‘লকডাউনে ট্রেন বন্ধ ছিল, কাজও ছিল না। কেউ খোঁজ নেয়নি। মেয়ের বাসায় ছিলাম। কোনোমতে খেয়ে না-খেয়ে দিন কাটিয়েছি। কষ্ট হলেও তো কেউ দেখে না।’
কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের কুলি তলন্তর আলী। বয়স তার ৫১ বছর। ১২ বছর ধরে কুলিগিরি করছেন। বলছিলেন, ‘আজ থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ায় কিছুটা শান্তি লাগছে। বসে বসে তো দিন পার করতে হবে না। দিনে কয়েক টাকা হলেও আয় হবে। না খেয়ে রাত পার করার দুশ্চিন্তা করতে হবে না।’
তবে ট্রেন চালু হলেও স্বস্তি ফেরেনি। বুধবার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে আলস সময় পার করতে দেখা গেছে অনেক কুলিকে। যাত্রী কম থাকায় কাজ না পেয়ে তাদের অনেকে বসে এবং ঘুমিয়ে সময় পার করছেন। তাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার এই প্রতিবেদকের।
মাছের ব্যবসা ছেড়ে গত পাঁচ বছর ধরে এই স্টেশনে কুলির কাজ করছেন নূর ইসলাম। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘লকডাউনে কোনো কাজ ছিল না। যেখানে সব বন্ধ সেখানে কাজ পাব কোথায়? এখন আবারও ট্রেন চালু, আমাদের আয়ের পথও খুলল।’
কমলাপুর স্টেশনে প্রায় ২০০ জন কুলি আছেন বলে জানান নূর ইসলাম। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন ভালো যাত্রী হলে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত উপার্জন হয়। আবার কোনো কোনো দিন ১০০ থেকে ২০০ টাকা হয়। অনেক সময় খালি হাতেই বাসায় ফিরতে হয়।’
করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার লকডাউন ঘোষণার পর চাঁদপুরে গ্রামের বাড়ি চলে গিয়েছিলেন কুলি জাহাঙ্গীর হোসেন। ট্রেন চালুর খবর পেয়ে দুই দিন আগে ফিরেছেন।
লকডাউনে গ্রামেও কোনো কাজ ছিল না জানিয়ে এই কুলি বলেন, ‘সরকারি কোনো সাহায্য পাইনি। আমারও চাওয়া নেই। ইনকাম হইলে খাব, না হইলে খাব না।’
রহমান নামে আরেক কুলি বলেন, ‘রিজিকের মালিক আল্লাহ। এখন পর্যন্ত কোনো আয়-রোজগার নাই। গাড়িঘোড়া ঠিকমতো আসে নাই। বলতে পারছি না কী হবে। ট্রেন খুলছে, দেখা যাক, আমাদের ভাগ্যও খুলব।’