পানির সংকটে ভুগছে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের পিসি কালচার হাউজিংয়ের সহস্রাধিক পরিবার। বেশ কয়েক বছর ধরেই এখানে পানির সংকট চলছে। গত দুই মাসে সেই সংকট তীব্র হয়েছে। আর গত দশদিন ধরে বলতে গেলে পানিই পাচ্ছে না এখানকার সহস্রাধিক পরিবার। তারা ঢাকা ওয়াসার গাড়ির পানি কিনেও ন্যূনতম চাহিদা মেটাতে পারছেন না।
ওয়াসা বলছে, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া এবং গভীর নলকূপ নষ্ট হওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে একটি নলকূপ সংস্কার করা হয়েছে। তাতে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও সহসাই এ সংকট কাটছে না।
নগরে পানি সরবরাহের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানটি এখন তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। তাদের আশা, প্রচুর বৃষ্টি হলে গরম কমবে; তাতে করে পানির চাহিদা কমে আসবে। শীত মৌসুমও বেশি দূরে নয়। তখন চাহিদা অনেকটা কমে এলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শেখেরটেকে অবস্থিত পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটিতে মোট ১৪টি সড়ক রয়েছে। এসব সড়ক সংলগ্ন প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই কমবেশি পানির সংকট রয়েছে। তবে ৪, ৫, ৭, ৮ ও ৯ নম্বর সড়ক এলাকায় দুই মাস ধরে পানির সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে।
স্থানীয়রা বলছেন, গত পাঁচ ধরেই এ এলাকায় পানির সংকট বেড়েছে। বাড়তি টাকা খরচ করে ওয়াসার গাড়ির মাধ্যমে পানি নিতে হচ্ছে। কিন্তু এই সামান্য পানিতে প্রয়োজন মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। এখন তো টাকা দিয়েও ওয়াসার পানির গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ ব্যবহারকারীদের নিয়মিতই দিতে হচ্ছে পানির বিল।
পানির এই সংকট নিয়ে কথা হয় পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটির ৫ নম্বর রোডের ৪৪ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা আসমা সারমিন লিনার সঙ্গে। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ৫ বছর ধরেই পানির সংকটে আছি। দুই বছর ধরে তা তীব্র আকারে ধারণ করেছে। আর গত দুই মাস তো পানির দেখাই পাই না। অথচ প্রতি মাসেই পানির বিল দিতে হচ্ছে।
‘প্রয়োজনের তাগিদে বাধ্য হয়ে ওয়াসা থেকে পানির গাড়ি কিনে কোনোরকমে চলছি। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় তা-ও আবার নিয়মিত পাই না। আরেক সমস্যা হলো, ওয়াসার গাড়ি থেকে আমরা যে পানি পাই সেটাও ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত। এই পানি দিয়ে গোছল করায় শরীরে এলার্জি দেখা দিয়েছে।’
একই সড়কের ৭৮ নম্বর বাড়ির দারোয়ান আব্দুর গফুর বলেন, ‘বাবারে, এই রোডে সন্ধ্যার পর থেকেই হাহাকার লেগে যায়। অফিস থেকে ফেরার পর যখন পানি পায় না তখন সবাই রাস্তায় নেমে আসে।’
লিনা ও আব্দুর গফুরের মতোই ৪ নম্বর সড়কের বাসিন্দা আবুল বাশার, ৭ নম্বর সড়কের হাফিস মোল্লা ক্ষোভ প্রকাশ করে নিউজবাংলাকে বলে, ‘ভাই, আমরা অসহায়। এই গরমে পানি না থাকলে কিভাবে বেঁচে থাকা যায়? ওয়াসাকে বার বার বলেও লাভ হয়নি। আমরা এখন মাঝে মাঝেই আত্মীয়-স্বজনের বাসায় গিয়ে গোছল করে আসি। আর খাওয়া ও রান্নার জন্য বোতলজাত পানি কিনি। কী করবো, নিজের ফ্ল্যাট ছেড়ে চলে যেতেও পারি না।’
পানির এই সংকট নিয়ে কথা বলতে শ্যামলীতে অবস্থিত পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটির অফিসে গিয়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে পাওয়া যায়নি।
অফিস সহকারী সুলতান আহম্মেদ বললেন, ‘আমাদের কাছে তো নিয়মিতই পানি নিয়ে অভিযোগ আসে। কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই। আমরা তো পানি সাপ্লাই দেই না। আমরা বার বার ওয়াসাকে বলেও কিছু করতে পারিনি। বিষয়টি নিয়ে কিছুদিন আগেও আমাদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ওয়াসার এমডির সঙ্গে মিটিং করেছেন। ওয়াসার এমডি বলেছেন যে তারা দ্রুতই ব্যবস্থা নেবেন। এখন দেখি তারা কী ব্যবস্থা নেয়।’
তিনি জানান, মূলত রোডের পেছনের দিকের বাড়িগুলোর বাসিন্দারা বেশি পানির কষ্টে আছেন। কারণ ওয়াসা থেকে যে সামান্য পরিমাণ পানি আসে প্রথম সারির বাড়িগুলো তা মোটর দিয়ে টেনে নেয়। তাই পেছনের বাড়িগুলো পানি পায়ই না বলা যায়। সব মিলিয়ে সোসাইটির দুই থেকে আড়াইশ’ ভবনে পানির সংকট প্রকট। এসব ভবনে হাজারের বেশি পরিবার বসবাস করে।
পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটি এলাকাটি ওয়াসার মডস জোন-৩ এর আওতাধীন। এর কার্যালয় লালমাটিয়ায়। এই জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী জয়ন্ত সাহা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মূলত গরম বেড়ে যাওয়ায় পানি চাহিদা বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় আমাদের সাপ্লাই কমে গিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে গত পরশু ওই এলাকায় আমাদের একটা নতুন কূপ চালু হয়েছে। এটা হওয়ার পর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে সংকট পুরোপুরি কাটেনি।
‘পিসি কালচার এলাকায় মূলত ৪, ৫, ৭, ৮ ও ৯ নম্বর সড়কে পানির সংকট আছে। কারণ ওই এলাকায় পানির স্তর নেমে যাওয়ায় পানির উৎপাদন কমে গেছে। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি। কিন্তু শতভাগ করতে পারছি না। তবে আমরা একটা নতুন জায়গা ঠিক করেছি পাম্প বসানোর জন্য। এটা হয়ে গেলে আশা করি ওই এলাকায় পানির সংকট কেটে যাবে। আশার কথা হলো, গত দুদিন ধরে বৃষ্টি হওয়ায় পানির চাহিদা কিছুটা কমে আসবে। আর শীত মৌসুম চলে এলে তো চাহিদা আরও কমবে।’
পানি না দিয়েও ওয়াসা পানির বিল নিচ্ছে- সোসাইটির বাসিন্দাদের এমন অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ওয়াসার এই কর্মকর্তা বলেন, ‘অভিযোগটি সঠিক নয়। কারণ বিলটা আসে মিটার দেখে। পানি ব্যবহার করলে বিল আসবে, না করলে বিল আসবে না।
‘ভালো করে খোঁজ নিয়ে দেখেন যাদের বিল আসছে তাদের বাসায় পানিও এসেছে। আর যদি সত্যিই এমনটা ঘটে থাকে তাহলে তারা যেন আমাদের রাজস্ব বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে। কারণ পানির বিলের ব্যাপারটা আমাদের রাজস্ব বিভাগ দেখে।’
ওয়াসার গাড়ি থেকে কেনা পানিতেও ময়লা থাকার অভিযোগও অস্বীকার করেন জয়ন্ত সাহা। তিনি বলেন, ‘গভীর নলকূপ থেকে তুলে সরাসরি গাড়িতে এই পানি সরবরাহ করা হয়। এখানে ময়লা থাকার সুযোগ নেই। এখানে যেটা হয় বাড়ির মালিকরা দীর্ঘদিন পানির হাউজ পরিষ্কার করেন না। সেখানে জমে থাকা আয়রন মিশে পানি ময়লা হয়ে যায়।’