নাম তার মাঈনুল ইসলাম পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে সরকারি চাকরির আশায় আবেদন করে প্রতারিত হন তিনি। প্রতারণার শিকার হয়ে একপর্যায়ে হাত মেলান প্রতারকদের সঙ্গে। যেভাবে নিজে প্রতারিত হয়েছিলেন, একই কায়দায় অন্যদের সঙ্গে প্রতারণা শুরু করেন।
নওগাঁর পত্নীতলার যুবক মাঈনুলের ব্যাপারে এমন তথ্যই দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমিউনিটি কেন্দ্র, সুখী পরিবার, মা ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্র, অ্যাপোলো কনজিউমার প্রোডাক্টসহ বিভিন্ন ভূয়া প্রতিষ্ঠানে লোভনীয় বেতনে চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগে এই মাঈনুলসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের অর্গানাইজড ক্রাইম দক্ষিণ বিভাগ।
গ্রেপ্তার অপর পাঁচজন হলেন মো. ফিরোজ, আব্দুল কুদ্দুস, বিল্লাল হোসেন, তৌকির আহমেদ ও কফিল উদ্দিন চৌধুরী। এদের মধ্যে ফিরোজ এই চক্রের মাস্টারমাইন্ড বলে জানিয়েছে পিবিআই।
শুক্র ও শনিবার অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। পরে মোহাম্মদপুর থানায় ফজলুল করিম নামে এক ভুক্তভোগীর মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে অর্গানাইজড ক্রাইম দক্ষিণের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সারোয়ার জাহান জানান, মাঈনুল দুই বছর আগে চাকরি নিতে এসে প্রতারণার শিকার হন। এরপর গত জানুয়ারিতে নিজেই প্রতারকদের সঙ্গে যুক্ত হন। প্রতারকরা একাধিক ইমেল এড্রেস ব্যবহার করে সরকারি চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিত। এসব ইমেইলে যারা সিভি পাঠাতেন, সেগুলো মাস্টারমাইন্ড ফিরোজের কাছে দিত মাঈনুল।
সে কীভাবে প্রতারিত হয়েছে এবং নিজে কার হাত ধরে এই প্রতারণায় এসেছে তা বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদে জানা যাবে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সারোয়ার জাহান।
চাকরি দেয়ার নামে যেভাবে হতো প্রতারণা
দেশের প্রথম সারির কিছু পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিত প্রতারক চক্রটি। মহাখালীতে স্বাস্থ্য বিভাগের ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমিউনিটি কেন্দ্রের প্রধান কার্যালয়ের ঠিকানা ব্যবহার করত তারা। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে কিছু ইমেল এড্রেস দেয়া থাকত। যেগুলোতে আগ্রহীরা সিভি পাঠাতেন।
সিভি পাওয়ার পর চাকরি প্রার্থীকে একটি এসএমএস-এর মাধ্যমে চাকরি হয়েছে বলে কনফারমেশন পাঠানো হতো। এরপর বিকাশের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন বাবদ নেয়া হতো ১ হাজার ৯৪০ টাকা। টাকা পাঠানোর পর চাকরিপ্রার্থীকে এই প্রতারক চক্র একটি মানিরিসিট, অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার এবং চূড়ান্ত নির্বাচিত ফরম ইমেইল করে চাকরিপ্রার্থীকে পাঠাত। তাদের কথামতো চূড়ান্ত নির্বাচিত ফরম পূরণ করে প্রতারকদের দেয়া ইমেইলে ফিরতি মেইল করতে হতো চাকরি প্রত্যাশীদের। এরপর ডিজিটাল আইডি কার্ড দেয়া হবে বলে জানায় প্রতারকরা।
বিনামূল্যে ল্যাপটপ ও মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট দেয়া হবে সেজন্য দ্বিতীয় দফায় আরও ৪ হাজার ৮০ টাকা দাবি করে চক্রটি। আবারও টাকা পাঠানোর পর চাকরিতে যোগদানের জন্য চাকরি প্রত্যাশীরা প্রতারকদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। এক পর্যায়ে ওই নাম্বারে আর সংযোগ পাওয়া যায় না। ততক্ষণে ভিকটিম বুঝতে পারেন তিনি প্রতারিত হয়েছেন।
প্রত্যেক প্রার্থীর কাছ থেকে চাকরি দেয়ার নাম করে অন্তত ৫ হাজার টাকা করে নিয়ে আসছিল এ চক্রটি। পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সারোয়ার জাহান বলেন, তারা এ পর্যন্ত কতজনের সঙ্গে প্রতারণা করেছে তার সুনির্দিষ্ট তথ্য না পাওয়া গেলেও প্রতারকদের দুটি বিকাশ নম্বরে গত তিন মাসে ১২ লাখ টাকা এসেছে, যা থেকে ধারণা করা যায় তারা কত মানুষকে প্রতারিত করেছে।
সরকারি কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারি এবং পত্রিকায় বিজ্ঞাপন শাখার কেউ এই প্রতারণায় জড়িত আছে কি না তা তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান সারোয়ার জাহান।
তিনি বলেন, ‘পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ছাপানোর আগে নূন্যতম যাচাই করা প্রয়োজন। তাহলে প্রতারকরা আর সাধারণ মানুষদের সঙ্গে প্রতারণা করতে পারত না। ভাল পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে মানুষ আশ্বস্থ হয়। বিজ্ঞাপন সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের নাম আমরা পেয়েছি। যেগুলো যাচাই বাছাই চলছে।’
গ্রেপ্তার আসামিদের মোহাম্মদপুর থানার মামলায় রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠিয়েছে পিবিআই।