দীর্ঘ চার মাসের মধ্যে বিভিন্ন সময় গণপরিবহন বন্ধ থাকার পর রাজধানীসহ দেশের সব জেলায় বুধবার থেকে চলাচল শুরু হয়েছে বাসসহ বিভিন্ন যান। ফলে সহজে চলাচল করতে পাড়ায় নগরবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। বাস চালু হওয়ায় আয়ের পথ খুলে গেল চালকসহ পরিবহনশ্রমিকদের। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চালানোর কথা থাকলেও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে এই বিষয়টি একেবারেই উপেক্ষিত ছিল।
রাজধানীর একটি বাসের চালক, পরিবহনশ্রমিক ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এমন সব তথ্য পেয়েছেন প্রতিবেদক।
বৃহস্পতিবার। ঘড়ির কাঁটায় দুপুর ১২টা ২১ মিনিট। উদ্দেশ্য মিরপুরের একটি বাসে বাসাবো থেকে মিরপুর পর্যন্ত যাওয়া আর বাসের চালক, হেলপার এবং যাত্রীর সঙ্গে কথা বলা।
মালিবাগে বাসের দেখা মিলল ১২টা ২৪ মিনিটে। বাসের নাম নূর-এ মক্কা পরিবহন। চড়ে বসলাম বাসে। কিন্তু বাসে যাত্রীর সংখ্যা মাত্র হাতে গোনা কয়েকজন। বাসের চালকের সঙ্গে কথা বলতে এগিয়ে গেলাম তার পেছনের আসনে। নিজের পরিচয় দিয়ে কথা বলা শুরু। চালকের নাম জিজ্ঞেস করে প্রথমে জানতে চাইলাম দীর্ঘদিন বাস চলাচল বন্ধ ছিল। কেমন ছিলেন?
শফিকুল নামে ওই চালক বলেন, ‘গাড়ি বন্ধ মানে আমাদের আয়ও বন্ধ। কেমন থাকব বলেন? ভালো ছিলাম না। বউ-বাচ্চা নিয়ে কষ্টেই দিন কেটেছে। বাস চালিয়ে আমরা তো দিনের টাকা দিনে পেয়ে থাকি। সেই টাকায় সংসার চলে। গতকাল থেকে বাস চালু হওয়ায় কিছুটা দুশ্চিন্তা কাটছে।’
যাত্রী কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে বলেন, ‘গতকাল থেকে ভালোই যাত্রী পাচ্ছি। বিশেষ করে সকালে অফিস সময়ে এবং বিকেলে অফিস শেষে বাসে যাত্রীর চাপ বেড়ে যায়।’
এই বাসচালক আরও বলেন, ‘আমাদের কোম্পানির অর্ধেকসংখ্যক বাস চলছে, অর্ধেক চলছে না। ৫০টি বাসের মধ্যে আমাদের চলছে ২৫টি। মালিকের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। আমাদের শ্রমিকদের অনেকেই এখনও বাস নিয়ে নামতে পারেনি।’
যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি বাসে কতটুকু মানা সম্ভব হচ্ছে? জানতে চাইলে শফিকুল বলেন, ‘সরকারের নির্দেশমতো এর আগে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে যাত্রী উঠিয়েছিলাম আমরা। কিন্তু এবার তো সব আসনেই যাত্রী নিতে বলা হয়েছে। তাহলে কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি থাকবে বাসে?’
পরে কথা হয় বাসের হেলপার রেজাউলের সঙ্গে। রেজাউল জানান, বাসাবো থেকে মিরপুর পর্যন্ত বর্তমান ভাড়া ৪০ টাকা। যখন অর্ধেকসংখ্যক আসন ফাঁকা রেখে যাত্রী ওঠানো হয়েছিল তখন ছিল ৬০ টাকা।
এই হেলপার বলেন, ‘বর্তমানে প্রতিটি সিটে যাত্রী ওঠানোর পাশাপাশি অতিরিক্ত যাত্রী তুলতে হচ্ছে। অতিরিক্ত যাত্রীরা বাসে দাঁড়িয়ে থেকে যাত্রা করে। সিট খালি নেই জানানোর পরেও অনেক যাত্রী জোর করে বাসে উঠে পড়ে। স্বাস্থ্যবিধি কেউ মানছে না। যাত্রীদের মধ্যে করোনার ভয় নাই।’
বাসে সাগর নামে এক যাত্রী বলেন, ‘লকডাউনে আমার অফিস খোলা ছিল। বাসও বন্ধ ছিল। রিকশায় অনেক টাকা ভাড়া দিয়ে যেতে হইছে। অফিসে যেতে আর আসতেই বেতনের বড় অংশ শেষ। অনেক দিন পর বাস খুলছে। এখন কম টাকায় আসা-যাওয়া করা যাবে। যানজটের ভোগান্তি কিছুটা বাড়লেও টাকা বাঁচবে।’
এক যাত্রী বলছিলেন, ‘বাস বন্ধ রেখে করোনা আক্রান্ত হওয়া থামানো যাবে না। আমাদের প্রত্যেককেই মাস্ক পরতে হবে। নিজেদেরই সচেতন হতে হবে। লকডাউন দিয়ে শুধু শুধু ভোগান্তি বাড়ানোর দরকার নেই।’