সংস্কারসহ ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। তার মেয়াদে পৌরসভায় প্রায় দেড়শ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হয়েছে।
উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় আগামীতেও পৌরবাসী তাকে নির্বাচিত করবে বলে দাবি তার।
এদিকে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইসরাইল মিয়া বর্তমান পৌর পরিষদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ করে বলেন, ‘নামেমাত্র লোক দেখানো উন্নয়ন হয়েছে। বরাদ্দের বেশিরভাগই লুটপাট হয়েছে।’
নরসুন্দা নদী খননের বিষয় উল্লেখ করে ইসরাইল মিয়া বলেন, ‘এ প্রকল্পে লুটপাটের কারণে নদীটি আজ মরা খালে পরিণত হয়েছে। শহরে মাদকাসক্ত ও কিশোর গ্যাং সৃষ্টি হয়েছে। তা ছাড়া যানজটের কারণে প্রতিনিয়তই মানুষকে হয়রানি পোহাতে হচ্ছে।’
নির্বাচিত হলে পৌরসভাকে দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত এবং জনবান্ধব পৌরসভা উপহার দেবেন বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
বিএনপির প্রার্থী ইসরাইল মিয়ার প্রচার। ছবি: নিউজবাংলা
বিএনপির প্রার্থী ইসরাইল মিয়া ১৯৯৬ সালে জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং পরের বছর সাধারণ সম্পাদক হন। বর্তমানে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক তিনি।
নিউজবাংলাকে তিনি জানান, রাজনৈতিক কারণে তার নামে পাঁচটি মামলা রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে তিনি ৯বার কারাবরণ করেছেন। এবারই প্রথম তিনি পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি থেকে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
কিশোরগঞ্জ পৌরসভায় ৯ ওয়ার্ডে সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ২২ জন ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৫৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এখানে ভোটারের সংখ্যা ৭১ হাজার ৮৪ জন।
আগামী ১৬ জানুয়ারি এ পৌরসভায় ভোট হবে।