বঙ্গবন্ধুকে যারা অস্বীকার করে, তাদের রাজনীতি বন্ধ করা দরকার বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার নেপথ্যে যারা ছিল, তদন্ত কমিশন গঠন করে তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হবে বলে জানান তিনি।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত ও বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক আলোচনা সভা। সেখানে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সাংবাদিক নেতারাও ঘটনা তদন্তে দ্রুত কমিশন গঠনের দাবি তোলেন আলোচনায়।
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করে রাজনীতি করা হয়। তাদের রাজনীতি চিরতরে বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। যে মহানায়কের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে, যিনি ঘুমন্ত বাঙালিকে পলে পলে স্লোগান শিখিয়ে আন্দোলিত করেছেন, তাকে অস্বীকার করা আর স্বাধীনতা অস্বীকার করা সমান।’
নাৎসি বাহিনীর সহযোগিতাকারীদের পরিণতি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নেদারল্যান্ডসে যারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি বাহিনীর সহযোগিতা করেছিল, তাদের ভোটাধিকার নাই। এমনকি যারা সমর্থন করেছিল, তাদেরও ভোট নাই। কিন্তু আমাদের দেশে স্বাধীনতাবিরোধীরা রাজনীতি করে।
‘দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড। দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি নিয়ে তারা এটা করেছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার যে বিচার হয়েছে, সেখানে সাক্ষীরা অনেক কথা বলেছেন। আসামিরা যে জবানবন্দি দিয়েছেন, তাতে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে। জিয়ার সায় দেয়া, সহযোগিতা সেখানে উল্লেখ আছে।
‘ফুটবলার কায়সার হামিদের বাবা তার বইয়ে বিস্তারিত লিখেছেন। তিনি জিয়াউর রহমানের কোর্সমেট ছিলেন। জিয়ার সঙ্গে কীভাবে খুনিরা ফিসফাস করেছে তার সমস্ত কথা বইয়ে আছে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত কয়েকজন বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জড়িত। তারা জিয়ার অনুমতি নিয়ে সেনানিবাসে গিয়ে টেনিস খেলত, ব্যাডমিন্টন খেলত। সেখানেই ষড়যন্ত্র হয়। বিভিন্ন বইয়ে এসব প্রকাশিত হচ্ছে। একটা কমিশন গঠন করে হত্যাকাণ্ডের সবিস্তার জাতির সামনে উন্মোচন করা প্রয়োজন।’
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন।
আলোচনায় বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারে না থাকলে পঁচাত্তরের খুনিদের বিচার হতো না। এখন হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে কুশীলবদের বিচার করতে হবে। ইতিহাসের সত্য জাতির সামনে তুলে ধরতে কমিশন গঠন করতে হবে।
‘দেশে অন্য সব কাজ চলছে, সে ক্ষেত্রে কমিশন গঠনের কাজ বন্ধ থাকতে পারে না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় কমিশন না হলে নতুন প্রজন্মের কাছে ভিন্ন তথ্য হাজির হতে পারে।’
সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড তদন্তের জন্য কমিশন গঠনের কথা আসে শুধু আগস্ট মাসে। এরপর বছর পেরিয়ে গেলেও কমিশন হয় না।
‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েই বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে কমিশন গঠন করতে হবে। যারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন, যারা নেপথ্যে ছিলেন, তাদের সবার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে হবে।’
আলোচনা সভায় জাতীয় প্রেস ক্লাব, সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।