অবৈধ সম্পদের মামলায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধে দুদকের দেয়া চার্জশিট গ্রহণ করেছে আদালত।
মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ বিচারক কেএম ইমরুল কায়েশের আদালত সম্রাটের উপস্থিতিতে চার্জশিট গ্রহণ করেন।
গত ৭ মার্চ সম্রাটের আইনজীবী আদালতে জামিন আবেদন করেন। আদালত চার্জশিট গ্রহণ ও জামিনের বিষয়ে শুনানির জন্য ২২ মার্চ তারিখ ঠিক করে। এ দিন আদালত সম্রাটের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করে মামলাটি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এ বদলির আদেশ দেন জ্যেষ্ঠ বিশেষ বিচারক ইমরুল কায়েশ। আগামি ৩১ মার্চ চার্জগঠনের বিষয়ে শুনানি এবং জামিন শুনানির তারিখ ঠিক করে দেন তিনি।
সম্রাটের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী বলেন, ‘মামলার চার্জশিট গ্রহণ এবং দাখিলকৃত জামিন শুনানির জন্য তারিখ ঠিক ছিল। আদালত এ দিন সম্রাটের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করেছে। মামলাটি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এ বদলির আদেশ দিয়েছেন বিচারক। সেখানে ৩১ মার্চ চার্জ শুনানি এবং জামিন শুনানির জন্যও তারিখ ঠিক করে দিয়েছে আদালত।’
এর আগে সকাল পৌনে ১০টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে সম্রাটকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মহানগর দায়রা জজ আদালতে হাজির করা হয়। তাকে আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়।
এরপর বেলা সোয়া এগারোটার দিকে তাকে আদালতে তোলা হয়।
আদালতে শুনানির সময় সম্রাট কাঠগড়ার বাইরে পুলিশের ব্যবহৃত একটি চেয়ারে বসা ছিলেন। অসুস্থতার কারণে তাকে কাঠগড়ায় তোলা হয়নি।
প্রায় ৩০ মিনিটের শুনানি শেষে সম্রাটকে দুপুর ১২টার সময় আবারও অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালের সিসিইউতে ফেরত নিয়ে যাওয়া হয়।
এর আগে জামিন শুনানি করতে চেয়ে সম্রাটের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী আদালতে বলেন যে, মাত্র দশ মিনিটে শুনানি শেষ করব। আমাকে অসুস্থ আসামির জন্য জামিন শুনানির সুযোগ দেয়া হোক।
বিচারক ইমরুল কায়েশ জামিন শুনানির বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে বলেন, ‘জামিন দিতে হবে কেনো? আপনারা নাচ-গান করতে চাইলে আমরা দিব।’
এরপর মামলাটির চার্জশিট আমলে নিয়ে বিশেষ জজ-৬ এ বদলির আদেশ দেন এবং সেখানে জামিন শুনানি করতে বলেন।
রাষ্ট্রপক্ষে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল এ সময় জামিন শুনানির বিরোধিতা করেন।
গত বছর ২২ সেপ্টেম্বর কারাগারে থাকা সম্রাটকে আদালতে হাজির করতে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট (হাজতি পরোয়ানা) জারি করে আদালত।
২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম দুই কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার ৮৭ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সম্রাটের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, সম্রাট বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে ২ কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার ৮৭ টাকা জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন।
অভিযোগ আছে তিনি মতিঝিল ও ফকিরাপুল এলাকায় ১৭টি ক্লাব নিয়ন্ত্রণ করতেন এবং সেগুলোতে লোক বসিয়ে মোটা অঙ্কের কমিশন নিতেন। অনেক সময় ক্লাবগুলোতে ক্যাসিনো ব্যবসা পরিচালনা করতেন।
তিনি অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়ে ঢাকার গুলশান, ধানমন্ডি, উত্তরাসহ বিভিন্ন স্থানে একাধিক ফ্ল্যাট, প্লট কিনেছেন ও বাড়ি নির্মাণ করেছেন। এ ছাড়া তার সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দুবাই ও যুক্তরাষ্ট্রে নামে-বেনামে এক হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে।
মামলাটি তদন্ত করে ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর সম্রাটের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেন দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম।
ক্যাসিনো ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর সম্রাটকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরে তাকে বিভিন্ন মামলায় রিমান্ডে নেয়া হয়। রিমান্ড শেষে বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।