শাটডাউন তুলে নেয়ায় বুধবার সড়কে বাস নামার পর পরিবহনসংশিষ্টরা বলছেন, অর্ধেক বাস নামানোর যে নির্দেশনা সরকার দিয়েছে, তা যাত্রীর অভাবে এমনিতেই মানা হয়ে যাবে।
ওই নির্দেশনা না এলেও যাত্রীর অভাবে অনেক পরিবহনই অর্ধেকের বেশি বাস নামাতে পারত না। তবে সরকারের বর্তমান নির্দেশনায় স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মানা সম্ভব হচ্ছে না বলে তারা জানিয়েছেন।
বুধবার থেকে শাটডাউন নামে পরিচিত বিধিনিষেধ তুলে নিয়ে গণপরিবহন চলার অনুমতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু এবার বলা হচ্ছে, যাত্রী থাকবে সব আসনেই, কিন্তু গাড়ি চলবে অর্ধেক। এর আগে লকডাউন ও শাটডাউন সীমিত করার পর গণপরিবহনে আসনের অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল আর ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল ৬০ শতাংশ।
বুধবার গাবতলী বাস টার্মিনালে যাত্রীর চাপ চোখে পড়েনি। বরং যাত্রী পেতে পরিবহনশ্রমিকদের হাঁকডাক বেশ কানে আসে। তাদের বেশ কয়েকজন জানান, অনেক দিন পর গাড়ি খুলছে, কিন্তু যাত্রী নাই বললেই চলে।
তাদেরই একজন জাকের পরিহনের হাফিজুর রহমান বলেন, ‘যাত্রী নাই তেমন। বাস ভর্তি করে ছাড়াই কঠিন হয়ে যাচ্ছে।’ গাবতলীর শ্যামলী কাউন্টারের ব্যবস্থাপক প্রভাত রায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন ঢাকা থেকে সারা দেশে ১০০ গাড়ি ছেড়ে যেত। আজ যাত্রী তেমন নেই। তাই ১০০টির জায়গায় গাড়ি ছাড়া হয়েছে ৩০টি।’
অর্ধেক গাড়ি সড়কে ছাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখন তো যাত্রীই নাই। ইচ্ছা করলেও তো আমরা সব গাড়ি ছাড়তে পারব না।
‘রাজশাহীর ভাড়া ৪৫০ টাকা। লকডাউনে ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ার আগের নিয়মেই ভাড়া নেয়া হচ্ছে। বাড়তি ভাড়া নেয়া হচ্ছে না। স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে তিনি বলেন, এখন যে নির্দেশনা তাতে তো পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিচ্ছি। আর যাত্রী মাস্ক পরে আসছে কি না তা আমরা দেখছি। যাত্রী মাস্ক না পরলে তাদের টিকিট দেয়া হচ্ছে না।’
গাবতলীতে সোহাগ পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার উজ্জ্বল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আজকে দুপুর পর্যন্ত ৭টা গাড়ি ছাড়ছি। যাত্রীই তো নাই। সরকার অর্ধেক গাড়ি ছাড়ার কথা বলেছে, কিন্তু আমরা ৩ ভাগের ১ ভাগই ছাড়তে পারতেছি না। যাত্রী না থাকলে গাড়ি যাবে কীভাবে?’
বিধি মানা হচ্ছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকার যেভাবে মানতে বলছে আমরা সেভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানছি।’
গাবতলীর দর্শনা ডিলাক্স পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার শাহ জালাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগে যেই নিয়মে গাড়ি ছাড়ত সেই নিয়মে ভাড়া নেয়া হচ্ছে।’ তিনি জানান, সকাল থেকে ৩টা গাড়ি ছাড়ছি। আমরা আগের নিয়মে ৪৫০ টাকা ভাড়া রাখছি।’
অর্ধেক গাড়ি ছাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সেটা মানা হচ্ছে। আর যাত্রী কম তাই এমনি এমনি মানা হয়ে যাচ্ছে। তবে সরকার থেকে স্বাস্থ্যবিধি ফলো করতে বলেনি বলে জানান তিনি। গাবতলীতে যশোর-খুলনাগামী ঈগল পরিবহনের যাত্রী রুকাইয়া বেগম জানালেন, তিনি খুলনা যাবেন। তার কাছ থেকে ৫৫০ টাকা নিয়েছে। আগেও এই ভাড়াই দেয়া লাগত।
ওই পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার রাজন জানালেন, এখন আগের নিয়মে ভাড়া নেয়া হচ্ছে। অর্ধেক গাড়ি ছাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আগে আমাদের ৫০টি ট্রিপ হতো, এখন হবে ২৫ ট্রিপ। স্বাস্থবিধির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘স্বাস্থবিধির যে নির্দেশনা ছিল তা তো ওঠায় নিছে।’ সাতক্ষীরাগামী সুন্দরবন পরিহনের যাত্রী আমেনা বেগম জানালেন, তার কাছ থেকেও আগের ভাড়াই নেয়া হয়েছে।
ওই পরিবহনের স্টাফ আব্দুল কাইয়ুম জানালেন, তাদের আগে ৮টি গাড়ি চললেও এখন চলছে ৪টি। তবে স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মানা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানালেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমরা যাত্রী গাড়িতে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিচ্ছি। এর বাইরে আর কোনো কিছু করা সম্ভব না।’
চুয়াডাঙ্গাগামী রয়েল পরিবহনে যাত্রী বিদ্যুৎ মিয়া। তিনি জানানেল, ‘ভাড়া রাখা হচ্ছে আগের নিয়মে। ৪৫০ টাকা ভাড়া রাখছে। এটা আগেও দিতাম।’ রোজিনা পরিবহনের যাত্রী মিজানুর রহমান। যাবেন রাজবাড়ীর পাংশা। বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি তো কেউ মানছে না। এখন যে নিয়ম তাতে তো স্বাস্থ্যবিধি হিসেবেই থেকে যাচ্ছে।’