রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে মৃত যুবতী নারীদের ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার মুন্না ভগতের বিরুদ্ধে পৃথক দুই মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ।
শুক্রবার শেরেবাংলা নগর থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) জালাল উদ্দিন নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, গত ৩০মে শেরেবাংলা নগর থানায় করা পৃথক দুই মামলায় মুন্না ভগতের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন মামলা দুইটির তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) সুব্রত কুমার রায়। মুন্নার বয়স ২০ বছর।
কিন্তু কোভিড-১৯ এর কারণে নিয়মিত আদালত না থাকায় অভিযোগ দুটি আদালতে জমা হলেও এখনও তা উপস্থাপন হয়ে গৃহীত হয়নি।
এর আগে, গত বছরের ২০ নভেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর আদালতের (সিএমএম) হাকিম মামুনুর রশিদ ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় মুন্না ভগতের জবানবন্দি গ্রহণ এবং তা রেকর্ড করেন।
পোস্টমর্টেম করার সময় মর্গে থাকা একাধিক মৃত নারীর গোপনাঙ্গে একই ব্যক্তির বীর্যের আলামত পাওয়ায় বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে পুলিশ।
কয়েক মাস তদন্ত ও অনুসন্ধানের পর গত বছর ১৯ নভেম্বর রাতে মর্গের পাশের একটি কক্ষে বসবাসকারী মুন্না ভগৎকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি পুলিশ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মুন্না ভগৎ মৃত যুবতী নারীদের সঙ্গে বিকৃত যৌনাচারের কথা স্বীকার করেন।
সিআইডির পক্ষ থেকে ওই সময় জানানো হয়, বিভিন্ন স্থান থেকে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে আনা মৃত নারীদের ধর্ষণ করতেন মুন্না ভগৎ।
সিআইডি আরো জানায়, গ্রেপ্তার হওয়া মুন্না ভগৎ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে ডোম যতন কুমার লালের সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন। তিনি০ সম্পর্কে তার ভাগনে। দুই-তিন বছর ধরে তিনি মর্গে থাকা মৃত নারীদের ধর্ষণ করে আসছিলেন।
অনুসন্ধান করতে গিয়ে এমন একটি অভিযোগ পেয়েই মুন্নার বিষয়ে তদন্ত শুরু করে সিআইডি পুলিশ।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় মুন্নাকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মুন্না মৃত নারীদের ধর্ষণের কথা স্বীকার করেন।
সিআইডির এক কর্মকর্তা সেসময় সাংবাদিকদের জানান, মৃত নারীদের ধর্ষণ করা পৃথিবীর জঘন্যতম একটি কাজ।
‘সুস্থ ও স্বাভাবিক কেউ এমন জঘন্যতম কাজ করতে পারে না। গ্রেপ্তার মুন্না বিকৃত যৌনাচারে আসক্ত। সে সময় দুই-একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মুন্নার এটা একধরনের অসুখ বলেও উল্লেখ করেন।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে দায়িত্বরত ডোম ও মুন্নার মামা যতন কুমার লাল জানান, মুন্না গত দুই থেকে তিন বছর ধরে তার সহযোগী হিসেবে মর্গে কাজ করছিলেন।
তার বাবার নাম দুলাল ভগৎ। গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ বাজারে। তিনি আরও দুই থেকে তিনজনের সঙ্গে মর্গের পাশের একটি কক্ষে থাকতেন।
২০১৯ সালের ২৯ মার্চ থেকে ২০২০ সালের ২৩ আগস্ট পর্যন্ত অন্তত পাঁচজন মৃত কিশোরীকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছে সিআইডি।
সিআইডির করা মামলায় বলা হয়েছে, মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য আনা মরদেহের যাদের বয়স বয়স ১৩ থেকে ২০ বছরের মধ্যে তাদের সঙ্গে তিনি যৌনতায় লিপ্ত হতেন।