সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স স্থায়ীভাবে ৩২ বছর করার দাবি জানিয়েছে চাকরিপ্রত্যাশীদের সংগঠন ‘টিম ৩২’।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনী মিলনায়তনে রোববার ‘করোনাকালীন ক্ষতিগ্রস্ততায় স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি ও মুজিব বর্ষের উপহার হিসেবে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা স্থায়ীভাবে ৩২ চাই’ ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, চাকরির বয়সের ক্ষেত্রে ব্যাকডেট দিলে মুষ্টিমেয় কিছু শিক্ষার্থীর সুবিধা হলেও বাকিদের জন্য তা কোনো কাজে আসবে না।
করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত চাকরিপ্রত্যাশীদের জন্য বয়সে ২১ মাস ছাড় দিয়েছে সরকার। এটি ব্যাকডেট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সারা দেশের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে গঠিত টিম ৩২-এর পক্ষে সাতজন চাকরিপ্রত্যাশী শিক্ষার্থী তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।
এতে বলা হয়, চাকরিপ্রত্যাশীরা এরই মধ্যে দুই বছর হারানোর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছেন। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ হওয়ায় কয়েক লাখ তরুণ-তরুণী চাকরির পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার সুযোগ না পেয়েই ত্রিশের গণ্ডি অতিক্রম করেছেন। আরও কয়েক লাখ শিক্ষার্থীর বয়স ৩০ বছরের কাছাকাছি।
কী বলছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা
সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বয়সের ক্ষেত্রে ২১ মাস ব্যাকডেট নিয়ে যে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে তার ‘অসংগতি’ তুলে ধরেন আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
তিনি বলেন, ২১ মাস যে ব্যাকডেটের কথা বলা হচ্ছে, তার মধ্যে ১৭ মাস এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে। চাকরিতে আবেদনের বয়স স্থায়ীভাবে ২ বছর বাড়িয়ে ৩২ বছর করলে সবাই তাদের হারিয়ে যাওয়া ২ বছর ফিরে পাবে।
ব্যাকডেট স্থায়ী সমাধান নয়, উল্লেখ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মারজিয়া মুন বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর সময়ে যাদের বয়স ২৬ বছর ছিল, তাদের এখন ২৭, ২৮ বছর। যাদের ২৮, ২৯ বছর ছিল তাদের ৩০ হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ‘এখন ব্যাকডেট দিলে যাদের বয়স ৩০ পার হয়েছে, তাদের জন্য কোনো রকম উপকার হলেও যাদের বয়স এখন ২৭, ২৮ বা ২৯ তারা চরমভাবে বঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকার হবেন। কেননা তারাও তাদের বয়স থেকে ২টি বছর হারিয়ে ফেলেছেন, যার কোনো ক্ষতিপূরণ ব্যাকডেট প্রক্রিয়ায় হচ্ছে না। এমনিতেও তারা এসব সার্কুলারে অ্যাপ্লাই করতে পারবেন।’
সংবাদ সম্মেলনে করোনাকালে চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ অনেক কমে গেছে উল্লেখ করে জানানো হয়, এ সময়ে চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ৮৭ শতাংশ কমে ১৩ শতাংশে নেমে এসেছে। বেকারত্বের হার বেড়ে ২০ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশ হয়েছে৷
চাকরিপ্রত্যাশী শিক্ষার্থী ওমর ফারুক বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ বা আবেদনের বয়সসীমা ৩০ হলেও বিসিএস স্বাস্থ্য ও জুডিশিয়ারির ক্ষেত্রে ৩২ বছর। অন্যদিকে বিভিন্ন কোটার ক্ষেত্রে এই বয়সসীমা ৩২ বছর দেওয়া হয়।’
১৯৯১ সালের উদাহরণ টেনে নিয়ে এক শিক্ষার্থী বলেন, ১৯৯১ সালে শেষবার সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ২৭ থেকে বৃদ্ধি করে ৩০ বছর করা হয়। সে সময় বাংলাদেশিদের গড় আয়ু ছিল ৫৭ বছর।
এই ৩০ বছরে গড় আয়ু ১৬ বছর বেড়ে ৭৩ বছর হলেও বৃদ্ধি পায়নি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা। ২০১১ সালে এসে অবসরের বয়স বেড়ে হয় ৫৯ বছর। আর মহান মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য হয় ৬০ বছর।
অবসরের বয়স যেহেতু ২ বছর বাড়ানো হয়েছে, সেহেতু চাকরিতে প্রবেশের বয়স ২ বছর বাড়ালে সেটাও আর সাংঘর্ষিক হয় না।
শাহবাগে সমাবেশ
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, চাকরিপ্রত্যাশীরা এখন পর্যন্ত সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সচিবদের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে বয়স ৩২ করার জন্য। দাবি আদায়ে তারা ২৭ আগস্ট শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করবে।